Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় বীজাগার জরুরি

মিজানুর রহমান তোতা : | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বীজ হচ্ছে ফসলের প্রাণশক্তি। উন্নতমানের বীজ কৃষি বিপ্লবের মূল উৎস। খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার প্রথম ধাপও হচ্ছে কর্মবীর কৃষকদের উন্নতমানের ও চাহিদানুযায়ী বীজের নিশ্চয়তা। বিএডিসির ভিত্তি বীজ ছাড়া কৃষক যে বীজ সংরক্ষণ করে থাকেন তা যথাযথ মানসন্মত হয় না সবসময়। কৃষকরা খুব সহজে উন্নতমানের বীজ পায়না। এ অভিযোগ প্রায়ই উচ্চারিত হয়। যার কারনে অনেক ক্ষেত্রে ফসলের ফলন আশানুরুপ হয় না। অনেক সময় কৃষি উৎপাদনে কৃষকদের মার খেতে হচ্ছে। বিএডিসি মোট চাহিদার মাত্র ১৫ভাগ বীজ সরবরাহ করতে পারে। আমদানীও হয়, যার মান সবসময় ভালো হয় না।
কৃষি বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মতে, দেশে বীজ উৎপাদন, বিপণন এবং বীজ সংরক্ষনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই জাতীয় বীজাগার গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সূত্র মতে, জাতীয় বীজাগার গড়ে তোলা হলে সারা দেশে ধান, গম, ডাল, আলু, সবজি ও পাটসহ সব ধরণের ফসল আবাদ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। সরকার ইতিপূর্বে কয়েকদফা উদ্যোগ ও পরিকল্পনাও নেয়। কিন্তু কার্যকর হয়নি নানা কারণে। অভিযোগ কায়েমী স্বার্থবাদীরা বীজ নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে বিধায়, কৌশলে নানাভাবে নিরুৎসাহিত করে থাকে। এর সঙ্গে বিদেশী বীজ কোম্পানীগুলোরও হাত রয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বীজ গবেষকদের মতে, বিএডিসির বীজ উৎপাদন খামারগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার। উন্নতমানের কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ, জনবল বৃদ্ধি। গোডাউন ও প্রসেসিং সেন্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি। পর্যাপ্ত বীজ পরীক্ষাগার, বীজ উৎপাদন ও বিপননে কৃষিজাত পণ্যের আবাদ ও উৎপাদনে সহায়ক নীতিমালা তৈরী। চাহিদানুযায়ী বাজেট বরাদ্দ এবং মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনসহ সংশ্লি­ষ্ট বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে, কৃষি প্রধান বাংলাদেশে গড়ে তোলা সম্ভব হবে জাতীয় বীজাগার।
সূত্র জানায়, সারা দেশে মাত্র ৫টি ফার্মার্স সীড সেন্টার আছে। এগুলো হচ্ছে পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ, শেরপুরের নখলা, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও সিলেটের শ্রীমঙ্গল। সেখানেও সব ফসলের বীজ রাখার ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া সারাদেশে বীজ সুষম বন্টনেরও কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিএডিসিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সীমান্তের দত্তনগর, মেহেরপুরের বারাদী, ঝিনাইদহের সাধুহাটি, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, বরিশাল, পাবনা ও খুলনাসহ সারাদেশে মোট ২৩টি বড় বীজ উৎপাদন খামার আছে। এছাড়া পৃথকভাবে ডোমারে আলু বীজ, মেহেরপুরের চিতলা ও দিনাজপুরের নরসিপুরে পাটবীজ ও মেহেরপুর ও রংপুরে সবজি বীজ খামার রয়েছে। বিএডিসির মোট ২৩টি বীজ উৎপাদন খামার ছাড়াও ১৪টি বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও কৃষকপর্যায়ে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্সের ৩১টি প্রকল্প রয়েছে। এসবের বেশীরভাগেই সমন্বয় নেই। কোন এলাকায় কখন কোন বীজের চাহিদা, তার তথ্যও সংগ্রহ করা হয় না বলে অভিযোগ।
কৃষকদের কথা আমরা সময়মতো ভালো বীজ হাতে পাই না, যার কারণে আবাদ ও উৎপাদনে বিঘœ ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের রেকর্ড অনুয়ায়ী বিএডিসি গড়ে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ বীজ সরবরাহ করতে পারে। সবমিলিয়ে দেশে প্রায় ৯লাখ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে বর্তমানে বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হয় সর্বোচ্চ মাত্র দেড় লাখ মেট্রিক টন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ