Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে

সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূর প্রসারী কার্যক্রম ও গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেই বিগত ৯ বছরে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ অর্জন বাংলার জনগণের। এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি বেগম আখতার জাহানের পৃথক দুটি প্রশ্নের লিখিত জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের দীর্ঘ ৬ বছরের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ জয় সম্ভব হয়েছে। আজ মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। এ গৌরব আমাদের সরকারের, এ গৌরব দেশের ১৬ কোটি মানুষের। ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ সকল প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়। ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এ জটিল নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লেগেছে ২ বছর।
প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়া ভ‚-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট যোগাযোগের সূচনা করেন। তিনি আরো জানান, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের উদ্যোগে মহাশূণ্যে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পদক্ষেপ গ্রহণ করি। স্বপ্নের স্যাটেলাইট নির্মাণ ও এর সফল উৎক্ষেপণে আমি গর্বিত এবং আনন্দিত। সংসদ নেতা জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশণ, ডিটিএইচ, ভিস্যাট প্রভৃতি সেবা প্রদান, সমগ্র বাংলাদেশের স্থল ও জলসীমায় নিরবিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার নিশ্চিত হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল রাখা যাবে। তিনি আরো জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার আছে। এর মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের জন্য এবং ২০টি ট্রান্সপন্ডার লীজ দেওয়া যাবে। ট্রান্সপন্ডার লীজ দিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বর্তমানে প্রদেয় বার্ষিক প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতোমধ্যে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামকি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রæতি ছিল। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিলে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের’ আওতায় ৯টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে আমি এ প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ৯টি মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১শ’টি মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ এ বছর শুরু করা হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট মসজিদসমূহ নির্মাণ করা হবে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের দক্ষ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ফলে রাজস্ব আহরণে ঊর্ধ্বগতি এবং ঋণ গ্রহণে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। মূল্যস্ফীতিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। প্রবৃদ্ধির সুফল সুষমভাবে বন্টিত হওয়ায় একদিকে যেমন মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অন্যদিকে দারিদ্র্য ও অসমতা কমেছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। প্রতিবেশি ও সমমানের রাষ্ট্রসমূহের তুলনায় সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অভ‚তপূর্ব সাফল্যে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় দেশ আজ নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। তিনি জানান, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি। দেশে অদক্ষ জনগোষ্ঠীকে আধা ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরে নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার বিবরণ তুলে ধরতে গিয়ে আরও বলেন, রফতানি কেন্দ্রিক উৎপাদনে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করতে হবে। অপ্রচলিত পণ্য রফতানির মাধ্যমে অধিক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একশোটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশে রফতানি আয় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী জানান, দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের বিপুল জনসংখ্যাকে বোঝার বদলে সম্পদে পরিণত করতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম ও গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেই বিগত ৯ বছরে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ অর্জন বাংলার জনগণ। এই সাফল্যের ধারাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আর এরই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ। সরকারি দলের এম এ মালেকের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তোলার জন্য বিনিয়োগ সংক্রান্ত সুবিধাদি সৃষ্টি করা হচ্ছে, গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা। ফলে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭ সালে ২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রকৃত বৈদেশিক বিনিয়োগ পাওয়া গেছে। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি ওয়ান স্টপ সার্ভিস সম্পূর্ণরূপে চালু হলে বর্তমানে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অবদান প্রায় ২৩ শতাংশ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মসজিদ

১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ