পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। সউদী আরবে কর্মী নিয়োগের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। গত বছর সউদীতে নারী ও পুরুষ শ্রমিক পাঠানো হয়েছে পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৩০৮ জন। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে পাঠানো হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৯৩৫ জন। যা গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম।
জনশক্তি রফতানির দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিক পাঠানোর দুয়ারও খুলছে না। ২০১২ সালের আগস্ট থেকে এই দেশটিতে বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় সব ধরণের ভিসা বন্ধ রয়েছে। এতে করে দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজারটি মুখ থুবড়ে পড়লেও শুধুমাত্র কিছু মহিলা গৃহকর্মী যাচ্ছে। সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের জেল জরিমানা ছাড়াই দেশত্যাগের জন্য আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার জি টু জি প্লাসে কর্মী নিয়োগের চলমান প্রক্রিয়া সম্প্রতি স্থগিত ঘোষণা করেছে দেশটির নতুন সরকার। এ ঘোষণায় মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের কথিত দশ সিন্ডিকেটের রাজত্ব বন্ধ হচ্ছে। মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দশ সিন্ডিকেটের অনুকূলে কর্মী নিয়োগের নতুন অনুমোদন দিচ্ছে না। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আগামী ১ জুলাই থেকে অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের গ্রেফতারে চিরুনি অভিযানে নামছে। তারা বিদেশী অভিবাসী কর্মীদের দশ বছরের বেশি আর কোনো ভিসা দিবে না।
তেল সমৃদ্ধ দেশ কুয়েতে গত দুই মাস ধরে পুরুষ হাউজ লেবার ও মহিলা গৃহকর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদ ইনকিলাবকে বলেন, দূতাবাসের সত্যায়নের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের ভিসা চালু রয়েছে।
মালয়েশিয়ার নতুন সরকারের মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান সম্প্রতি একটি ইংরেজী পত্রিকায় সাক্ষাতকারে বলেছেন, যেভাবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি নেয়া হচ্ছিল তাতে শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছিল, আর তা যাচ্ছিল দুই দেশের কিছু দালালের পকেটে। আমরা এ নিয়ে তদন্ত করছি। সমস্যাগুলো দূর করার প্রক্রিয়াও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। চিহ্নিত দশ সিন্ডিকেট চক্র গত ১৫ মাসে মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় এক লাখ ৬০ হাজার কর্মী পাঠিয়ে প্রায় চার হাজার ২১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশ সেন্ডিং কান্ট্রির মর্যাদা লাভ করে। শ্রমবাজার সম্প্রসারণ এবং সেন্ডিংকান্ট্রিগুলোতে বেশি বেশি দক্ষ জনবল পাঠাতে না পারলে আগামীতে রেমিটেন্স খাতেও বিরাট ধাক্কা লাগার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ইনকিলাবকে বলেন, মালয়েশিয়া জি টু জি প্লাস এর চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণার কথা শুনেছি। কিন্ত দেশটির পক্ষ থেকে কাগজে কলমে এখনো এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারিনি। আমরা আশা করছি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া পরিবর্তন হবে এবং সোর্স কান্ট্রি হিসেবে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সকল রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত থাকবে। পূর্বে অনুমোদনপ্রাপ্ত ভিসায় মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
বায়রার অর্থ সচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, সউদী আরবসহ অন্যান্য দেশে গত বছর দেশে দশ লক্ষাধিক কর্মী গেছে। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ কর্মী বিদেশে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চার লাখ কর্মী গিয়েছে। সউদী আরবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কর্মীরা যেতে চাচ্ছে না। অনেক কর্মী বেকার হয়ে পড়েছে।
জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্বব্যাপী কমে যাওয়ায় শীর্ষ তেল বিক্রেতা সউদী আরব বিপাকে পড়েছে। তাদের জাতীয় বাজেটে প্রতি বছর দশ হাজার কোটি রিয়েল ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এতে সউদী নাগরিকদের আয় যেমন কমছে, তেমনি বাড়ছে বেকারত্ব। অর্থনৈতিক দৈন্যদশা থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য রাজকীয় সউদী সরকার ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। দেশটি অনেক কিছু সঙ্কুচিত করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশীদের জন্য ১২ ধরনের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই ১২ ধরনের কাজে এখন হতে সউদী নাগরিকরাই নিয়োজিত হচ্ছে।
গত রোববার থেকে দেশটিতে সউদী নারীরা রাজপথে গাড়ী চালানো শুরু করেছেন। এতে বাংলাদেশী ড্রাইভারদের কর্মসংস্থান কমে যাবে। এছাড়া সউদীর বিভিন্ন শহর-বন্দরের মার্কেটগুলোর দোকানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে দেশীয় নারী ও পুরুষদের কর্মসংস্থান বাধ্যতামূলক করায় অভিবাসী কর্মীদের চাহিদা ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। এতে দীর্ঘদিন সউদী আরবে অবস্থানকারী অনেক অভিবাসী বাংলাদেশী কর্মী দেশে ফিরতে শুরু করেছে। দেশটিতে ফ্রি ভিসায় গিয়ে অনেক বাংলাদেশী কর্মী চাহিদানুযায়ী কাজ পাচ্ছে না।
গত দেড় বছরে সউদী আরবের ভিসার দামও ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। আগে দেশটিতে যেতে একটি ভিসা বিক্রি হয়েছে আট থেকে ১০ লাখ টাকায়। বর্তমানে এই অঙ্ক দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায় নেমেছে। সউদী প্রবাসী ব্যবসায়ী হামিদীয়া রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আলহাজ মো. নুর উদ্দিন মোল্লা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সউদীর সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার নিয়ে নির্বিকার। বিষয়টি নিয়ে সউদী সরকারের সঙ্গে কোন দেন দরবারেও বসেননি। দুই মাস আগে রিয়াদে কারিগরি কমিটির যৌথ বৈঠকে অভিবাসী কর্মীদের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলে সউদী কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। ইদানিং দেশটিতে পুরুষ কর্মীর চেয়ে মহিলা গৃহকর্মী বেশি গেলেও কেউ কেউ নতুন পরিবেশের সাথে খাপখাওয়াতে না পেরে দেশে ফিরে আসছেন। এতে সউদীর শ্রমবাজার নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হচ্ছে।
সউদী আরবে মহিলা গৃহকর্মী প্রেরণে নানা অনিয়মের অভিযোগে বিএমইটি কর্র্তৃপক্ষ মহিলা কর্মী প্রেরণকারী ১২৪টি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সের সার্ভার বন্ধ করে দিয়েছে। এসব রিক্রুটিং এজেন্সি মহিলা কর্মী পাঠাতে না পারায় চরম হতাশায় ভুগছে। গত সোমবার বিএমইটির মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজার সাথে বায়রার নেতৃবৃন্দ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এসব এজেন্সির সার্ভার খুলে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দেয়ার দাবি জানান। তারা সৃষ্ট সংকট নিরসনেও সর্বাত্মক সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। আগামী এক মাসের মধ্যে সকল সৃষ্ট সংকট নিরসনের নিদের্শ দেয়া হয়। এতে বায়রার পক্ষে নেতৃত্ব দেন বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।