Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সকল রোগের চিকিৎসার সাথে ভেজাল ওষুধ -রূপগঞ্জের ফেরিওয়ালা ডাক্তার

| প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

খলিল শিকদার, রূপগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাট বাজার ও পাড়া মহল্লায় অবৈধ চিকিৎসালয়ের ছড়াছড়ি। আছেন ভাসমান দাঁত, নাক ও কানের হাতুরে ডাক্তার। কিন্তু তাদের নেই শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন সার্টিফিকেট বা প্রশিক্ষণ। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে দরিদ্র শ্রেণি ও নি¤œ আয়ের লোকজন। অতিরিক্ত ফি আদায় করে রোগীদের সাথে নিত্য প্রতারণাসহ চলছে অপচিকিৎসা। এর সাথে আছে ভেজাল ওষুধ। এমনই চিত্রই রূপগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারে ও পাড়া মহল্লায় ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার মুড়াপাড়া বাজার এলাকায় রয়েছে ইলিয়াস মেডিকেল হল নামে একটি দন্ত চিকিৎসা কেন্দ্র। এ প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইলিয়াস ভুঁইয়া নিজেই ডাক্তার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার দন্ত চিকিৎসা প্রদানে কোন প্রকার সনদ নেই। তবু দোকানের সাইন বোর্ডে সাটিয়েছেন ডাক্তার ইলিয়াস ভুঁইয়া নামে। শুধু তাই নয়, তার দোকানে অভ্যন্তরে রয়েছে ভুতুরে পরিবেশে দন্ত চিকিৎসা য়োর অকেজো নানা যন্ত্রপাতি । এর মধ্যে রয়েছে ময়লা ও আবর্জনাযুক্ত চেয়ার টেবিল, তোয়ালে ও দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পুরনো যন্ত্রপাতি।
একই দোকানে ভেজাল ও হাতে তৈরি ভুয়া পদ্ধতির সালসা ও দেখা গেছে। এসব সালসা ৭০টি রোগ নিরাময়ে কাজ করে বলে লোভনীয় লিফলেট সাঁটানো হয়েছে দরজায়। এমন নানা অপচিকিৎসার কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে নিরীহ ও দরিদ্র শ্রেণির রোগী। স্থানীয় মুড়াপাড়া বাজার এলাকায় রয়েছে এমন আরো দুটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনটির নেই রেজিস্ট্রার্ড ছাড়পত্র। তাদের মাধ্যমেই দাঁতের চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। প্রশিক্ষণহীন এসব ভুয়া ডাক্তারদের বেশভুষায় চেনা না গেলেও তাদের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে হয়রানির শিকার হয়ে অনেক রোগীই তাদের মূল্যবান দাঁত হারিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।
উপজেলার বানিয়াদির ২৪ বছরের গৃহিনী রুবিনা বেগম। তিনি জানান, গত মাসে তার দাঁতের তীব্র ব্যথা নিয়ে ইলিয়াস মেডিকেল হলে যান চিকিৎসা নিতে। ইলিয়াস তার দাঁত দেখে ফেলে দেয়। এতে অল্প বয়সে দাঁত হারিয়েছেন তিনি।
রূপগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিসের সামনে প্রতিদিন ময়লা ও ভাইরাসযুক্ত পুরনো যন্ত্রপাতি কাঁধে করে নিয়ে আসে একাধিক নাক ও কানের হাতুরে চিকিৎসক। জিসান নামের এক কথিক চিকিৎসক জানায়, সারাদিন হাটবাজার ও ব্যস্ত এলাকায় ঘুরে ২০ থেকে ২৫ জন রোগীর কান ও নাকের নানা চিকিৎসা করেন। দিনে প্রায় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয় তার। সাধারণত কান ব্যথা ও কানের ভেতরের ময়লা তুলে দেয়া ও নাকের সমস্যায় জটিল চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বলে জানান। তবে এ বিষয়ে কোন প্রকার প্রশিক্ষণ নেই তার। তবে দেখতে দেখতে শিখেছেন বলে জানায়। এ ধরনের ৩০জনের অধিক চিকিৎসক উপজেলার বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকায় ঘুরে বেড়ায় বলে জানা গেছে।
সূত্র আরো জানায়, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভক্তবাড়ি এলাকার ছোট্ট্র একটি বাজারে রয়েছে ৫টি দাঁতের চিকিৎসা কেন্দ্র। এদের কারোই চিকিৎসা সনদ না থাকলেও তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার উপাধি লেখা হয়েছে। এক সময় চা বিক্রি করতো উপজেলার ব্রাহ্মণখালী এলাকার মোশারফ। এসএসসিও পাশ করেছেন কোনমতে। তবে এখন সে দাঁতের ডাক্তার! ভক্তবাড়ি বাজার এলাকায় চেম্বার খুলে চালিয়ে যাচ্ছে অপচিকিৎসা। এছাড়াও কাঞ্চণ, বেলদী, হাটাব, ভুলতা, তারাব এলাকায় অর্ধশতাধিক দাঁতের চিকিৎসা কেন্দ্র খুলে সাধারণদের সাথে প্রতারণা করে আসলেও প্রশাসনের নজরদারী নেই বললেই চলে। এমন অপচিকিৎসা চলতে থাকায় সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর দায়িত্বরত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফয়সাল আহমেদ বলেন, অনুমোদনহীন এবং প্রয়োজনীয় সনদহীন কেউই নামের পূর্বে ডাক্তার উপাধি সংযুক্ত করলে তা হবে প্রতারণা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে জনসাধারণকে চিকিৎসা নিতে হবে ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, এসব অপচিকিৎসক ও ভূয়া ডাক্তারদের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ