Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংকিং সেবা এখন গ্রামমুখী

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ১০:১৪ পিএম

 অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশের ব্যাংকিং সেবা এখন গ্রামমুখী হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকের শাখার পাশাপাশি ব্যাংকিং সুবিধার সহকিছুই এখন গ্রামে যাচ্ছে। একদিকে ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবসার কথা চিন্তা করে অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে ব্যাংক প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছে। এতে আর্থিক সেবার আওতায় আসার পাশাপাশি গ্রামের মানুষ আর্থিক জ্ঞানের (ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি) সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে।

সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোও গ্রামে শাখা খুলতে আগ্রহী হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর শাখা রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৬৫০টি শাখাই গ্রামে। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি শাখা গ্রামে। শাখা ছাড়াও এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও গ্রামের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো বেশিরভাগ শাখা শহরে। এতে করে শহরকেন্দ্রিক হয়ে উঠছিল ব্যাংকের সেবা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার ফলে এখন গ্রামে একটি শাখার বিপরীতে শহরে একটি শাখা খুলতে হচ্ছে। এক সময় গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি শাখা খুলতো ব্যাংকগুলো। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বেসরকারি ব্যাংকের শহরাঞ্চলে চারটি শাখার বিপরীতে গ্রামাঞ্চলে অন্তত একটি শাখা খোলার বিধান করা হয়। পরে শহরে দুটি শাখার বিপরীতে গ্রামে একটি শাখা খুলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর সর্বশেষ, ২০১২ সাল থেকে গ্রামে একটি শাখার বিপরীতে শহরে একটি শাখা খোলার নিয়ম করা হয়। এ ছাড়া এখন বিভাগ ও জেলা শহরের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা এলাকায় স্থাপিত শাখাকেও শহর শাখা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
তাদের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়েই ব্যাংকগুলোকে শহরের সমান অনুপাতে গ্রামে শাখা খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকের সেবা দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। কেননা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৬০ ভাগের বেশি গ্রামে বাস করে। গ্রামের উন্নতি মানেই পুরো দেশের উন্নতি। তাই গ্রামের মানুষের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে ব্যাংকের শাখা স্থাপন, এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সমপ্রসারণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে গ্রামের মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতাও বাড়ছে; যা জাতীয় বিনিয়োগে ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোও এখন গ্রামমুখী হচ্ছে। এ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট চার হাজার ৭৭৬টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামে রয়েছে এক হাজার ৯৮৫টি শাখা। আর শহরে রয়েছে দুই হাজার ৭৯১টি। আগের বছরে একই সময়ে চার হাজার ৪৬৭টি শাখার মধ্যে গ্রামে ছিল এক হাজার ৮৩০টি। সরকারি ব্যাংকগুলোর পাঁচ হাজার ১২৮টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৬৪৬টি শাখা রয়েছে গ্রামে। আর এক হাজার ৪৮২টি রয়েছে শহরে। এ ছাড়া বিদেশি মালিকানায় ৬৯টি শাখার সবই শহরে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোন ব্যাংক কত শাখা খুলতে চায় সে বিষয়ে বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুমতির জন্য আবেদন করে। এর পর ব্যাংকগুলোর ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, মূলধন পরিস্থিতি, খেলাপি ঋণের হারসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শাখা খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। যে ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং যত ভালো, ওই ব্যাংককে তত বেশি শাখা খোলার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি ভালো না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ বিবেচনা ছাড়া এসব ব্যাংক শাখা খোলার অনুমতি পাচ্ছে না। অন্যদিকে, গ্রামে একটি শাখার বিপরীতে শহরে একটি শাখা খোলার বিধান থেকে শিথিলতা চেয়ে আসছে নতুন ব্যাংকগুলো। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নারাজ। গ্রামীণ এলাকায় বা প্রত্যন্ত অঞ্চয়ে ব্যাংকিং সেবার জন্য এখন সর্বোত্তম ব্যবস্থা হলো এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শুরু হয় ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ