পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন : কখনও আমাকে রড দিয়ে, কখনও বৈদ্যুতিক ক্যাবল দিয়ে পেটাতো। একবার ইলেক্ট্রিক সকও দেয়। রড দিয়ে পিটিয়ে আমার পায়ের তালুও থেতলে দেয়া হয়। টাকা চুরি ও বাজারে বেশি পয়সা খরচ করাসহ নানা অভিযোগে এমন নির্যাতন করা হতো আমাকে। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা ১২ বছরের শিশু গৃহকর্মী জাহিদুল ইসলাম শাওন রমনা থানায় নিজের অসহায়ত্বের কথা এভাবেই বলেন। কথা বলার সময় মাঝে মধ্যে তার চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছিলো। গত বুধবার সন্ধ্যায় বাথরুমে প্রবেশ করে ভেন্টিলেটর দিয়ে বের হয়ে প্লাস্টিকের পাইপ বেয়ে ১১ তলা থেকে নিচে নেমে আসেন শাওন। এলাকাবাসীর চিৎকার- চেঁচামেচিতে টের পেয়ে যান গৃহকর্তা। এসে শাওনকে গার্ডরুমে আটকে মারধর শুরু করেন পরিবারের লোকজন। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় একজন জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ এ ফোন দেন। পরে দ্রæত ঘটনাস্থলে ছুটে যায় রমনা থানা পুলিশ। শাওনকে উদ্ধার করার পাশাপাশি আটক করা হয় তিনজনকে। তারা হলেন- ইকবাল (গৃহকর্তার শ্যালক), তার স্ত্রী তামান্না খান ও তানজিলুর রহমান (ইকবালের ভাগ্নে ও গৃহকর্তার ছেলে)। তবে গৃহকর্তা ও তার স্ত্রী এখনও পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় রমনা থানার এসআই মোশারফ হোসেন বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর-৫৩ (২১-৬-২০১৮)। গ্রেফতারকৃত ৩জনকে গতকাল ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত নির্দেশ দেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করেছে। ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আরও যারা পলাতক রয়েছে তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সমাজে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মামলার বাদী রমনা থানার এসআই মোশাররফ হোসেন জানান, এলাকার একজন বাসিন্দা ৯৯৯-এ ফোন করে নির্যাতনের কথা জানালে ইস্কাটন গার্ডেনের ১২/এ নম্বর বাড়ি থেকে শাওনকে উদ্ধার করা হয়। শাওনের হাত-পা, পিঠ, পায়ের তলায় ভোতা অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শাওনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) পাঠানো হয়েছে। তিনজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা মারধরের কথা স্বীকার করে। শিশুটি ওই বাসায় প্রায় এক বছর ধরে কাজ করছিলো।
শাওন তার ওপর চালানো নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ওই বাসায় ৫জন থাকতো। সবাই আমাকে মারধর করতো। আমাকে ঢাকায় পড়াশোনা করানোর কথা বলে আনা হয়। কিন্তু পড়াশোনা তো দূরের কথা দিন-রাত ঘরের কাজ করতে বাধ্য করা হয়। প্রতিদিনের বাজার থেকে শুরু করে এমন কোনো কাজ নেই যা আমাকে দিয়ে করানো হয়নি। কাজের বিনিময়ে আমাকে কোনো টাকা দেয়া হতো না। একদিন দিলুরোড থেকে কাঁচাবাজার কিনে আনার পর আমাকে অনেক মারধর করা হয়। তামান্না আমাকে বলতো, গত সপ্তাহে কম দামে তরকারি এনেছিস, এবার বেশি কেন? বল কত টাকা মারছস?
শাওন আরো জানান, এরপর একদিন তাদের একটি স্যুটকেসের চাবি হারিয়ে যায়। স্যুটকেসে নাকি অনেক টাকা ছিল। ইকবালের ধারণা, আমি চাবি চুরি করেছি। তাই আমাকে চিকন রড দিয়ে মারধর করে। তার ভাগ্নে তানজিলুর ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরি করছে। সেও এই কথা শুনে বাড়ি ফিরে আমাকে অনেক মারে। চাবি হারানোর পর একদিন বলে, ১০ হাজার টাকা পাচ্ছে না, আরেকদিন বলে ২০ হাজার টাকা পাচ্ছে না। প্রতিদিনই আমাকে টাকার জন্য মারধর করতো। ইকবাল একদিন সবাইকে ডেকে আমাকে ইলেক্ট্রিক সক দেয়। টাকা চুরির কথা স্বীকার না করলে আবার সক দেয়ার হুমকি দেয়। আমি ভয়ে বলি যে, আমিই টাকা চুরি করেছি। ওই ঘটনার কয়েকদিন পর ইকবাল নিজেই স্যুটকেসের চাবি খুঁজে পায়। এরপর আর কিছু বলেনি। মারধরের ওই ঘটনার পর আমি মাঝে মাঝে ফোনে বাবার সঙ্গে কিংবা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতাম। তখন আমি যাতে নির্যাতনের কথা না বলতে পারি সেজন্য সবসময় আমার সামনে বসে থাকতো তানজিলুর। একদিন ফোনে কথা বলার আগে ছুরি এনে আমার গলায় ধরে রাখে। আমি যদি ফোনে মারধরের বিষয় বাড়িতে জানাই তাহলে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। আমি ভয়ে বাড়িতে কিছুই বলিনি। রোজার শেষের দিকে তারা আমার বিরুদ্ধে আড়াই লাখ টাকা চুরির অভিযোগ আনে। যদিও আমি চুরি করিনি। ২০ জুনের মধ্যে টাকা ফিরিয়ে না দিলে আমাকে মারধর করবে আর বাবাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে বলে তারা হুমকি দেয়। ওই ভয়ে আমি বাথরুম থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নামি। পাইপ বেয়ে নিচে নামার সময় ভয় লাগেনি- জানতে চাইলে শাওন বলে, ছোটকালে গাছে উঠতাম। একটু অভ্যাস ছিল, ভয়ও লেগেছে। কিন্তু পাইপ বেয়ে না নামলে রাতে আমাকে অনেক অত্যাচার করা হতো। তাই আমি এ সিদ্ধান্ত নেই। শাওনের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার উত্তর সাহেবগঞ্জে। সে ফরিদগঞ্জের বদরপুর আলিয়া মাদরাসায় পড়তো। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন কালু। একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় জাহাঙ্গীর তানজিলুরের দাদাকে দেখাশোনা করতো। সেই সূত্রে শাওনকে ঢাকায় কাজ করতে পাঠান জাহাঙ্গীর হোসেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।