Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নীলসাগরের টিকিট যেন সোনার হরিণ সৈয়দপুরে রেলওয়ে স্টেশনে কালোবাজারি

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা : নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কাউন্টারে কর্মরত বুকিং সহকারীরা ওই টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ফলে সৈয়দপুরে রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেন এখন “সোনার হরিণ”। এতে করে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহে চরম বিপাকে পড়েছেন।
নীলফামারীর রেলওয়ে শহর সৈয়দপুর। এখানে দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা অবস্থিত। সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী রেলওয়ে পথে বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। চলাচল করে আরো বেশ কয়েকটি লোকাল ট্রেনও। নীলফামারীর ডোমারের চিলাহাটি থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করে আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি। সৈয়দপুরে রেলওয়ে স্টেশনের জন্য এ ট্রেনটি নির্ধারিত আসন বরাদ্দ রয়েছে। বরাদ্দকৃত আসনের মধ্যে রয়েছে চেয়ার (শোভন) ১২০ টি, এসি ¯িœগ্ধা চেয়ার ২৫ টি, নন-এসি বাথ ৬টি এবং এসি বাথ ১০টি। এর মধ্যে আবার প্রতি ঈদের সময় আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোগ করা হয়। তখন এ স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু তারপরও এখানে সাধারণ যাত্রীরা টিকিট পান না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ১ জুন থেকে পর্যায়ক্রমে ১৫ জুন পর্যন্ত টিকিট বিক্রি শুরু হয়। সর্বশেষ ১৫ জুন দেয়া হয় ২৪ জুনের ফিরতি টিকিট। কিন্তু নির্ধারিত দিনের শুরু থেকে সাধারণ যাত্রীরা রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েও একটি টিকিট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। কারণ টিকিট কালোবাজারি সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা কাউন্টারের বুকিং সহকারিরা আগেভাগেই টিকিট বের করে নেন। পরে কাউন্টার খুলে হাতেগোনা কয়েকজনকে টিকিট দিয়েই বলেন টিকিট শেষ। এতে করে টিকিটের জন্য লাইনের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে বুকিং সহকারীদের প্রায় প্রতিদিনই বাক্বিতন্ডা হয়।
একটি সূত্র জানায়, টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের রয়েছে বুকিং সহকারী মাহবুব ও সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার মিলরাইট সপ’র শ্রমিক মাহবুব ওরফে জামাই মাহবুব। সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে বেশ কয়েকজন বুকিং সহকারী থাকলেও বুকিং সহকারী মাহবুব হোসেনের ওপর কথা বলার কেউ নেই। তাছাড়াও তিনি স্থানীয় হওয়ার তাঁর দাপটে অন্যরা একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বুকিং সহকারি মাহবুব টিকিট কালোবাজারি মূল হোতা। সে জামাই মাহবুরের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন যাবৎ টিকিট কালোবাজারি করে আসছে। বুকিং সহকারী মাহবুর মূলত কাউন্টার থেকে অনলাইনে টিকিট বের করে রাখেন। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে সে সব টিকিট কালোবাজারে তিন-চারগুন বেশি দামে বিক্রি থাকেন।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনে ধরে কালোবাজারে আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট শোভন চেয়ার শ্রেণীর ৪৫৫ টাকার টিকিট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২ শ’ টাকা এবং এসি চেয়ার ¯িœগ্ধা শ্রেণীর ৮৭০ টাকার টিকিট ২ হাজার টাকা, এসি বাথ ১ হাজার ৬১০ টাকার টিকিট সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের সহকারি স্টেশন মাষ্টার মো. আলগমীর হোসেনের কাছে আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে অতিরিক্ত বগি কবে থেকে সংযুক্ত হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সঠিকভাবে তা বলতে পারেননি। আর টিকিট কালোবাজারির বিষয়েও তিনি কোন কথা বলেননি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কমার্শিয়াল কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও তিনি রিসিভি না করায় তা সম্ভব হয়নি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ