Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংকের সুদহার বেধে দেয়া অনুচিত -ড. আহসান এইচ মনসুর

করপোরেট ট্যাক্সে লেবেল প্লেয়িং হয়নি : এমসিসিআই

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কতিপয় কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এখানে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হয়নি। এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা দরকার বলে মনে করছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। গতকাল বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটোত্তর আলোচনা সভায় সংগঠনটির সভাপতি নেহাদ কবিরের বক্তব্যে এসব তথ্য উঠে আসে। অনুষ্ঠানে নেহাদ কবির বলেন, শুধু কিছু ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। অথচ অসংখ্য কোম্পানি রয়েছে গেছে যাদের করহার কমানো হয়নি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রেও করহার কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই করহার কমানোর ক্ষেত্রে কিছুটা লেবেল প্লেইং ফিল্ড মেনে করা উচিত।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ঋণে সুদের হার না কমালে ব্যাংকগুলো করপোরেট কর কমানোর সুবিধা পাবে না। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করপোরেট কর কমানোর বিষয়ে চারদিকে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। এটা আসলে সৌভাগ্যবশত ব্যাংকাররা পেয়ে গেছে। তবে, ব্যাংকখাতে করপোরেট কর কমানোয় একটা সুবিধা হয়েছে, আমরা ব্যাংকগুলোকে চাপ দিতে পারব ঋণ সুদের হার কমিয়ে আনার জন্য।
এনবিআর চেয়ারমান বলেন, আমরা তালিকাভুক্ত ও তালিকা বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ করপোরেট কর রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আড়াই শতাংশ ট্যাক্স কমিয়েছি, যেটা ব্যাংক পেয়ে গেছে। তবে যদি সব খাতে একই হারে কমানো হতো তাহলে আমাদের রাজস্ব আয় কমে যেত। একই সঙ্গে পোশাক শিল্প অনেক সুবিধা পায়। তবে তাদের মতো অন্যদের সুবিধা দিলে তারাও ভালো করবে। অন্যরা করপোরেট ট্যাক্স বেশি দেয়। আর পোশাক শিল্প কম দেয়। এই জন্য একটু বাড়িয়েছি।
মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবির অনেক কিছুরই প্রতিফলন হয়েছে। এবার আমরা ব্যবসাবান্ধব বাজেট করেছি। এটা করতে গিয়ে আমাদের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়েছে। নতুন করে কোনো করারোপ করা হয়নি। এ নিয়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। অনেকের অনেক আপত্তি আমলে নিচ্ছি। যতটা সম্ভব আমরা বাজেট পাসের আগে সেগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করব।
এনবিআর চেয়ারমান বলেন, ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানো ঠিক আছে। কিন্তু সব দিকে ছাড় দিতে গিয়ে এটা করা যায়নি। কারণ করপোরেট টাক্স কমানোর কারণে রাজস্ব আয় কমবে ২ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ভ্যাট কার্যকর করতে আমরা ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করব। আগামী এক বছরের মধ্যে ছোট বড় যত লেনদেন আছে সব লেনদেনের ক্ষেত্রে ইএফডি কার্যকর করা হবে। এর মাধমে যদি অটোমেশন হয় এবং ভ্যাট আইন কার্যকর হয় তাহলে রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যারা বাংলাদেশে এসে চাকরি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন তাদের ট্যাক্সের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছি।
তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের ওপরে একটা আঘাত হবে কারণ তাদের রেট একটু বেশি। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ এখান থেকে আসে মাত্র ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই কারণে ব্যাংকের ওপর তেমন প্রভাব পড়ে না। আমরা এটাকে অটোমেশনের আওতায় আনবো। সঞ্চয়পত্রে সুদের হারকে একটা রিজনেবল অবস্থায় আনা হবে। বেশি কমানো ঠিক হবে না।
অনুষ্ঠানে বাজেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মুনসুর এবং কেপিএমজি বাংলাদেশের সিনিয়র পার্টনার আদিব এইচ খান।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ব্যাংকের সুদহার কোনো অ্যাসোসিয়েশনের বেধে দেয়া ঠিক নয়, এটি বাজারের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত’। তিনি বলেন, ‘একটি অ্যাসোসিয়েশন ব্যাংকের সুদহার নির্ধারণ করেছে। সুদহার কোনো অ্যাসোসিয়েশনের বেধে দেয়া ঠিক নয়। সুদহার কত হবে তা বাজার নির্ধারণ করবে। তাই এটি বাজারের উপরে ছেড়ে দেয়া উচিত। তবে ১০ শতাংশের ঋণের সুদহার থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভালো নয়।’
ড. আহসান এইচ মুনসুর বলেন, তিন কারণে লোকাল ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। ব্যাংকের ডিপোজিট গ্রোথ কমে গেছে। ২০১২ অর্থবছরে ১৯.৪ শতাংশ ডিপোজিট গ্রোথ ২০১৭ অর্থবছরে নেমেছে ৯.৫ শতাংশে। হাই নন পারফরমিং লোন (এনপিএল) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি এই সংকটকে বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, বন্ড মার্কেটকে ডুবিয়ে দিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎসকে দুর্বল করা হয়েছে। এই বন্ড মার্কেট ছাড়া প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়বে না। এখন এফডিআই কমার পাশাপাশি কমে গেছে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ। এজন্য বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে সাইড লাইনে চলে যাচ্ছেন। এসময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দসহ সংগঠনটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ