Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১১ দিনের মতো খোলা আকাশের নিচে শিক্ষকরা

অনশনসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এমপিকরণের দাবিতে টানা ১১ দিনের মতো জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশে অবস্থান করছেন নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীরা। গতকাল সকাল থেকেই এখানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ¯েøাগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। আন্দোলনে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা (স্কুল-কলেজ-মাদরাসা) যোগ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। আন্দোলন থেকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ‘এমপিও না দিলে বাড়ি ফিরে যাবো না’; ‘একদফা দফা এক দাবি এমপিওভুক্তিকরণ চাই’; ইত্যাদি বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্লেকার্ড হাতে ¯েøাগানে প্রেস ক্লাব এলাকা জুড়ে উত্তাল হয়ে উঠে।
বুধবার বিকেলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ডা. বিনয় ভুলণ রায়। ২১ জুন জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার, ডেপুটি-স্পীকার ও মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য বরাবর স্বারক লিপি প্রদান, ২২ তারিখ প্রেসিডেন্ট বরাবর স্বারক লিপি প্রাদান, ২৩ তারিখ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিকী অনশন, ২৪ তারিখ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২৫ থেকে আমরণ অনশনে যাবেন শিক্ষকরা।
বিনয় ভুষণ রায় বলেন, যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রæতি দিলেন, সেখানে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ তা বাস্তবায়ন না করে শিক্ষকদের হয়রানি করার জন্য একটা অযৌক্তিক নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন। এমপিভুক্তির শর্তই হলো স্বীকৃতি যা আমরা ১৫ থেকে ২০ বছর পূর্বেই পেয়েছি। অথচ এখনও পর্যন্ত আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেননি। আগে সকল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করুন তারপর অন্য বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেন, মরতে হয় মরবো তবুও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæত সকল নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি না করে রাজপথ ছাড়বো না।
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন। টানা ওই অবস্থান ও অনশনের একপর্যায়ে ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আশ্বাস দেন। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, নতুন অর্থবছরে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেন, সেখানে তিনি নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলেননি। তারপর থেকেই এমপিওভুক্তির দাবিতে টানা ১১ দিন ধরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশে আন্দোলন করে যাচ্ছেন নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এমপিওভুক্তির জন্য কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার জন্য দুটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শর্ত পূরণ করা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং এমপিওভুক্তির জন্য বাছাই কমিটি নামে এই দুটি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান (সভাপতি) করা হয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) মহাপরিচালককে। অন্য সদস্যরা হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক-১), এই বিভাগের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রতিনিধি, ইলেক্ট্রনিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেলের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের প্রতিনিধি, অধিদফতরের প্রোগ্রামার ও ব্যনবেইসের সিস্টেম অ্যানালিস্ট। এমপিওভুক্তির জন্য বাছাই কমিটির আহŸায়ক করা হয়েছে বেসরকারি মাধ্যমিক বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে। এর অন্য সদস্যরা হলেন ব্যানবেইসের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (আইন), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব (কলেজ), উপ-সচিব (বাজেট), সিনিয়র সহকারী সচিব (বাজেট)। এছাড়া এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে যুগ্ম-সচিবকে (বেসরকারি মাধ্যমিক-৩)।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ বলেন, অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। আবেদন করা প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণ করেছে কিনা তা যাচাই করা হবে। নম্বরের ভিত্তিতে শর্তপূরণ করা প্রতিষ্ঠান এমপিভুক্ত হবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে এক হাজার বা তার কিছু বেশি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করবে সরকার। এদিকে গত ১০ জুন থেকে এমপিওভুক্তির দাবিতে বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। সবশেষ তারা আমরণ অনশনের আহŸান জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাঁচ হাজার ২৪২টি। এছাড়া সরকার নতুনভাবে ১৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি, এমপিও পাওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ