Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সংসদে সাধারণ আলোচনা- প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক দর্শন নেই

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রস্তাবিত বাজেট বাজেটই নয় মন্তব্য করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক দর্শন নেই, রাজনৈতিক দর্শন নেই। তাই এই বাজেটকে বাজেট বলা যায় না। অর্থমন্ত্রী যে দলের পক্ষ থেকে বাজেট দিয়েছেন সেই দলের নীতি-আদর্শ, দর্শনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি বাজেট দিয়েছেন। এই বাজেটে বিষ আর মধু এক সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দেশের জনগণ তো বিষ আর মধু এক সাথে খায় না।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ফিরোজ রশিদ বলেন, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। পাকিস্তান আমলে ২২ ধনী শ্রেণীর পরিবর্তে এখন ১২২ ধনিক পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের মোট সম্পদের ৮০ ভাগ ১২২ পরিবারের হাতে জিম্মি আর বাকী ২০ ভাগের মালিক অন্য সকল জনগণ। অর্থমন্ত্রী এই ধনিক শ্রেণীর জন্যই বাজেট দিয়েছেন। যারা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে ব্যাংক খালি করে দিয়েছেন তাদের সুবিদা দিতেই এই বাজেট। উনি ব্যাংক ডাকতদের সুবিদা দিয়ে বাজেট দিয়েছেন, এটা হতে পারে না। উনি বাজেটের দর্শনই নষ্ট করে দিয়েছেন। এই আমরা মানতে পারি না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তো কোনো দিন পাকিস্তানের ২২ পরিবারের কাছে মাথা নত করেননি। আপনি কোনো লুটেরাদের কাছে মাথা নত করবেন? ব্যাংকে লুটপাট অর্থমন্ত্রী মন্ত্রণালয় নিরব, বাংলাদেশ ব্যাংক নিরব, অর্থ বিভাগ নিরব। সবাই নিরব আর নিচের দিকে ব্যাংকগুলোতে চলে লুটপাট। ব্যাংকের ওপর মানুষের আর কোনো আস্থা নেই। কারণ ব্যাংক এখন একটি পরিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। পারিবারিক ব্যাংক করে অবাধে লুটপাট চলছে। ফিরোজ রশিদ বলেন, আওয়ামী লীগ টানা ১০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় বড় বড় প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থেকে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেলে অহঙ্কারও বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে এখন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অহঙ্কার।
প্রশাসনে এখন আওয়ামী লীগার হওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে বলে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এখন রাস্তায় হাটতে গেলে গাঁয়ে ধাক্কা লাগলে বলে আমি আওয়ামী লীগ করি, পার্কে হাটতে গেলে বলে আমি আওয়ামী লীগ করি। এটা ভালো লক্ষণ না। কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, প্রশাসনে এখন সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের বাইরে প্রশাসনে কাউকে পাওয়া যাবে না। এরা কোথায় ছিল? কে তাদের আওয়ামী লীগ বানাল। তাদের আওয়ামী লীগটা করলো কে? প্রশাসনে আওয়ামী লীগের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কে কত বড় আওয়ামী লীগ এটার জন্য গবেষনা চলছে। কার নানার বাড়ির কাছে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ছিল। কার চাচার সাথে কার বিয়ে হয়েছিল এসব দিয়ে আওয়ামী লীগ বের করার চেস্টা হচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের বাইরে কাউকে পাওয়া যায় না। আসল আওয়ামী লীগ নকল আওয়ামী লীগ বেছে নেওয়া কঠিন হবে। তাদের দাপট এতো বেশি বেড়ে গেছে সাধারণ মানুষকে তারা তোয়াক্কা করে না। তারা ধরাকে সড়া মনে করে না। তারা তাদের ইচ্ছামত কাজ করছে, এটা ভালো লক্ষণ না। এরশাদের আমলে দুই বাজেট দেয়া নিয়ে অর্থমন্ত্রীর ক্ষোভের জবাব দিতে গিয়ে ফিরোজ রশিদ বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর জীবন যৌবনে প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন যখন প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেব দেশে সামরিক আইন দিয়েছিলেন, সেই সামরিক আইনে সময় সামরিক সরকারের একটি বাজেট দিয়েছিলেন। উনি জাতীয় পার্টির বাজেট দেন নাই। আমরা জাতীয় পার্টির কথা ভুলে বলে ফেলি। যখন বলা হয় উনি জাতীয় পার্টির আমলে দুটি বাজেট দিয়েছেন উনি ক্ষেপে যান। উনি জাতীয় পার্টির বাজেট দেন নাই। জাতীয় পার্টি উনার কাছে খারাপ কিন্তু সামরিক আইন উনার কাছে খুবই মধুর। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম (বীরবিক্রম) বলেন, সরকারের নির্মাণ কাজ এতো নিম্ন মানের হলে মানুষ ভালো চোখে দেখে না। হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা ঠিকমত না পেলে মানুষ অন্য চোখে দেখে। ব্যাংক খাত নিয়ে আমরা সংসদ সদস্যরা এতো কথা বলার পরেও অর্থমন্ত্রীর নিশ্চুপতা আমাদেরকে হতাশ করেছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ