Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীর বাড্ডায় আ.লীগ নেতা খুন

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম


সাখাওয়াত হোসেন : রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় হত্যাকান্ড থামছেই না। থেমে থেমে চলছে হত্যাকান্ড। সর্বশেষ গত ১৫জুন সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী (৫৫)। এ নিয়ে গত ৫ বছরে বাড্ডা এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও ডিশ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ১৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হল। প্রতিটি খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রতিপক্ষের হাতে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকার আধিপত্য বিস্তার, ডিস ব্যবসা, চাঁদা আদায় এবং জমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হচ্ছে হত্যাকান্ড। হত্যাকান্ডের পর খুনীরা সহজেই প্রভাশালীদের সেল্টারে চলে যায়। ফলে বার বার খুনের ঘটনা ঘটলেও জড়িতদের বিচার খুব একটা হয় না।
বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিহত আওয়ামীলীগ নেতা ফরহাদের ডান গাল, বাঁ চোখ বরাবর, মাথার ওপরে বাঁ দিক এবং ঘাড়ের বাঁ দিকে মোট চারটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। দুই ঘাতককে শনাক্ত করে গ্রেফতারে কাজ চলছে। এছাড়া এর আগে যেসব হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে পুলিশ তার গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দ্ব›দ্ব ও এলাকায় ডিশ ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। নবগঠিত ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ফারুক আহমেদ ও নিহত ফরহাদ আলী প্রার্থী ছিলেন। গত ২১ এপ্রিল বেরাইদ ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের গুলিতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই কামরুজ্জামান দুখু নিহত হন। ওই ঘটনায় জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান বাদী হয়ে ফারুক আহমেদসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতে ফারুক আহমেদসহ ২১ জন হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত ফারুক আহমেদসহ চারজনকে গ্রেফতারের আদেশ দেয়। গত বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, দক্ষিণ বাড্ডা এলাকায় ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ডিশ বাবু। ওই এলাকার ডিশ ব্যবসা দখলে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল সন্ত্রাসী ডালিম-রবিন গ্রæপ। ডালিম-রবিন গ্রæপের গডফাদার হলো মেহেদী গ্রæপ। মেহেদী আমেরিকায় থেকে বাড্ডা এলাকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কলকাঠি নাড়ছেন। ডালিম-রবিন গ্রæপের প্রধান দুই জন মালয়েশিয়ায় থাকেন। সেখান থেকে বাড্ডার আন্ডারওয়ার্ল্ডের একটি অংশ তারা নিয়ন্ত্রন করে। আবার এই এলাকার বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রন করে মেহেদী গ্রæপ। এসব গ্রæপের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ছড়াছড়ি। ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নিয়ে গত ৯ মে দক্ষিণ বাড্ডার জাগরনী ক্লাবে ডিশ বাবুকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল বাড্ডার বেরাইদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই কামরুজ্জামান দুখুকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাগ্নে ফারুক আহমেদের গ্রæপ প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে এলাকার রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জেরে। এর আগে ২০১৪ সালের ৩ মে বাড্ডা জাগরনী ক্লাবের ভিতর বাড্ডা থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন রাহিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট রাতে বাড্ডার আদর্শনগর পানিরপাম্প এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন বাড্ডার ছয় নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন মোল্লা, ব্যবসায়ী ফিরোজ আহমেদ মানিক, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গামা এবং যুবলীগ নেতা আব্দুস সালাম। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রæয়ারি দিনে দুপুরে মেরুল বাড্ডার মাছের আড়তে ঢুকে রবিন গ্রæপের নির্দেশনায় আবুল বাশার নামে আরেক সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় কিলার নুরাকে অস্ত্রসহ আটকের পর পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিনদুপুরে গুলি ও বোমা ছুড়ে হত্যা করা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মামুনকে। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে গত ৫ বছরে বাড্ডায় খুন হন সাইদুর, মাসুম, আলা, রুবেল ও তাইজুলসহ আরো কয়েকজন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ