পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীপন বিশ^াস, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে : নানা আনন্দ ও বেদনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিবিরের শরণার্থীরা পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করেছেন। ঈদের দিন সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, কারো মনে ও চোখে-মুখে ঈদের খুশি আবার কারো কাছে বেদনার কঠিন চাপ ফুটে উঠেছে। অনেকেই মন্তব্য করেন কে জানে জীবনে এমন পরিস্থিতিতে ঈদ উদ্যাপন করতে হবে!
রাষ্ট্রীয় সুবিধা না পেলেওগেল বছর আরাকানে (রাখাইন) বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ঈদুল ফিতর কেটেছে নিজ দেশে। কিন্তু ঈদুল আজহার পূর্বরাতে মিয়ানমারের রাখাইন জনগোষ্ঠিসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বর্বর ও নির্মম নির্যাতনে দেশ ছেড়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। হত্যা’র শিকার হয়েছেন হাজার হাজার নারী-শিশু-যুবক। রেহাই পায়নি বৃদ্ধরাও। প্রাণ নিয়ে দলে দলে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আবাসন, খাবার ও অন্যান্য সুবিধা নিয়ে শরণার্থীর জীবন কাটাচ্ছেন।
এখানে সার্বিক দিক দিয়ে ভালো থাকলেও আজকের ঈদুল ফিতরে ফেলে আসা পুরনো বছরের স্মৃতি সবাইকে বিচলিত করে তুলতে দেখা গেছে। পরিবার ও স্বজনহীন রোহিঙ্গারা বেদনাময় স্মৃতি স্মরণে এনে কখনো কখনো বিলাপ করছেন।
ঈদের নামাজ শেষে নিজ দেশে নিরাপদে ফিরতে এবং বাংলাদেশের মঙ্গলের জন্য দোয়াও করেছেন তারা। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক হাজার ২০টি মসজিদ ও ৫৪০টি নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মক্তব) ও টেকনাফের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫টি, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৪৫টি মসজিদ ও ২০টি মক্তবে রোহিঙ্গারা ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। ঈদের দিন সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় নামাজ আদায়ে কোনো বিঘœ ঘটেনি তাদের।
উখিয়ার কুতুপালং মধুরছরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পেরমোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আরাকানে আমরা স্বজনদের হারিয়েছি। আজ প্রায় ১০ মাস আশ্রিত জীবন কাটাচ্ছি বাংলাদেশে। আমাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের কোনো আশার আলো দেখছি না। এরপরও বাংলাদেশ আমাদের জন্য অনেক কিছু করছে। তাই মোনাজাতে নিজ দেশে নিরাপদে ফিরতে এবং বাংলাদেশের মঙ্গলের জন্য দোয়া করেছি আমরা।
ঈদের দিনে দেখা যায়, উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের খেলার মাঠে বসানো হয়েছে কয়েকটা নাগরদোলা আর বেশ কয়েকটা দোকান। ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছরই এমন আয়োজন করা হয়। কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা আলী জানান, নিজে আনন্দ করতে না পারলেও বাচ্চাদের আনন্দই আমাদের আনন্দ।
কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, নিজেরা নতুন জামা-কাপড় নিতে না পারলেও তারা চেষ্টা করেছেন সন্তানদের ঈদের আনন্দ উপভোগের সুযোগ করে দেয়ার।
এছাড়াও হৃদয়ের চলমান রক্তক্ষরণ আর নিপীড়নের ক্ষত মুছে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরের মাঝে ঈদের খুশি ছড়াতে করা হয় নানা আয়োজন। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের খেলার মাঠে শিশুদের আনন্দ দিতে বসানো হয় নাগরদোলা আর বেশ কয়েকটা মৌসুমী পণ্যের দোকান।
কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা আলী, সব্বির আহমদ ও আবুল কালাম বলেন, আরাকানে (রাখাইনে) কী পরিস্থিতি পার করে এসেছি তা বড়রা জানি। এর তীব্রতা কোনো ধর্মীয় দিবস আসলে মনে বেশি নাড়া দেয়। এসব দেখে আসা বুদ্ধি সম্পন্ন শিশু-কিশোররাও অনেক সময় এসব গল্প করে। ঈদের দিনে সেখানকার স্মৃতি ভুলতে বা শিশু-কিশোরদের ভুলিয়ে রাখতে এ আনন্দ আয়োজনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। কারণ শিশুদের আনন্দই আমাদের আনন্দ।
উখিয়ার মধুর ছরার ‘ডাবল ও’ বøকের মাঝি রহিম উদ্দিন ও ‘এফএফ’ বøকের মাঝি জমির উদ্দিন বলেন, বৈরী আবহাওয়ার মাঝে ঈদে রোহিঙ্গা শিশুদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে অনেক খুশি রোহিঙ্গারা। আশ্রয়, ঈদের নামাজ ও ঈদ উদ্যাপনের সুযোগ দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের জন্য মন থেকে দোয়া করেছি আমরা।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। মানবিকতা বিবেচনায় ঈদ সামগ্রী বিতরণসহ সুষ্ঠুভাবে ঈদের নামাজ আদায় করাতে সব ধরনের প্রস্তুুতি নেয়া ছিল। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক হাজার ২০টি মসজিদ ও ৫৪০টি মক্তবে নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিল। শিশুদের বিনোদনের জন্যনেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, টেকনাফে রেজিস্টার ও আনরেজিস্টার মিলে আড়াই শতাধিক মসজিদ ও মক্তবে ঈদ জামাত আদায় করেছে এখানে অবস্থানকারী প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোও ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেছে। এছাড়া সপ্তাহিক ও মাসিক রেশন বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। কোনো সমস্যা ছাড়াই সকাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মসজিদ ও মক্তবে পর্যায়ক্রমে ঈদের জামাত আদায় করা হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয় বলেও উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও ঈদে রোহিঙ্গা শিশুদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটিতে অনেকে খুশি হয়েছেন রোহিঙ্গারা। তারা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সরকার তাদের যে আশ্রয় দিয়েছে, ঈদ নামাজ ও উদযাপন করার সুযোগ দিয়েছে এতে তারা আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য মন থেকে দোয়া করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।