পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : সরকারী পাহাড়। তাতে ঘরবাড়ি। আছে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ। যারা থাকেন তারা মাসে মাসে ভাড়া দেন। ভারী বর্ষণ হতেই এসব ভাড়াটেদের সরিয়ে নেয় পুলিশ। কিছু বাড়ি ঘরও উচ্ছেদ করা হয়। তবে সরকারী পাহাড় দখল করে যারা বসতির নামে মৃত্যুকূপ তৈরী করেছেন তাদের কিছ্ইু হয় না। অবৈধ স্থাপনায় গ্যাস, পানি আর বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া সরকারী সংস্থার কর্মকর্তারাও চিহ্নিত হন না। সাজা পান না কেউ। আর এ সুযোগে একের পর এক পাহাড় দখল হচ্ছে গড়ে উঠছে অবৈধ বসতি।
বিগত ২০০৭ সালের ১১ জুন একরাতে পাহাড় ধসে ১২৯ জনের মৃত্যুর পর থেকে প্রতিবছর বর্ষায় চলে উচ্ছেদ অভিযান। বর্ষা শেষে সবকিছু চাপা পড়ে যায়। নতুন নতুন পাহাড়ে গড়ে উঠে বসতি। আসে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয় পাহাড় দখলকারীরা। পাহাড়খেকো এই দখলদারদের সিন্ডিকেট শক্তিশালী। তাদের সাথে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, সরকারী দলের ক্যাডার মাস্তান। আছেন সরকারী কয়েকটি সেবা সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড় ধসের আশঙ্কায় ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। গতকালও নগরীর এ কে খান পাহাড়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে অর্ধশতাধিক বসত ঘর। অভিযানে থাকা জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, এই পাহাড়ে অবৈধ বসতি তৈরী করে গণপূর্ত বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী। উচ্ছেদ অভিযানের সময় তারা বাধা দেওয়ারও চেষ্টা করে। এর আগে সোমাবার নগরীর কয়েকটি পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৯০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ওইদিন অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৭০টি ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে সেখানে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এর আগে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে মাইকিং করা হয়। এতে সাড়া না দেওয়ায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সরিয়ে নেওয়া লোকজনকে সাতটি স্কুলে রাখা হয়েছে। তবে নগরী ও আশপাশের আরও অনেক পাহাড়ে এখনও শত শত বসতি রয়েছে। সেখানে কয়েক হাজার পরিবারের লক্ষাধিক সদস্য বসবাস করছেন। বর্ষার আগে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অবৈধ বসতি সরিয়ে নিতে সময় বেঁধে দেয়া হবে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়ে দেন। এরপরও অবৈধ দখলদাররা পাহাড় ছাড়েনি।
অবশেষে টানা বর্ষণের মুখে প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, উচ্ছেদ করার পর ফের ওইসব বাড়ি ঘর মেরামতে কাজ শুরু হয়েছে। ফের সেখানে লোকজনকে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। আর একাজে সহযোগিতা করছে পাহাড়ের মালিক বিভিন্ন সরকারী সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির হিসাবে নগরীর ৩০টি পাহাড়ে কয়েক হাজার পরিবার বসবাস করছে। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। নগরীতে উচ্ছেদ অভিযান হলেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অক্ষত রয়েছে পাহাড়ে মৃত্যুকূপ।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গত তিনদিনে নগরীর বিভিন্ন পাহাড় থেকে কয়েক হাজার পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শত শত বসতি উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাহাড় ধসে প্রাণহানীর ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন এসব পাহাড়ের মালিক যেসব সংস্থা তারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে পাহাড় দখল করে অবৈধ বসতি গড়ে তোলা বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু তারা কিছুই করছে না। গত কয়েক মাসে এসব সংস্থাকে বার বার চিঠি দিয়ে এমনকি বৈঠক করেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোন সংস্থাই এতে সাড়া দেয়নি। উল্লেখ্য বেশিরভাগ পাহাড়ের মালিক চট্টগ্রাম ওয়াসা, রেলওয়ে, গণপূর্ত, বনবিভাগসহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থা।
বিগত ২০০৭ সালে পাহাড় ধসে ১২৯ জনের মৃত্যু ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি পাহাড় ধসের জন্য পাহাড়ের মালিক সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে দায়ী করেছিল। কমিটি তাদের সুপারিশে স্ব স্ব সংস্থার উদ্যোগে পাহাড় সুরক্ষার বেশকিছু সুপারিশও করেছিল। কিন্তু এর কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৭ সালে পাহাড়ে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের জন্য একটি তহবিলও গঠন করা হয়। তবে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরুর আগে তদন্ত করে দেখা যায়, পাহাড়ে যারা বসবাস করে তারা কেউই ছিন্নমূল নয়। তারা মূলত ভাড়া দিয়েই এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস করে। আর এ কারণে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া থেমে যায়। তখন সরকারি তরফে পাহাড় দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা জারি হয়। তবে সে নির্দেশনাও বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৮ সালে নগরীর লালখান বাজারে পাহাড় ধসে ২০ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় পাহাড় দখল করে বসতঘর যিনি গড়ে তুলেছিলেন তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তবে মামলা তদন্ত বেশিদূর যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।