Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী চাপ প্রয়োগ চান

জি-৭ দেশগুলোর সঙ্গে নীল অর্থনীতি বিষয়ে অংশীদারিত্বের আহবান

| প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিবেশ সুরক্ষার জন্য জি ৭ দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল রোববার কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালে এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্র ও উপকূলীয় প্রতিবেশের টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের মত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জি -৭ দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘নীল জল আমাদের জনগণের কাছে একটি ‘ঐতিহ্য’। সময়ের দাবি অনুযায়ী আমরা আমাদের উপসাগরকে সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।’ ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বর্জ্য নিক্ষেপ এবং সাগরের জল অ¤øীয় হয়ে যাওয়াসহ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উষ্ণতা বেড়েই চলেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ৭৫টি উপকূলীয় দ্বীপ ডুবে যাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে এবং নদীগুলোতে সাগরের লবনাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ২ কোটি লোকের বাস্তুভিটা স্থানান্তরের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদেও জীবিকার সুযোগ সীমিত এবং মহাসাগরীয় চ্যালেঞ্জ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের খাপ খাইয়ে চলার ক্ষমতা খুবই সীমিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সর্বত্র শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জনগণের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে টেকসই উন্নয়নের উপর ভিত্তি করে সামুদ্রিক নীতি গ্রহন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী জি-৭ ভূক্ত সকল দেশকে সমুদ্রভিত্তিক পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সুবিধার অংশীদারিত্বের নীতির ভিত্তিতে এবং তাদের উদ্ভাবন ও সক্ষমতাকে সমুদ্র সম্পদের টেকসই উন্নয়নের সুরক্ষা প্রদান, সংরক্ষণ এবং কাজে লাগানোর আহবান জানান।
অভিযোজিত প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং মূল প্রযুক্তি হস্তান্তরকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তির দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
মহাসাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ করার আহবান জানিয়ে তিনি প্লাস্টিকের পরিবর্তে শিল্পে পাট জাতীয় প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বৃদ্ধির আহবান জানিয়ে বলেন, বিশ্ব এক্ষেত্রে স্বল্প ব্যয়ে পচনশীল জৈব প্রযুক্তিকে বিকল্প হিসেবে দেখতে পারে।
জলবায়ু বিষয়ক ইন্টারভেনশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটির জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনে সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে জলবায়ু অর্থ সংস্থানের উন্নয়নে যুক্ত করা এবং সহায়তা বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মত দেশের কৃষি, জনস্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং স্থানান্তর প্রভৃতি খাতে সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সাথে মানিয়ে নিতে দরিদ্র ও সর্বাধিক ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর সমর্থনের জন্য কানাডীয় সরকারের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে মোকাবেলা করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য কানাডা আগামী ৫ বছরে ২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে। আর গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের জন্য দেবে (জিসিএফ) ৩শ’ মিলিয়ন ডলার।
তিনি বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় জি-৭ ভূক্ত দেশগুলোর কাছে অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত উভয় ধরণের সহযোগিতারও আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে চাপ প্রয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
এর আগে শনিবার জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জি-৭ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও মানবাধিকার লংঘনের দায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নে রাখাইন রাজ্যে কার্যকর পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের বারবার দেশ থেকে বিতারণ বন্ধ এবং মূল সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারকে অবশ্যই কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের আরো আন্তর্জাতিক বিশেষ করে জি-৭ দেশগুলোর সমর্থন প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যার মূল মিয়ানমারেই নিহিত এবং তাদেরকেই এর সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে যেখানে তারা শতশত বছর ধরে বসবাস করে আসছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অধিকার নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এই প্রক্রিয়া যাতে স্থায়ী ও টেকসই হয় সেজন্য আমরা এতে ইউএনএইচসিআরকে অন্তর্ভুক্ত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী রাখাইন এডভাইজরি কমিশনের সুপারিশসমূহ অতিদ্রæত এবং নিঃশর্ত বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে রাজি করানো এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ অবরোধ আরোপে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গ্রহণে কাজ করার জন্য জি-৭ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যাযজ্ঞের অপরাধ অথবা তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের জন্য জবাবদিহিতা ও সুবিচার নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুুচ্যুত ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে এবং তারা নিজ দেশে গণহত্যার মুখোমুখি হওয়ায় জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণ তাদের বাড়িঘর ও হৃদয় দুর্দশাগ্র রোহিঙ্গাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং নিজেদের খাবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোট ১২২টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘ সংস্থা কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে।
তিনি বলেন, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে তাদের নিরাপদ আশ্রয়, চিকিৎসাসেবা এবং অন্যান্য মৌলিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা আসন্ন বর্ষা ও সাইক্লোন মৌসুমের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ‘ভাসানচর’ নামে একটি নিরাপদ দ্বীপে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, এই স্থান বসবাসের উপযোগী, নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সুরক্ষা থাকবে। সেখানে বসবাসের পরিবেশ উন্নত হবে এবং জীবিকার সুযোগ থাকবে এবং আমরা সেখানে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করছি।
এর আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা ও অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনে যোগ দিতে শনিবার সকালে সড়কপথে কুইবেক সিটি থেকে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার দূরে লা মালবাই-এ পৌঁছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের স্থান লা মানইর রিচেলিউয়ে পৌঁছলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তাঁর স্ত্রী সোফাই গ্রেগরি ট্রুুডো তাকে স্বাগত জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ