Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ভাতা বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ও ভাতা বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশের ব্যয় নেপাল ও ভুটানের চেয়েও কম। জনগণকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। দেশে কমপক্ষে একটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাধীন রয়েছে মোট জনসংখ্যার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ায় এ হার ৮৫ শতাংশ। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হারে মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আছে। বাংলাদেশের পেছনে আছে ভারত।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট (২০১৮-১৯ অর্থবছর) পেশের সময় অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সংসদে এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য ও অসমতা হ্রাসের ক্ষেত্রে নিয়মিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বাইরে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম হলো আমাদের অন্যতম হাতিয়ার। বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা দুর্যোগ প্রবণ এলাকা, অতিদরিদ্র এলাকা এবং জনসংখ্যার অনুপাত বিবেচনা করছি। অসচ্ছল, যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা অথবা নাতি-নাতনিদের সহায়তা দেবার জন্য একটি ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রস্তত করছে। এজন্য আগামী বাজেটে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩৫ লাখ থেকে ৪০ লাখ জনে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়। বিধবা ও স্বামী কর্তৃক নিগৃহীত মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৬৫ হাজার থেকে ১৪ লাখে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানী ভাতা ও উৎসব ভাতার পাশাপাশি বার্ষিক দুই হাজার টাকা হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা চালুকরণ, জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস উপলক্ষে জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে বিশেষ সম্মানীভাতা চালুকরণের প্রস্তাবও এবার এসেছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ২৫ হাজার হতে ১০ লাখে বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির হার বাড়িয়ে প্রাথমিক স্তরে ৫০০ টাকা হতে ৭০০ টাকায়, মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা হতে ৭৫০ টাকায় এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৭০০ টাকা হতে ৮৫০ টাকায় বৃদ্ধি এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮০ হাজার হতে ৯০ হাজার জনে বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপবৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকা হতে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ টাকা হতে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা হতে এক হাজার টাকা এবং উচ্চতর স্তরে এক হাজার হতে এক হাজার ২০০ টাকায় বৃদ্ধি বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৬ হাজার থেকে ৬৪ হাজারে উন্নীত এবং তাদের মধ্যে বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার হতে ৪০ হাজারে এবং শিক্ষা উপবৃত্তির সংখ্যা ১১ হাজার হতে ১৯ হাজারে উন্নীত করার কথা জানান অর্থমন্ত্রী। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজ্ড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজারে বৃদ্ধি, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার হতে ৪০ হাজারে বৃদ্ধি, দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা হতে ৮০০ টাকায় বৃদ্ধি এবং ভাতার মেয়াদ দুই বছরের স্থলে তিন বছর নির্ধারণ, পাশাপাশি ভাতাভোগীর সংখ্যা ছয় লাখ হতে সাত লাখে বৃদ্ধি, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তার আওতায় মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা হতে ৮০০ টাকায় বৃদ্ধি এবং ভাতা প্রদানের মেয়াদ দুই বছরের স্থলে তিন বছর নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ হতে ২ লাখ ৫০ হাজারে বৃদ্ধি করা হবে। তিনি জানান, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার প্রতিটিতে ২০ হাজার হিসেবে মোট ৪০ হাজার বৃদ্ধি করে ভিজিডি কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৪০ হাজারে বৃদ্ধি করার চিন্তা রয়েছে।
মুহিত বলেন, ভাতার হার ও ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে লক্ষ্যভিত্তিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার জন্য আমরা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সংস্কার কার্যক্রম তথা জি-টু-পি পদ্ধতির প্রবর্তন করেছি। এর আওতায় প্রত্যেক উপকারভোগী সরকারি কোষাগার হতে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে নিজ নিজ পছন্দের ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল হিসাবে মাসের নির্দিষ্ট তারিখে ভাতা পাবেন। পাশাপাশি, জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে সংযোগ রেখে প্রত্যেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য ডিজিটাল তথ্য-ভান্ডার প্রস্তত করা হচ্ছে, যা উপকারভোগী নির্বাচনে দ্বৈততা পরিহারে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে নতুন ভাতার আবেদন, অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, অর্থবরাদ্দ, অর্থছাড় ইত্যাদি বিষয়ও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ফলে সরকারি সম্পদ ও সেবায় সাধারণ জনগণের সহজ অভিগম্যতা ও অধিকার নিশ্চিত হবে। পাইলটভিত্তিতে মাতৃত্বকাল ভাতা কর্মসূচির সাতটি উপজেলায় জি-টু-পি’র মাধ্যমে ভাতা বিতরণ পদ্ধতির সূচনা করা হয়েছে। বয়স্কভাতা বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা ১১টি জেলায় জি-টু-পি পদ্ধতিতে বিতরণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি, আগামী অর্থবছরে সারাদেশে এটি স¤প্রসারণ করতে পারব। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে আমরা যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করব।
সামাজিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশ জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় করে। অন্যদিকে পাকিস্তান ব্যয় করে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে তুরস্ক। তাদের ব্যয়ের পরিমাণ জিডিপির সাড়ে ১৩ শতাংশ। দেশে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল ৫৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ