Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ

| প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : প্রতি অর্থবছরের মতো এবারও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে। এই খাতে মোট ৬৭ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বিগত যে কোন সময়ের তুলনায় এই অর্থবছরের সামগ্রিক শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এটাই সর্বোচ্চ বরাদ্দ। অর্থমন্ত্রী গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন উপলক্ষে বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানান। যা বাজেটের মোট বরাদ্দের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে কমেছে গতঅর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দের হার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ছিল ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে চলতি অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করা হয় ৬৫ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে সেটি কমিয়ে করা হয় ৫৯ হাজার ৯২৮ কোটি।
সবার জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি হচ্ছে কোন খাতে আগামী বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। আন্তর্জাতিক মানদÐ অনুযায়ী, একটি দেশের শিক্ষা খাত জিডিপির ৬ শতাংশ বা বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ পেলে তা আদর্শ ধরা হয়। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী জানান, শিক্ষার মোট ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষার খাতে ২২ হাজার ৪৬৬ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ২৪ হাজার ৮৮৮ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব অর্থে ১০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, উপবৃত্তি, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম ইত্যাদির পরিধি বাড়াবো। পাশাপাশি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক ওয়াশরুমসহ ৬৫ হাজার শ্রেণিকক্ষ, ১০ হাজার ৫০০ শিক্ষক কক্ষ, ৫ হাজার বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও ৩০ হাজার খেলার সামগ্রী বিতরণ করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ খাতে সারাদেশে ১০০টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ করা হবে। ২০১৮-১৮ অর্থ বাজেটে দেশের ৩৮৯টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ৪টি বিভাগীয় শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে গার্লস টেকনিক্যাল স্কুল, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং সব বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে ৩৫টি মডেল মাদরাসা স্থাপন ও ৫২টি মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে এবং দেশের ৬৫৩টি মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, দক্ষতার ঘাটতির কারণে প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মীরা যথাযথ মজুরি পায় না। অভিবাসী শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যসহ আরবদেশে মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভের জন্য কর্মসংস্থানবান্ধব কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শিক্ষায় ভর্তির হার ইতোমধ্যে অনেকখানি অগ্রসর হয়েছে। এখন শিক্ষার মান বাড়ানো দিকে নজর দিতে হবে। পূর্বের ধারাবাহিকতায় বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় আরো ১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষার জন্য সব ইউনিয়ন ও কয়েকটি শহরে আইসিটি বেইজ্ড কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। ৬৪টি জেলায় ৬৪টি জীবিকায়ন ও জীবনব্যাপী শিখনকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আছে আমাদের।
মানসম্মত মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার জন্য সরকারি কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ স¤প্রসারণ ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাল্টিমিডিয়াসহ শ্রেণিকক্ষ, ল্যাংগুয়েজ-কাম-আইসিটি ল্যাব, হোস্টেল নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় আসবাব ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হবে। ২৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৬ হাজার ৩৪০টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ এবং ২ হাজার ১২০টি স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে গোপনীয়তা নিশ্চিত করার জন্য সকল শিক্ষা বোর্ডের সমন্বিত উদ্যোগে প্রশ্নব্যাংক তৈরির চেষ্টা চলছে। সারাদেশে ১০০টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ এবং অবশিষ্ট ৩৮৯টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, বিদ্যমান প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, ৪টি বিভাগীয় শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে গার্লস টেকনিক্যাল স্কুল, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং সকল বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে ৩৫টি মডেল মাদরাসা স্থাপন ও ৫২টি মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু এবং দেশের ৬৫৩টি মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্ততায় বলেন, ঢাকা শহরে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অধিকাংশ স্কুলেই কোন স্কুল বাস নেই। তাই অভিভাবকরা নিজস্ব গাড়ী ব্যবহার করে তাদের সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়, যা ঢাকা মহানগরীতে যানজট সৃষ্টি হয়। উন্নত দেশের ন্যায় স্কুলের জন্য ডেডিকেটেড স্কুল বাস চালু করে যানজট এবং ছাত্রদের স্কুলে যাতায়াত সহজতর ও নিরাপদ করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সী স্কুল বাস সার্ভিস চালুর আগ্রহ প্রকাশ করলে তা যথাযথ বিবেচনায় বিশেষ শুল্ক সুবিধায় আমদানির সুযোগ দেয়া হবে।
এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে ২ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ