পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : ঘুষ লেনদেনে দালালের দৌরাত্ম্য, রেজিস্ট্রেশনের নামে অবৈধভাবে বিভিন্ন ফি আদায়সহ শত শত অনিয়মের অভিযোগ। এমনকি অফিসের কয়েকজন ব্যক্তি রয়েছেন যারা মূলত সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। অনিয়মের কথা বলতে গিলে উল্টো কর্মকর্তারা খারাপ আচরণও করে থাকেন। সাব-রেজিস্ট্রার অফিস যেন দালাল চক্রের আস্তানা। গণশুনানিতে এমনই বলছিলেন ভোক্তভোগীরা। অভিযোগকারীদের এমন বক্তব্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন কোতোয়ালি, গুলশান ও তেজগাঁও সাব-রেজিস্ট্রারের সরকারি কর্মকর্তারা। পরে আগামীতে এমন কিছু হবে না বলে প্রতিশ্রæতি দেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা। গতকাল বুধবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বিষয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি সেবা নিয়ে গণশুনানির দৃশ্য ছিল এমনই। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ গণশুনানির আয়োজন করে। এসময় ঘুষ গ্রহণসহ অবৈধ সম্পদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা সদরের সাব-রেজিস্ট্রার কুদ্দুস হাওলাদের বিরুদ্ধে দুদক ড. নাসিরউদ্দিন অনুসন্ধানের ঘোষণাও দেন।
শুনানিতে রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা গাজী শহিদুল্লাহ বলেন, তেজগাঁও সাব- রেজিস্ট্রার অফিস দালাল চক্রের আস্তানা। ওই অফিসের রাসেল ছাড়া মামুন নামের আরো একজন রয়েছে যারা মূলত সাব- রেজিস্ট্রারের ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। তিনি বলেন, আমি ২০১০ সালের একটি দলিলের কপি তুলতে তেজগাঁওয়ের সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে যাই। দলিলের রশিদের ফটোকপি ও থানার জিডি নিয়ে দলিল উদ্ধারে ঢাকা সদর সাব- রেজিস্ট্রার অফিস গেলে সেখান থেকে জনৈক রাসেল (দালাল) ১৩ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে সাব- রেজিস্ট্রার কুদ্দুস হাওলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। টাকা না দেয়ায় ওই দলিল তুলতে পারিনি। তাছাড়া দলিল তুলতে কেন আমি এত টাকা দেব?
এ বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার কুদ্দুসের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাসেল তার অফিস স্টাফ নয়। তবে কেন একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার রুমে থাকে, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
এ সময় উপস্থিত সবাই সাব- রেজিস্ট্রার কুদ্দুস হাওলাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করার দাবি করা হলে দুদকের পক্ষ থেকে এ বিসয়ে অনুসন্ধানের ঘোষণা দেন। সাভারের কামরুজ্জামান অভিযোগ করেন, সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে স্টাফ না এমন অনেকে থাকেন, তারাই ঘুষের টাকা হ্যান্ডেলিং করেন। নিয়ম না থাকলেও সেরেস্তা ফি বাবদ ৭০০ টাকা নেয়া হয়। বিশেষ কৌশলে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে দুদকের পক্ষে নাসিম আনোয়ার বলেন, রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে আমরা অনুসন্ধান করব। এছাড়া সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে স্টাফ না এমন যারা আছেন সেই বিষয়টি ঢাকা জেলা সাব- রেজিস্ট্রার দেখবেন। তবে যারা ঘুষের টাকা হ্যান্ডেলিং করেন তাদেরকে দুদক বিশেষ কৌশলে আইনের আওতায় আনবে বলে তিনি জানান। ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার বলেন, এসব বিষয়ে আমরা বিভাগীয় তদন্ত করব। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দোহারের আবুল কাসেমের অভিযোগ, দলিল করতে সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে সেরেস্তা ফি নামে টাকা নেয়া হচ্ছে। দলিল লেখকরা একটি দলিলের জন্য কত টাকা নিতে পারেন সে বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন তিনি। এ বিষয়ে গুলশানের সাব-রেজিস্ট্রার বলেন, সেরেস্তা ফি নামে কোনো ফি নেই, এখন পে-অর্ডারের বাইরে কোনো টাকা নেয়া হয় না। এ বিষয়ে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার বলেন, ২০১৪ সালে দলিল লেখকদের ফি সংক্রান্ত নীতিমালা হয়েছিল, কিন্তু এ নিয়ে জটিলতার কারণে সেখানে হয়রানির হচ্ছে। এ বিষয়টি আইজিআরকে দ্রæত নিষ্পত্তি করতে আমরা অনুরোধ জানাব। রহিম উদ্দিন বলেন, স্থানীয় সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে দালালে ভরা। সারাদেশেই একই অবস্থা বিদ্যমান। কেরানীগঞ্জের বেগম বেদৌরা আলী বলেন, জমি রেজিস্ট্রারের সময় শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়। সেটা অহরহ হচ্ছে, এর কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য অন্যায়ভাবে হাজার হাজার টাকা নেয়া হয়ে থাকে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দিন আহমদে বলেন, অভিযোগকারী এক জন সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়মের অভিযোগ করলে দুদক কমিশনার জেলা রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেন এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা যদি কোনো সেবার বিনিময়ে অনৈতিকভাবে ঘুষ দাবি করেন, তাহলে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইনে জানালে কমিশনের স্টাইকিং ফোর্সের সদস্যরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রধান নিবন্ধক (আইজেআর) মোঃ আবদুল মান্নান, জেলা রেজিস্ট্রার দীপক সরকার, কমিশনের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ার প্রমুখ। ######
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।