Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে ময়লার ভাগাড়ে দিনে জমছে দুই কোটি পলিথিন

| প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্লাস্টিকজাত পণ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বজুড়ে যখন নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তখন বাংলাদেশে শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন দুই কোটি পলিথিন জমছে বলে দাবি করেছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় সংগঠনের কার্যালয়ে ‘প্লাস্টিক দূষণ : পরিবেশের জন্য হুমকি ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সংগঠনটি এই পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই পলিথিনকে ঢাকার জলাবদ্ধতার জন্যও দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করেছে পবা। অনুষ্ঠানে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পবার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় ১২০০ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে। এগুলোর বেশিরভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকায় প্রতিদিন দুই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয় যেগুলো পলিথিন বর্জ্য। এ বর্জ্য সামান্য বৃষ্টিতে নগরে জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সা¤প্রতিক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে সোবহান জানান, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ৭৯ শতাংশ প্লাস্টিক বা পলিথিন বর্জ্য পানিতে মিশে জলজ প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত প্লাস্টিকের বোতল, বিভিন্ন সামগ্রী এবং পলিথিন ব্যাগের অধিকাংশই পুনর্ব্যবহার, পুনঃচক্রায়ন না করে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে, যা পরবর্তীতে খাল, নদী হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। জলজ প্রাণী তা গ্রহণ করছে। জলজ প্রাণীর মাধ্যমে এই প্লাস্টিক আবার মানুষের খাদ্যচক্রেও প্রবেশ করছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
পবার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১০ সালে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি বছর এই সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে পাঁচ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং বড় শিল্প কারখানায় ১২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। দেশে এখন প্লাস্টিক পণ্যের জনপ্রতি ব্যবহার গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৫ কেজিতে।
তিন বছর আগে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছিলেন, কতগুলো কারখানায় পলিথিন ব্যাগ তৈরি হচ্ছে কেউই সেই তথ্য দিতে পারছে না। বিনিয়োগ বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছেও এর সঠিক তথ্য নেই। পবার আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহারে পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন।
পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের উপর ২০০২ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ সেই আইন কার্যকর করা যায়নি বলে অভিযোগ করেন অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা সোবহান। পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি পুলিশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলাকে দোষারোপ করে তিনি ’রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবকেও’ প্লাস্টিক দূষণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়ায় (রিসাইকেল) প্রযুক্তি ব্যবহারে পরিবেশ মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের সদিচ্ছা নেই বলেও মনে করেন তিনি। সভায় বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে আমদানিকৃত পলি প্রোপাইলিন পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করার পরামর্শ দেন বক্তারা। টিস্যু ব্যাগ আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানান তারা। সভায় আলোচক হিসেবে যোগ দেন স্পারসোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল কাদির, পবার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, সম্পাদক শাহিন আহম্মেদ প্রমুখ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ