Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কক্সবাজার-পটুয়াখালীর রাঘব বোয়ালরা অধরা

| প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 কক্সবাজার ব্যুরো : মাদক বিরোধী সাঁড়াশী অভিযানে টেকনাফ-কক্সবাজারে ধরা পড়ছেনা রাঘব বোয়াল। টেকনাফ থেকে দেশ ছেড়েছে ডজন খানেক জনপ্রতিনিধি। অভিযান সফল করতে ঘর-বাড়ি, সহায় সম্পদ জবদ্ধ ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার দাবী। সা¤প্রতিক সময়ে সর্বনাশা মাদক সমাজের সর্বস্থরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিশেষ করে কক্সবাজার টেকনাফ উখিয়ায় ইয়াবার বিষাক্ত ছোবলে ছিন্নভিন্ন হতে যাচ্ছিল সামাজিক স্থিরতা ও সুস্থ জীবন যাপন। ঢলের মত ইয়াবার সয়লাব থেকে বাঁচতে অত্র অঞ্চলের মানুষের গণদাবি ছিল বিশেষ অভিযান চালিয়ে চিহিৃত ইয়াবা গডফাদারদের ক্রসফায়ারে দেয়া। গত ১৪ মে থেকে সরকার সারা দেশে মাদক বিরোধী সাঁড়াশী অভিযান শুরু করে। এপর্যন্ত আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে সারা দেশে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হলেও ইয়াবার স্বর্গরাজ্য খ্যাত টেকনাফ কক্সবাজারে এই অভিযান এখনো কাঙ্খিত ফল আনে নি। 

কক্সবাজার টেকনাফ ও মহেশখালীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৫ জনকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে চিহিৃত করা হলেও টেকনাফের একরাম কাউন্সিলর ও আক্তার কামাল মেম্বার ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার ব্যাপারে কথা উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এনিয়ে ভুল টার্গেট বলে লেখালেখিও হচ্ছে। নিহত একরামের স্ত্রী-সন্তানরা কক্সবাজার সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি সরকারের নজরে আনার চেষ্টাও করেছেন। একইভাবে আক্তার মেম্বারের মায়ের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার বলি হয়েছে আক্তার মেম্বার।
সরকারের দায়িত্বশীল কয়েকজন মন্ত্রীকেও এবিষয়ে মন্তব্য করতে দেখা গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, একরামের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এত বড় অভিযানে দু’একটি ভুল হতেও পারে।
বড় কথা হচ্ছে বন্দুকযুদ্ধে এই দুই জন নিহত হওয়ার পরে স্থিমিত হয়ে পড়েছে ইয়াবা বিরোধী সাঁড়াশী অভিযান। এই সুযোগে পালাবার সময় পেয়েছে ইয়াবা রাজারা। সটকে পড়েছে গডফাদার ও ব্যবসায়ীরা। ইয়াবা গডফাদারদের বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য ভুল টার্গেটে ক্রসফায়ার বলেও কথা উঠেছে। এগুলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদিক বিরোধী অভিযানকে একটি মহল থেকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা বলেও অভিযোগ আসছে।
জানা গেছে, এই সুযোগে চিহিৃত ইয়াবা গডফাদার ও ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার ভারত ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পালিছে। অনেকেই বনে জঙ্গলে নিজের অথবা এলাকা ছেড়ে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে গা ঢাকা দিয়েছে। ইয়াবা রাজা খ্যাত সরকার দলের এমপি আব্দুর রহমান বদিসহ টেকনাফের ডজন খানের জনপ্রতিনিধি ওমরার কথা বলে দেশ ছেড়েছে। অনেকে সৌদি আরব হয়ে অন্য দেশে স্থায়ী হওয়ার তদবীর করছে বলেও জানাগেছে।
এদিকে, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা : পটুয়াখালীর পর্যটন শহর খ্যাত কলাপাড়া, মহিপুর ও কুয়াকাটায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গত কয়েকদিনের বিশেষ অভিযানে এক ইউপি সদস্যসহ অর্ধশতাধিক মাদকসেবনকারী ও বিক্রেতা গ্রেফতার হলেও ধরা পড়েনি মূল হোতারা। দৃশ্যমান কোন উপার্জন ছাড়াই মাদক কানেকশনে কোটিপতি বনে যাওয়া মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রনকারী এসব প্রভাবশালীরা প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে কলাপাড়া, কুয়াকাটা, মহিপুর মৎস্যবন্দরসহ গ্রামীণ জনপদে প্রতিনিয়ত চালান করছে সর্বনাশা ইয়াবা, গাঁজা, চোলাই মদ। পুলিশ, র‌্যাব ও মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের হাতে বেশ কয়েকটি বড় চালান ধরা পড়ার পরও তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফেলতিতে জানা যায়নি গড ফাদারদের নাম। জানা যায়, কলাপাড়া ও মহিপুর থানায় মাদকের কয়েকশ মামলা তদন্তাধীন থাকার পরও এর উৎস, সরবরাহ ও বিপনন প্রক্রিয়া নিয়ে পুলিশ-র‌্যাব রয়েছে অন্ধকারে। কলাপাড়া পৌরশহরে ও আলীপুর মৎস্যবন্দরে ডিবি ও থানা পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার বেশ কয়েকজন ধরা পড়লেও আইওয়াশ মূলক তদন্তের কারণে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে শধুমাত্র চুনোপুটিরাই থাকছে, অধরা থেকে যাচ্ছে রাঘব বোয়ালরা। এরপর জামিনে বেরিয়ে ফের গডফাদারদের নিয়ন্ত্রনে সক্রিয় হচ্ছে তারা। মাদক বিরোধী অভিযানে নিয়ন্ত্রক গডফাদাররা বরাবরের মত ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় মাদকের ভয়াল আগ্রাসন রোধ করা যাচ্ছেনা। মাদকের দ্রæত বিস্তার রোধে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। অথচ সমুদ্র পথে কয়েকজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের মাছ ধরার ট্রলারে চট্রগ্রাম, কক্সবাজারসহ মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্তবর্তী সমুদ্র পানিসীমা থেকে প্রতিনিয়ত আসছে ইয়াবা, পাচার হচ্ছে ইলিশ। কলাপাড়া ও আলীপুর মৎস্য বন্দর থেকে ইয়াবার বড় চালানসহ কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর ইয়াবার বিকিকিনি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এলেও তদন্তের স্বার্থে গণমাধ্যম কর্মীদের কিছুই বলছেনা পুলিশ, এরপর রহস্যজনক কারণে তদন্ত প্রতিবেদনেও আসছেনা বাড়তি কিছু, চুনোপুটি বিক্রেতাদের হাল হকিকত ছাড়া। ইয়াবা কানেকশনে গ্রেফতারকৃত কয়েক নারীর দেয়া তথ্যমতে ইয়াবা পাচারের হোতা চিটাগং ও কক্সবাজারের বেশ কিছু ট্রলার মাঝি, যারা প্রভাবশালীদের মাছ ধরা ট্রলার এর মাঝি হওয়ার সুবাদে ধরা পড়ছেনা কোন অভিযানে। মাদক কানেকশনে থাকা এ চক্রটি শেল্টারদাতা প্রভাবশালীদের সহায়তায় মৎস্যবন্দর, সমুদ্র উপকূলে স্থায়ী ভাবে বসতি গড়ে তুলে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে সমুদ্র পথে ইয়াবার চালান এনে পূন:রায় সড়ক ও নৌপথে ছড়িয়ে দিচ্ছে এ জনপদে।

 



 

Show all comments
  • monitored ৫ জুন, ২০১৮, ৩:০৫ এএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেনsimana/bordar dia-prosasoner-jal-bosiyedin-1ta yaba-o-bangladeshe-dhukbena-mukto hobe desh-jati&bordarbondo na kore 14 koti crosfayer korleo-desh-madok mukto hobena
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ