Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নতুন সাজে লালমনি এক্সপ্রেস

| প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সৈয়দপুর কারখানায় তৈরী নতুন কোচ দিয়ে নতুন সাজে চালু হচ্ছে লালমনি এক্সপ্রেস। আগামীকাল বুধবার নতুন কোচের লালমনি এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক। ইতোমধ্যে নতুন কোচ দিয়ে ট্রেনটির ট্রায়ালও শেষ করেছে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ। নতুনরুপে লালমনির আসন সংখ্যা ৬৭২। ঢাকা-লালমনিরহাট রেলপথে চলাচলরত একমাত্র ট্রেনটির আসান সংখ্যা যাত্রীর তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করছেন উত্তরের যাত্রীরা।
যাত্রীবাহী রেল কোচের আমদানি নির্ভরতা কমাতে রেলওয়ে বহরে থাকা পরিত্যক্ত রেল কোচ নতুন রূপে সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসাবে সৈয়দপুর রেল কারখানায় চলছে পরিত্যক্ত রেল কোচের পুনর্বাসন (রিহ্যাবিলিটেশন) কাজ। মিটারগেজ রেলপথের পরিত্যক্ত কোচের জরাজীর্ণ অবকাঠামো ও ট্রলির (চাকার অংশ) যান্ত্রিক সরঞ্জাম পাল্টে নতুন রূপে কারখানায় সজ্জিত করা হচ্ছে। কারখানায় নিয়মিত উৎপাদন কাজের সঙ্গে চলছে পুনর্বাসন কর্মযজ্ঞ। ইতোমধ্যে ২১টি কোচের মধ্যে ১৪টি কোচের পুনর্বাসন সম্পন্ন হয়েছে। যেগুলো যুক্ত হচ্ছে লালমনিতে। বাকি সাতটি কোচের পুনর্বাসন কাজও চলমান।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে ইরান থেকে কোচগুলো আমদানি করা হয়েছিল। মিটারগেজ লাইনের এসব কোচ দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেন চালানো হতো। পরবর্তীতে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে নতুন কোচ সংযোজন করা হলে এসব পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরিত্যক্ত এসব ইরানি কোচ চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানার ইয়ার্ডে ৫ বছর পড়ে ছিল। দীর্ঘ দিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় কোচগুলোর উপরিকাঠামো নষ্ট হয়ে যায়। গত বছর এসব ইরানি কোচ পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম পাহাড়তলী কারখানার ইয়ার্ড থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে এসব কোচ নতুন করে তৈরী ও রঙ করা হয়।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা সূত্র জানায়, কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থিত উপ-কারখানা জেনারেল হেভি রিপিয়ার সপ, বগি সপ, ক্যারেজ সপ ও পেইন্ট সপে দীর্ঘদিন ধরে চলে কোচগুলোর নতুন রূপে অবকাঠামো সজ্জিতকরণসহ ট্রলি ফিটিংয়ের কাজ। পুনর্বাসন কাজে কোচগুলোতে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে স্টেইনলেস স্টিলের ফ্লোর, অত্যাধুনিক মডেলের আরামদায়ক চেয়ার (আসন), মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা। এর মধ্যে একটি এয়ার কন্ডিশন (এসি) চেয়ার ও একটি এসি বার্থ কোচ রয়েছে।
সূত্র মতে, বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা একটি মিটার গেজ যাত্রীবাহী কোচের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। অথচ সৈয়দপুর রেল কারখানায় পরিত্যক্ত একেকটি কোচ পুনর্বাসনে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৮০ লাখ টাকা। এতে করে কোচ প্রতি রেলওয়ের সাশ্রয় হচ্ছে চার কোটি ২০ লাখ টাকা। ২১টি কোচ পুনর্বাসন সরকারের সাশ্রয় হবে ৮৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
রেলপথে দেশের সবচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রমকারী ট্রেন লালমনি এক্সপ্রেস। ঈদকে সামনে রেখে নতুন কোচে এই ট্রেন চালু হচ্ছে জেনে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা দারুন খুশি। রেলওয়ে ফ্যান ফেসবুকগ্রæপে ইতোমধ্যে এ নিয়ে লেখালেখি চলছে। তাতে দেখা যায়, সাদা কোচের লালমনি এক্সপ্রেস পেয়ে অনেকেই উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন। একই সাথে এবারই প্রথম লালমনিরহাট-ঢাকা রেলপথে ঈদ স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৮৯৯-১৯০০ সালের দিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় কার্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে উত্তরাঞ্চলের ৭টি রুটে ট্রেন পরিচালনা করে আসছে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে দফতর। এরমধ্যে নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর থেকে বিদেশ থেকে আমদানী করা লাল-সবুজ ট্রেন চলাচল করলেও লালমনিরহাট থেকে লক্কর-ঝক্কর কোচে চলছিল ‘লালমনি এক্সপ্রেস’। ঈদকে সামনে রেখে সেই ট্রেনে নতুন সাদা কোচ যুক্ত হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ