Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

‘বন্দুকযুদ্ধ’ গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত -ড. ইফতেখারুজ্জামান

| প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : মাদক বিরোধী অভিযানের নামে বন্দুকযুদ্ধকে দেশের ন্যায় বিচার, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে অভিহিত করেছে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক বিবৃতিতে দেশব্যাপী চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে শতাধিক কথিত ‘মাদকব্যবসায়ী’ নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হতাহতের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে এসব ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি, মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ যেভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে, তাতে নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের সুরক্ষা নিয়ে আশংকার কথা জানানো হয়েছে। অন্যদিকে আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীতে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগসহ আইনের লঙ্ঘনের সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছে টিআইবি।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধান সব নাগরিককে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার দিয়েছে। কথিত ‘গোয়েšদা তথ্যের’ ভিত্তিতে তৈরি করা তালিকা ধরে মাদকবিরোধী যে অভিযান চলছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তা আইনগতভাবে কতটা গ্রহণযোগ্য সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পাশাপাশি, প্রচলিত বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যেভাবে ‘তালিকা’ ভুক্তরা নিহত হচ্ছেন, তা পুরোপুরি অসাংবিধানিক। ‘আত্মরক্ষার’ জন্য ‘পাল্টা গুলি চালানোর’ কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তার সত্যতা নিরূপণে কোন আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা আমাদের জানা নেই।
ক্ষেত্র বিশেষে অনেকেই প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে মাঠপর্যায়ে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ও সেবনকারী চুনোপুটিরাই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ শিকার হচ্ছেন। মাদক সমস্যার স্থায়ী সমাধানে যারা অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যদাতা হতে পারতেন। ফলে একদিকে যেমন প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের সম্ভাবনা নস্যাৎ হচ্ছে, অন্যদিকে মাদক ব্যবসার মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। বরং, অভিযুক্তদের দেশের বিদ্যমান আইন ও বিচার ব্যবস্থা অনুসরণ করে বিশেষ করে মাদক সরবরাহ চেইনের রুই-কাতলাদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। এজন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও নিষ্ঠার সাথে আইনের যথাযথ প্রয়োগই যথেষ্ট, আইনের লঙ্ঘন নয়।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সারাবিশে^ কোথাও, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ মাদক নিয়ন্ত্রণে বা অন্যকোন অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর কোনো পদ্ধতি বলে প্রমাণিত হয়নি। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে, আইনকে পাশ কাটিয়ে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের সংস্কৃতি যেভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে, তা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারে। একই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় যেভাবে আইনের লঙ্ঘনকে অনানুষ্ঠানিক বৈধতা দেওয়া হচ্ছে তা দেশের ন্যায় বিচার, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত।##

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ