Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

এসএসসি-দাখিল পরীক্ষায় ফল পরিবর্তন ৪৮৯৭ জনের ফেল থেকে পাস ৭৪১, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩১ জন

| প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : খাতা চ্যালেঞ্জ করে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল পরিবর্তন হয়েছে ৪ হাজার ৮৯৭ জনের। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস হয়েছে ৭৪১জন। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩১ জন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সারাদেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি, দাখিল ও সমমান ফল পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে অনেকে শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যার পাশপাাশি ফেল থেকে পাসের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ফেল থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার শিক্ষার্থীও রয়েছে। গতকাল বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বোর্ডগুলোর প্রাপ্ত তথ্য মতে, চলতি বছর ১০টি শিক্ষাবোর্ডে ২ লাখ ১১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ৪ লাখ ১৪ হাজার ৫১৬টি পত্রের প্রাপ্ত নম্বর পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেন। এতে মধ্যে থেকে ৪৮৯৭ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩১ জন, ফেল করেছিল খাতা চ্যালেঞ্জ করে পাস করেছে ৭৪১ জন। বাকীদের বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাতার দেখার শিক্ষকদের অনিহা, অবহেলা বাড়ার কারণে প্রতি বছর খাতা চ্যালেঞ্জ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় খাতা চ্যালেঞ্জ করার পরিমাণ বাড়ালেও এবার ফল পরিবর্তনের সংখ্যা কমেছে। এজন্য এবার মডেল পদ্ধতিতে খাতা দেখায় ভুলের পরিমাণ কমেছে। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, পরীক্ষকদের মধ্যে খাতা দেখার আগ্রহ ও পদ্ধতি দুটি পরিবর্তন হয়েছে। গত দুই বছর ধরে মডেল পদ্ধতিতে খাতা দেখা এবং পরীক্ষদের খাতা প্রধান পরীক্ষকরা পুনরায় দেখার বাধ্যবাধকতা কারণে খাতায় ভুলের পরিমাণ কমেছে। তিনি বলেন, খাতায় যে চারটি ভুলের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হতো এবার সেই জায়গা হাত দেয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে খাতা দেখায় শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করেন তিনি। বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে এসএসসি ও সমমানের পুনঃনিরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে ঢাকা বোর্ডে মোট এক হাজার ৯৯০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১৯২জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯৫ জন। বাকীরা বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে মোট ৫২৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফল থেকে পাস করেছে ৫১জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮ জন। রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে মোট ৪৭৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফল থেকে পাস করেছে ৭২জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০৬ জন। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে মোট ৪৪২ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফল থেকে পাস করেছে ৮৮ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৮ জন। সিলেট শিক্ষাবোর্ডে মোট ২৬০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফল থেকে পাস করেছে ৪১জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮০জন। বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে মোট ১৪০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফল থেকে পাস করেছে ১৭ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১জন। দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে মোট ৩১৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফল থেকে পাস করেছে ৬৩জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯জন। যশোর শিক্ষাবোর্ডে মোট ২০৫জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফল থেকে পাস করেছে ৭১জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৭ জন। মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে মোট ২৪৮ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফল থেকে পাস করেছে ১০১ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ জন। আর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে মোট ২৯৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে এরমধ্যে ফল থেকে পাস করেছে ৪৫জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫জন। যাদের ফলাফল পরবর্তন হয়েছে তারা রেজাল্ট বাড়ার কারণে পুনরায় আবেদন করা দরকার নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, যাদের রেজাল্ট পরিবর্তন হয়েছে তাদের প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী কলেজের ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে আগের রেজাল্টের কারণে কোন শিক্ষার্থী যদি কোন কলেজে আবেদন করতে না পারেন তিনি ইচ্ছে করলে নতুন রেজাল্ট দিয়ে নতুন করে আবেদন করতে পারবেন। এজন্য ৫ ও ৬ জুন আবেদন থেকে নতুন করে কোন কলেজ যোগ করতে চাইলে সেটি করতে পারবে। বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, পুননিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কী না, এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়েছে বলে বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তার মানে কোন শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ণ হয় না। এতেই এত শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এটি রীতিমত তুঘলকি কাÐ আখ্যায়িত করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্ন পদ্ধতি ও খাতার দেখার নানা ত্রæটির কারণে দিন দিন ফল চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা বাড়ছে। এতে প্রতি বছর জনগণের টাকা গচ্চা যাচ্ছে।
জেএসসি ও জেডিসিতে ২০০ নম্বর কমছে
জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় তিনটি করে বিষয়ের পাশাপাশি নম্বর ২০০ কমিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেএসসি-জেডিসিতে এতদিন বাংলা ও ইংরেজির দুটি করে পত্রে ১৫০ করে নম্বরের পরীক্ষা হত। এখন বাংলা ও ইংরেজিতে আর আলাদা পত্র থাকবে না। একেকটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এছাড়া জেএসসি-জেডিসির চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন জানিয়েছেন। অষ্টম শ্রেণির সমাপনী এই পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হত শিক্ষার্থীদের। এখন বাংলা ও ইংরেজির দুটি এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা আর দিতে হবে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহবার বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর থেকে চাপ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেএসসিতে এখন ৮৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৬৫০ নম্বর এবং জেডিসিতে ১০৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষায় বসতে হবে শিক্ষার্থীদের।
তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের উপর লেখাপড়ায় চাপ দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় বিষয় ও নম্বর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এখানে শিখন ফলাফল অক্ষুণœ রেখে নম্বর এবং বিষয় কমানো হয়েছে, যাতে একজন শিক্ষার্থী সঠিক শিক্ষাটা আয়ত্ব করতে পারে। শিক্ষার লক্ষ্য যেন ব্যাহত না হয়। বিভিন্ন বোর্ড চেয়ারম্যানদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিষয় এবং নম্বর কমানো হয়েছে। সে অনুযায়ী সিলেবাসও তৈরি করা হবে। যেহেতু বিষয় এবং নম্বর কমানো হয়েছে তাই শিক্ষার্থীদের উপর এর কোনো চাপ পড়বে না। শিক্ষাসচিব বলেন, ২০১৯ সালে আমরা কারিকুলামে হাত দেবো। তখন আরও বড় আকারে বিষয় কমবে। কারণ তখন আমরা সবকিছু ভাবনা চিন্তায় রেখেই কারিকুলাম করবো। যাতে শিক্ষার্থীরা চাপে না পড়ে।
চলতি বছরে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এমসিকিউ থাকবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষাসচিব বলেন, হঠাৎ করে এমসিকিউ বাদ দেয়া যাবে না। তবে আমরা সিস্টেমে পরিবর্তন আনবো। হয়তো শিক্ষার্থীদের এমসিকিউ এর উত্তর এক লাইনে লিখতে হতে পারে।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান, বুয়েটের সাবেক শিক্ষক ইনামুল হক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক ছাড়াও এনসিসিসির সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ