Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একরামসহ সব হত্যার নির্বাহী তদন্ত হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জোসেফের সাজা মওকুফ করেছেন প্রেসিডেন্ট

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৮, ১:৫১ এএম

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তোফায়েল আহমেদ জোসেফের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজা মওকুফ করে প্রেসিডেন্ট তাকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছেন। গোপনে কারামুক্ত হয়ে সন্ত্রাসী জোসেফ ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য জানাননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স বøুুম বার্নিকাটের সঙ্গে সাক্ষাতের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। সন্ত্রাসী জোসেফ এখন কোথায়? এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জোসেফের যে প্রসঙ্গটা.., তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছিল। তিনি অলরেডি ২০ বছর কারাভোগ করেছেন। ২০ বছর কারাভোগের পরই তিনি ডিউ প্রসেসে, যেভাবে প্রসেস হয় সেভাবে আবেদন করেছেন। সেই আবেদনটি প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত যাচ্ছে। একজন সাংবাদিক বলেন, জোসেফ ভারতে চলে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ইন্ডিয়াতে চলে গেছে আপনি দেখেছেন নাকি? ওই সাংবাদিক তখন বলেন, আমি দেখিনি। সাংবাদিকেরা আরও স্পষ্ট করে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি (জোসেফ) আবেদন করেছিলেন ভয়ানক অসুস্থ, এক বছর না দেড় বছর বাকি ছিল (সাজা), এক বছর কয়েক মাস। সেটার জন্য তিনি মার্সি পিটিশন করেছিলেন, সেই মার্সি পিটিশন খুব সম্ভব প্রেসিডেন্ট অনুমোদন করেছেন, এক বছর কয়েক দিন, তার কিছু অর্থদন্ডও ছিল। সেগুলো আদায় সাপেক্ষে তাকে বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা করার পারমিশন দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। এটুকু আমি জানি, এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জোসেফ। সেখান থেকেই মুক্তি পান বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কক্সবাজারের টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হকসহ দেশব্যাপী মাদক অভিযানে সব হত্যার তদন্ত হবে। যেখানে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে, সেখানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করে দেখবেন গান ফায়ারটি সঠিক ছিল কিনা। এই দেশে সেই ব্যবস্থা রয়েছে। যদি অন্যায়ভাবে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্ত অনুযায়ী সেই ব্যবস্থাও হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে মাদক নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সেটা সম্পর্কে তিনি (রাষ্ট্রদূত) বলেছেন ঠিকই আছে, তিনিও প্রশংসা করেছেন। তিনি তার উদ্বেগের কথা বলেছেন যে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারা যাচ্ছে, নিহত হচ্ছে। সে বিষয়ে তিনি কথাবার্তা বলেছেন। আমরা জানিয়েছি, এদেশ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস আমরা যেভাবে কন্ট্রোল করেছি এদেশের জনগণকে নিয়ে...আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন মাদক যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, সেটা যদি আমরা বন্ধ করতে না পারি তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ হারিয়ে যাবে। তিনি সবই স্বীকার করেছেন। আসাদ্জ্জুামান খান বলেন, তিনি হত্যাকান্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন, আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি- মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি এবং সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রথমে আমাদের গোয়েন্দারা লিস্ট তৈরি করেছে- কারা কারা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত, কারা কারা মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত। কারা সহযোগিতা করছে। আমরা একটি নয়, পাঁচটি সংস্থার মাধ্যমে এই তালিকাটি তৈরি করেছি, তালিকায় যে সব নামগুলো কমন সেই নামগুলো নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। পাশাপাশি আমাদের এনজিওরা, জনপ্রতিনিধিরা, শিক্ষক-ছাত্র-জনতা, পেশাজীবী সবাই এই যুদ্ধে শরীক হয়েছে। প্রচার-প্রচারণাও আমরা চালাচ্ছি।
তিনি বলেন, মাদক বন্ধে ভারত আমাদের সহযোগিতা করছে। কিন্তু ইয়াবা প্রতিরোধের জন্য মিয়ানমার আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না সেটাও আমরা জানিয়েছি। সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, কোনো ক্রসফায়ার আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী করে না।আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কি করছে- লিস্ট নিয়ে, কমন লিস্টে যাদের নাম আছে তাদের বাড়িতে গিয়ে বা তাদের ধরে আইনের আওতায় আনার জন্য খুঁজে বেরাচ্ছে। যারা সারেন্ডার করছে তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিংবা রেগুলার কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যারা নির্দোষ তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, যারা সারেন্ডার করতে অস্বীকার করছে যারা চ্যালেঞ্জ করছে, যারা ফায়ার ওপেন করছে, আত্মরক্ষার্থে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীও গান ফায়ার করছে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের পর ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ হাজারের বেশি কারাবন্দি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা অনেকেই জানেন না। শুধু আপনারা দেখছেন নিহত হচ্ছে, এর পাশাপাশি কিন্তু একটা বিরাট সংখ্যক লোক কারান্তরীণ রয়েছেন। দেশের কারাগারগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার হলেও কারাবন্দি রয়েছেন ৮৫ হাজার। বিশাল সংখ্যক কারাবন্দি একটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, তিনি (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) জানতে চেয়েছেন কত মানুষ অভিযুক্ত হয়েছে। আমরা তাকে পুরো পিকচার দিয়েছি। আমরা কি করছি তা জানিয়েছি। তিনি সবকিছু অ্যাপ্রিসিয়েট করেছেন। বলেছেন, মাদকের বিস্তার বন্ধ করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা নিহত হচ্ছে তাদের বিষয়ে আরেকটু সতর্ক হওয়া যায় কিনা তিনি (বার্নিকাট) বলেছেন। এই অবৈধ ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র- সেখানে কেউ খালি হাতে গেলে ভালোভাবে ফিরে আসবে না, এটাই স্বাভাবিক। এজন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি হয়ে যায়। সে জন্যই বন্দুকযুদ্ধ হয়। হত্যা করার কোন উদ্দেশ্য আমাদের নেই। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য এসব প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। অনেককে আগে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমরা একজনকেও পিক করিনি। যারা বলেছে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেগুলোর একটার প্রমাণও পাওয়া যায়নি। অভিযান কত দিন চলবে জানতে চাইলে মন্ত্রী আবারও বলেন, এই যুদ্ধ ততদিন পর্যন্ত চলবে যতদিন পর্যন্ত আমরা এগুলো কন্ট্রোলে আনতে না পারব। অন্যদিকে বৈঠকের পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কার্যকর পন্থা নয়। মাদক বিরোধী অভিযানে মৃতের সংখ্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। নিয়ম মেনে সবার বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ