Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মিঠা পাহাড়ে বিন্না ঘাস

চট্টগ্রামে চারা রোপণ করে প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন থাইরাজ কন্যা

| প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 

রফিকুল ইসলাম সেলিম : পাহাড় ধস ঠেকাবে ঘাস! তাতে বাঁচবে পাহাড়। ঘটবে না পাহাড় ধসে বেঘোরে মৃত্যুর ঘটনা। এই ঘাসের নাম বিন্না। কেউ বলেন এটি জাদুর ঘাস। থাইল্যান্ডের রাজকন্যা মহাচক্রী সিরিনধর নিজহাতে এই ঘাস লাগালেন। গতকাল (বুধবার) চট্টগ্রাম নগরীর টাইগার পাসের বাটালি হিল মিঠা পাহাড়ের পাদদেশে লাগানো হয় ঘাস। বাটালি হিলের পর নগরীর ক্ষয়প্রবণ বা ধসের আশঙ্কা আছে এমন পাহাড়ে লাগানো হবে এই ঘাস। দ্রæত বর্ধনশীল এই ঘাস লাগিয়ে থাইল্যান্ডে পাহাড় ধস ঠেকানো গেছে। এই ঘাসের উদ্ভাবক বাংলাদেশেরই এক কৃতী সন্তান। থাইরাজকন্যা পরে বাটালি হিলে ‘বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড ভেটিভার গ্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এর আওতায় ‘ভেটিভার সেন্টার’ এর উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাতে বিন্না ঘাসের চারা তুলে দেন। তিনি ভেটিভার সেন্টারে একটি গাছের চারা রোপণ করেন এবং প্রকল্পের কাজ ঘুরে দেখেন। দ্রæত বর্ধনশীল ও জলবায়ু সহিষ্ণু বিন্না ঘাস লাগিয়ে ভূমিক্ষয় ও পাহাড় ধসের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টায় নেয়া হয় এ প্রকল্প।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এ দেশের মানুষকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড় ধস হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ এর প্রভাব ভোগ করছে। পাহাড় ধস রোধে বিন্না ঘাস লাগানোর এই প্রকল্পে সহায়তা করায় থাই রাজকুমারীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। থাইল্যান্ডের রয়্যাল চাই পাত্তানা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পে কাজ করবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ প্রকল্পের জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ারও ঘোষণা দেন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর পাহাড় ঘেরা। প্রায় প্রতিবছরই নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। ২০০৭ সালে পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে একদিনে ১২৮ জনের প্রাণহানি হয়। আমরা চাই পাহাড় রক্ষা করতে। পাশাপাশি আমাদের মানুষের জীবন বাঁচাতে। সেই লক্ষ্যেই পাহাড় ক্ষয় রোধে বিন্না ঘাস লাগানোর এই প্রকল্প আমরা প্রহণ করেছি। মেয়র বলেন, আমাদের দেশের কৃতী সন্তান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম এই ঘাসের উদ্ভাবক। পাহাড়ের ক্ষয়রোধ কল্পে উদ্ভাবিত বিন্নাঘাস বা জাদুর ঘাস থাইল্যান্ডে সাফল্য আনার পর বাংলাদেশের চট্টগ্রামেই প্রথম ভেটিভার গ্রাস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপিত হলো।
বাংলাদেশে নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত পানপিমন সুবান্নাপংসে বলেন, ভারি বর্ষণে পাহাড় ধস রোধে থাই দূতাবাসের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য চাই পাত্তানা ফাউন্ডেশনকে অনুরোধ জানানো হয়। চট্টগ্রামের মানুষের উপকারের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন ও প্রশিক্ষণে আমরা কাজ করব। অন্যদের মধ্যে চাই পাত্তানা ফাউন্ডেশনের সুমেট তান্তিভেজকুল ও এ প্রকল্পের কারিগরি সহায়তায় থাকা বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামও বক্তব্য রাখেন। অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে যা বিন্না ঘাস, বিদেশে এর নাম ভেটিভার। বিশ্বের শতাধিক দেশে নদী তীর ও বাঁধ রক্ষা এবং পাহাড়ে ভূমিক্ষয় ঠেকাতে এ ঘাস ব্যবহার করা হচ্ছে। চার থেকে ছয় মাসেই এ ঘাসের শেকড় মাটির ছয় থেকে দশ ফুট গভীরে ছড়িয়ে পড়ে। এর শেকড়ের সহনশক্তি ইস্পাতের ছয় ভাগের এক ভাগ। প্রতিকূল পরিবেশে সহজেই মানিয়ে নেওয়ার এবং টিকে থাকার ক্ষমতা আছে এই ঘাসের।
অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম জানান, তারা ইতোমধ্যে কয়েকটি পাহাড় থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছেন পরীক্ষা করার জন্য। শুরুতে একটি পাহাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই ঘাস লাগানো হবে। এর ফলাফল দেখে বাকি পাহাড়গুলোতে বিন্না ঘাস লাগানো হবে। ভেটিভার প্রকল্পের পরিচালক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী বিপ্লব দাশ জানান, টাইগার পাসের ভেটিভার সেন্টারে পাইলট প্রকল্পের আওতায় বিন্না ঘাস লাগানো হবে। এরপর চাই পাত্তানা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় নগরীর ক্ষয়প্রবণ পাহাড়গুলোতে এস ঘাস লাগানো হবে।



বন্দুকযুদ্ধে কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত
কক্সবাজারে থমকে গেছে চলমান মাদকবিরোধী অভিযান!
কক্সবাজার ব্যুরো : চলমান মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ করে ইয়াবা গডফাদার ও ব্যবসায়ীরা পার পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফের তিনবারের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক নিহতের ঘটনায় পুরো কক্সবাজারে থমকে গেছে চলমান মাদকবিরোধী অভিযান। শুরু থেকেই মাদকবিরোধী হিসেবে পরিচিত হলেও ভুল তথ্য বা অদৃশ্য কোনো কারণে একরাম হত্যার শিকার হয়েছেন এমন দাবিতে চরম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে পুরো জেলায়। এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র, জেলা যুবলীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। গত রোববার রাতে লেখা এই চিঠিতে একরামুল হককে একজন ত্যাগী নেতা ও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সঙ্গী হিসেবে বর্ণনা করেন মেয়র মাহবুবুর রহমান। গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের নোয়াখালিয়াপাড়ায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন টেকনাফ পৌরসভার তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর একরামুল হক। তিনি টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী পাড়ার মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে। এছাড়াও তিনি টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের ১৩ বছর দায়িত্বপালনকারী সাবেক সভাপতি, টেকনাফ বাস স্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও টেকনাফ মাইক্রো শ্রমিক ইউনিয়নের আহŸায়ক ছিলেন। একরামের জানায়ায় উপস্থিত হাজারো জনতা কথিত বন্দুকযুদ্ধে একরাম নিহত হওয়ার স্বরব প্রতিবাদ জানিয়েছে।
অপরদিকে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হবার ঘটনায় র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে ই-মেইলে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে মোজাহার মিয়া ওরফে আবদুস সাত্তার। বাড়ি টেকনাফ পৌরসভার নাজিরপাড়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী, শীর্ষ গডফাদার, তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মাদক আইনে মামলা রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। কিন্তু একরামের ভাই এহসানুল হক বাহাদুর জানান, তাদের বাবার নাম মোজাহার মিয়া নয়। টেকনাফ পৌর এলাকায় নাজিরপাড়া নামে কোনো এলাকাও নেই। একরাম কোনো সময় ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে মামলাও নেই। তিনি আরও বলেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকের কিছু লোক শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার ভাইকে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় তারা বলেছিল, জমি বিক্রির ব্যাপারে তারা একরামুলের সঙ্গে কথা বলতে চায়। কিন্তু পরে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাই। এলাকাবাসী জানায়, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে নাজিরপাড়া নামে একটি গ্রাম রয়েছে। যা পৌর এলাকা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। ওই গ্রামে মোজাহার মিয়া নামে এক ব্যক্তির তিন ছেলে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী। একই এলাকায় একরামুল নামে আরও এক ব্যক্তি রয়েছে, যার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ এবং তার নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য তালিকায় রয়েছে। একরামের স্ত্রী আয়েশা খাতুন বলেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব তার স্বামীকে হত্যা করেছে। এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেন তিনি।
টেকনাফ থানা পুলিশের ওসি রণজিত কুমার বড়ুয়া জানান, নিহত পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দুটি মামলা ছিল। যার একটি মারামারির। অপরটি মাদক আইনে। মারামারির মামলাটি আদালতে শেষ হয়েছে। মাদকের মামলায় তার সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এদিকে, একরাম নিহত হবার পর কক্সবাজার জেলাব্যাপী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন ক্ষোভ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ