পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ভ্যাটের সবচেয়ে নিচের সিলিং প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছর থেকে ভ্যাটের একাধিক হারের পরিবর্তে দ্বৈত হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর একটি হার হবে সাড়ে সাত শতাংশ এবং অন্যটি হবে ১০ শতাংশ। বর্তমানে তিন ধরনের ভ্যাটের সিলিং র্নিধারিত রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-১৫ শতাংশ, চার শতাংশ এবং প্যাকেজ ভ্যাট পদ্ধতি। এছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানকে আবার তিন শতাংশ হারেও ভ্যাট দিতে হয়।
আগামী অর্থবছরে বিভিন্ন স্তরে ভ্যাটের হার বিলোপ করে দুই স্তরের ভ্যাটের হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী ৭ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশের দিন এ প্রস্তাব দেবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নতুন ভ্যাট হার কার্যকর হলে এখন যে পরিমাণ পণ্যের ওপর তিন ও চার শতাংশ ভ্যাট রয়েছে তা বেড়ে সাড়ে সাত শতাংশ হবে। এর আওতায় প্যাকেটজাত খাদ্য পণ্যও রয়েছে। ভ্যাটের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে একদিকে যেমন পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে, অন্যদিকে সরকারও এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে। যে কয়েকটি খাতের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর রয়েছে আগামী অর্থবছর থেকে তা পাঁচ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এক কোটি টাকার বেশি বার্ষিক টার্নওভারযুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হয় দেড় শতাংশ হারে, কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয় তিন শতাংশ হারে। কারো কারো জন্য এ ভ্যাট পাঁচ শতাংশ, কাউকে দিতে হচ্ছে ছয় শতাংশ, আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে ১০ শতাংশ হারেও ভ্যাট দিতে হচ্ছে। ২৪ ধরনের সেবায় ভ্যাট দিতে হয় ১৫ শতাংশ হারে।
প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ছোট ছোট দোকান বছরে ১৪ হাজার টাকা ভ্যাট দিচ্ছে। দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার ছোট ছোট দোকান বছরে ১০ হাজার টাকা। জেলা শহরের পৌর এলাকায় অবস্থিত ছোট ছোট দোকান বছরে সাত হাজার ২০০ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার ছোট ছোট দোকান বছরে তিন হাজার ৬০০ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে। কোন কোন দোকান প্যাকেজ ভ্যাট দেবে তা স্থানীয় দোকান মালিক সমিতির নেতারা এবং স্থানীয় ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তারা মিলে অর্থবছরে শুরুতে নির্ধারণ করেন।
এদিকে, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে গত ১২ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির ৩৯তম বৈঠকে ভ্যাটের ওপর একগুচ্ছ প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে মূসক বা ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ। যা অন্যান্য দেশগুলোর প্রচলিত ভ্যাটের হারের তুলনায় অত্যাধিক। এতে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের মূল্য বাড়ছে এবং মূসক প্রদান নিরুৎসায়িত হচ্ছে। তাই বর্তমানে মূসকের হার কমিয়ে ১০ শতাংশের নিচে নির্ধারণ করলে মূসক আইন পরিপালনসহ রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। সূত্র মতে, মালয়েশিয়া ও জাপানে ভ্যাটের হার আট শতাংশ, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে সাত শতাংশ এবং ভিয়েতনাম ও অস্ট্রেলিয়ায় ১০ শতাংশ।
এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশেষত মূসকের একক হারের পরিবর্তে একাধিক হারের প্রবর্তন করলে মূসক আইন প্রতিপালন ও রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
দেশের সব শ্রেণির ব্যবসায়ীদের প্রবল আপত্তির মধ্যেও গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করার লক্ষ্যে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য বাজেট সংসদে প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর থেকে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা আসবে বলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার মুখে সংসদে ভ্যাট আইন কার্যকর দুই বছর পিছিয়ে দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই প্রেক্ষাপটে ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ করা থেকে পিছিয়ে আসেন অর্থমন্ত্রী। মূলত আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয় সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা গেলে হলে চলতি অর্থবছরেই অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হতো।
কিন্তু ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত না হওয়ায় চলতি অর্থবছরে রাজস্ব খাতে ব্যাপক কাটছাঁট করা হয়েছে। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে তাও আদায় হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।