Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গডফাদাররা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসছে

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


বিশেষ সংবাদদাতা : দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলেও গ্রেফতার ও মাদক উদ্ধার অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে বরিশাল মহানগরীতে এ অভিযানে এখনো উল্লেখযোগ্য সফলতা না এলেও ৭২ জন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি ৫৮টি মামলা দায়েরের কথা জানিয়েছে মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ। নগরীর মাদক ব্যবসায়ীরা কিছুটা গা ঢাকা দিলেও এদের অনেকে পর্দার অন্তরালে সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠলেও বিএমপি’র দায়িত্বশীল সূত্রের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সা¤প্রতিককালে বরিশাল মহানগরীতে ছিচকে মাস্তান ও উঠতি মাস্তানদের তৎপড়তা সহ প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে সামাজিক অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পেলেও তা প্রতিরোধে কঠোর কোন পদক্ষেপও অনুপস্থিত।
এমনকি স¤প্রতি বরিশাল মহানগরীতে কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় জনমনে যথেষ্ট ভীতি ছড়ালেও মাত্র একজন ডাকাতকে গ্রেফতার করে কথিত বন্দুক যুদ্ধে হবার কৃতিত্ব রয়েছে বিএমপি’র। তবে গত ২০মে রাত আড়ইটার দিকে নগরীর উত্তর প্রান্তে ডিবি পুলিশের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে যখন ডাকাত সরদার আবুল কাশেম নিহত হয়, ঠিক তখনই নগরীর সিএন্ডবি রোডের এক নম্বর পুলের কাছে সাবেক সিটি কাউন্সিলর নোমানের বাড়ীতে আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর থেকে মাত্র ৫শ’ মিটার দূরে নোমানের বাসায় হানা দিয়ে ডাকাত দল নগদ ৫ লাখ টাকা ছাড়াও বিপুল পরিমান স্বর্ণালঙ্কারও লুট করে নিয়ে যায়। ঐ ঘটনায় এখনো কাউকে আটকের কথা জানায়নি পুলিশ।
তবে রমজানের শুরু থেকে সরকারের নির্দেশে মাদক বিরোধী অভিযানে বরিশাল মহানগর পুলিশ গতকাল পর্যন্ত আড়াই সহ¯্রাধিক ইয়াবা ছাড়াও সাড় ১২ কেজি গাজা এবং সাড়ে ৭শ’ এমএল দেশী মদ আটকের কথা জানিয়েছে। এসময় মাদক আইনে ৫৮টি মামলা দায়েরের কথাও বলেছে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র। তবে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনকারী ও পর্দার অন্তরালে থাকা এ ব্যবসার আশ্রয় প্রশ্রয়দানকারীদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এসব বিষয়ে গতকাল ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনারের সাথে টেলিফোনে আলাপ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা জানিয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি।
তবে পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ৬টি জেলাতে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে বেশ কিছু সফলতা এসেছে। গতকাল পর্যন্ত দশদিনে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলার ৪১টি থানায় মাদক আইনে প্রায় সাড়ে ৪শ’ জনকে গ্রেপ্তার ছাড়াও সাড়ে ৩শ’র মত মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এসময় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পিস ইয়াবা ছাড়াও আড়াই কেজি গাজা, সাড়ে ৩ কেজি গাজার গাছ, ২৫ বোতলের মত ফেনসিডিল এবং ২৫ ক্যান বিদেশী বিয়ার ছাড়াও প্রায় ৫শ’ লিটার দেশী মদ আটক করেছে বিভিন্ন থানা পুলিশ।
মাদক আইনে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পটুয়াখালীতে ১২২, ভোলাতে ৮৬, বরিশালে ৭৯, পিরোজপুরে ৬৭, বরগুনাতে ৪৫ এবং ঝালকাঠীতে ৩৬ জন রয়েছে বলে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। মাদক বিরোধী এ অভিযানে গতকাল (সোমবার) পিরোজপুরে একজন নিহত হয়েছে।
তবে ‘মাদক বিরোধী এ অভিযানে পেছনের মূল শক্তি কেন ধরা পড়ছে না’ এমন প্রশ্নে জবাবে ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আইনে কারো জিম্মায় মাদক না থাকলে তাকে মাদক আইনে গ্রেফতারের সুযোগ নেই। এ ব্যবসার গডফাদাররা নিজের জিম্মায় রেখে কখনো মাদক ব্যবসা করেনা বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইনের কারণে কিছুটা আটকে আছি’। তার পরেও অন্য মামলাতেও অনেককে আটক করার কথা জানান তিনি। মাদক ব্যবসার সাথে পুলিশের কতিপয় সদস্যর সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিআইজি জানান, ‘কাউকে কোনভাবে ছাড় দেয়া হবে না, কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পেলে শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা নয়, আমরা নিয়মিত ফৌজদারী মামলা রুজু করার কথাও জানান তিনি।
ডিআইজি শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি বরিশাল রেঞ্জে যোগ দেয়ার পর প্রথম থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি মাদক বিক্রেতা ও সেবীদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে এধরনের দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ও যুবককে মাদকের মরণ ছোবল থেকে সহজ সরল পথে ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়ে তাদের পুনর্বাসনেও নানা উদ্যোগের কথা জানান ডিআইজি।
তবে এসব কিছু ছাড়াও চলমান অভিযানের পরেও মাদক ব্যবহার ও এর ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ করা না গেলেও অভিযান অব্যাহত থাকার কথা জানান ডিআইজি।
তবে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে সফলতা আনতে হলে এর মূল শেকড় উপড়ে ফেলার তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল। সাম্প্রতিককালে ছাত্র ও যুব সমাজের মধ্যে ইয়াবা ও গাজার ব্যবহার মারাত্মকভাবে বিস্তার লাভ করায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহলও। এমনকি বরিশালে অনেক স্কুলগামী ছাত্ররাও প্রকাশ্যে পথে প্রান্তে ধুমপান করছে। আর এ নগরীতে অনেক দোকানে গাজা মিশ্রিত সিগারেট অবাধে বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু ২০০৮ সালের অক্টোবরে মাত্র ২৫ জনবলের বরিশাল কোতয়ালী থানার মেট্রোপলিটন পুলিশের জনবল এখন দু হাজার হলেও সার্বিক আইন-শৃংখলা নিয়ে স্বস্তিতে নেই সাধারন মানুষ। ইভটিজিং থেকে শুরু করে পাড়ায় মহল্লায়, পার্কে সর্বত্রই বখাটে আর নিরব মাদকসেবীদের উৎপাতে নাকাল সাধারন মানুষ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ