Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নোয়াখালীতে গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


নোয়াখালী থেকে বিশেষ সংবাদদাতা : পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে নোয়াখালী জেলা শহরে বাংলা মদ, মৃত সঞ্জীবনী সুরা, গাঁজা, আফিম কিংবা প্যাথেড্রিন ইনজেকশন ব্যবহার চলত অতি গোপনে । সত্তর দশক থেকে ভারতীয় কফ সিরাপ, নেশা জাতীয ট্যাবলেট, বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ এবং শেষতক ফেনসিডিল ছিল নেশাখোরদের চাহিদার শীর্ষে। পরবর্তীতে হেরোইন, মরফিন ও চরস বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে ভারতীয় ফেনসিডিল এবং মিয়ানমারের ইয়াবা কিশোর যুব সমাজতে ধ্বংশ করে দিচ্ছে। অর্থাৎ ভারত ও মিয়ানমার থেকে আনীত মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ। চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে নোয়াখালীতে সফলতার হার তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। কয়েকদিনের অভিযানে মাত্র ১জন নিহত ও ৬৪ জনকে আটক করা হয় । আটকৃতরা খুচরা মাদক বিক্রেতা, সরবরাহকারী ও মাদকসেবী । অথচ মাদকচক্রের গড ফাদাররা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশী অভিযানে অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে। নোয়াখালীতে তিনটি রুটে মাদকদ্রব্য পাচার হচ্ছে, এগুলো হচ্ছে, কুমিল্লা-আখাউড়া থেকে সড়ক ও রেলপথ, ফেনীর বিস্তীর্ণ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আনীত মাদকদ্রব্য ফেনী-চৌমুহনী সড়কের মাধ্যমে এবং ইয়াবা পাচার হচ্ছে, কক্সবাজার-চটগ্রাম হয়ে সড়ক ও নৌপথে। এক কথায় নোয়াখালী অঞ্চলের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পাড়া মহল্লা এমনকি অলিগলিতে মাদকদ্রব্যে ছেঁয়ে গেছে। একাধিক এনজিও সরেজমিনে তদন্তে জানতে পারে, কিশোর যুবকরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এদের মধ্যে শিক্ষিত অশিক্ষিত দুই শ্রেনী রয়েছে। অপরদিকে মাদকাসক্তদের নিয়ে মহা দূ:শ্চিন্তায় পড়েছে তাদের অভিভাবকগন। মাদকাসক্ত সন্তানের ভবিষ্যত এরং সামজিক লোকলজ্জায় বেশ কয়েকজন অভিভাবক অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে । নোয়াখালীর প্রতিটি জনপদ মাদকের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। এরমধ্যে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এবং সন্মানী প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে ।
নোয়াখালীর ৯টি উপজেলায় মাদকচক্র সক্রিয় রয়েছে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে ডেলিভারীম্যান কিংবা বিভিন্ন উপায়ে নিদ্দিষ্টস্থানে মাদকদ্রব্য পৌছে দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। গোপনীয়তা রক্ষা করে অত্যন্ত সূ-শৃঙ্খলভাবে মাকদদ্রব্য পাচার ও বিপনন চলছে। মাদক বিরোধী অভিযানে নোয়াখালীতে ১জন নিহত ও ৬৪ জনকে আটক করা হয়। গত কয়েক বছর সরকারী একাধিক সংস্থা মাদক গডফাদারদের তালিকা প্রস্তুত করে। কিন্তু চলমান অভিযানে প্রতীয়মান হয়, মাদকের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। এখন যারা আটক হচ্ছে, তাদের অধিকাংশ ছুঁনোপুটি, মাদকাসক্ত এবং সরবাহকারী । জেলার বিভিন্ন পেশার দশজন বিশিষ্টজনের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে মাদক বিরোধী অভিযানে সফলতা মিলবেনা। প্রথমে মাদকদ্রব্য পাচারের রুটগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। বিশেষ করে নোয়াখালী-কুমিল্লা সড়ক ও রেলপথে নজরদারি এবং ফেনী-চৌমুহনী-মাইজদী-সোনাপুর ও লক্ষীপুর সড়ক পথে তল্লাশী অভিযান অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের গড ফাদারদের দমন করা না হলে কোন অভিযানেই সূফলতা মিলবেনা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ