Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫ বছরের জন্য জাতীয় সরকার চান বি. চৌধুরী

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : দেশে যাতে আগামীতে কোনো রাজনৈতিক সংঘাত তৈরি না হয় সে লক্ষ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পাঁচ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিকল্পধারার সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, ওই জাতীয় সরকার দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, জনগণের ভোটের অধিকারে স্থায়ীত্ব দেবে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে সংঘাত করে। আর এর নেতিবাচক ফল ভোগ করে দেশের জনগণ। তাই আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এমন ব্যাক্তিরা দেশের নেতৃত্বে থাকবেন যারা দেশের জন্য, জনগণের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করবেন। গতকাল রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে বিকল্পধারা আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান সরকারের উদ্দেশে বি. চৌধুরী বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আপনি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করবেন, অথবা খুলনা মার্কা নির্বাচন করবেন সেটি হবে না। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আর করতে চাইলেও জনগণ তা করতে দেবে না।
ইফতার মাহফিলে আরো আরো বক্তৃতা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) আবদুল মান্নান প্রমূখ। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, মাহী বি চৌধুরী প্রমূখ।
বি. চৌধুরী বলেন, যুক্তফ্রন্ট জাতীয় নির্বাচনের পর একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। ফ্রন্ট নিশ্চয়তা দিচ্ছে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মেধাবী লোকদের সাথে নিয়ে দেশেকে সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশাল বাজেট দেওয়া হচ্ছে এবং যার জন্য দুর্নীতি সর্বোচ্চ শিখরে। কোনো সরকারি অফিস দুর্নীতি থেকে মুক্ত নয়। তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক নির্যাতন ও নিপীড়ন চলছে এবং গণতন্ত্র নেই। ঢাকায় ২০ ভাগ ভোটারের বসবাস হলেও বিরোধী দলকে সভা সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, বিনা বিচারে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে জেলে আটক রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক হয়রানি করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে। একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একধিক চ্যানেল সরকার নিয়ন্ত্রিত। দেশে আইনের শাসন নেই । নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয় এবং এর সা¤প্রতিক উদাহরণ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। পেশী শক্তি ও অবৈধ অস্ত্রের কারণে গনতান্ত্রিক নির্বাচনের সকল সম্ভাবনার অবসান ঘটেছে।
বি. চৌধুরী বলেন, কালো টাকার জন্য সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সাধারণ মানুষ, ভোটার ও রাজনৈতিক কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নেই। এখন জাতীয় নির্বাচন জনগণের মৌলিক দাবি। কিন্তু তার আগো নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। বি. চৌধুরী নির্বাচনের অনন্ত ১০০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, যাতে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে । তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষ্,া ভোটার ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনে সেনা বাহিনী মোতায়েরেনর দাবি জানান।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ জাতির সামনে যে সংকট, এটি কোনো একক দল বা ব্যক্তির নয়। এ সংকট গোটা জাতির। আমাদের ওপর আজ যে দানব বসে আছে তাকে পরাজিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ভুলে সবাই আসুন এক সাথে কাজ করি। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করি।
সরকারের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বন্ধুকযুদ্ধের সমালোচনা করে ইফতার মাহফিলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, তারা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমাদের টাকায় অস্ত্র কিনে আমাদের জনগণকে বিনাবিচারে হত্যা করছে। অথচ আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি না নিয়ে, কোনো বিচার না করে আমাদের জনগণকে খুন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে আ স ম আবদুর রব বলেন, ক্ষমতা থেকে যেতে তো সবাইকে হবে। তবে আইয়ুব, ইয়াহিয়া খানের মতো চলে যাওয়া কখনো কারো জন্য কাম্য না। আমরা চাই, আপনি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিন। না হলে জনগণের জোয়ারে এমনভাবে বিদায় নিবেন যেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। খালেদা জিয়ার কারাবাসের বিষয়ে জেএসডি সভাপতি বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটকে রাখার ফলাফল কোনোভাবে ভালো হবে না। আমরা চাই আপনি ভালোভাবে বিদায় নিন। কারণ আইয়ুব, ইয়াহিয়া খানের মতো বিদায় নিন, সেটা আমরা চাই না।
নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে যেভাবে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে আসলে এটা একটি মৃত্যুর মিছিল। এখন পর্যন্ত বিনা বিচারে ১১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এমন মৃত্যুর মিছিল পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তিনি বলেন, তারা বলছে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, যে যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ যুদ্ধ হচ্ছে নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ। খালদো জিয়ার মুক্তি দাবি করে নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক বলেন, আমি কোনো দ্বিধা না রেখে বলব বিনা শর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে। তাঁকে এভাবে আটকে রাখার কোনো অধিকার সরকারের নেই। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের আহŸানে সমর্থন জানিয়ে মান্না বলেন, আপনাদের সাথে আমরা এক সাথে যুদ্ধ করব। তারপর আপনারা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন, এরপর আমাদের আর চিনবেন না, এটা হলে আমরা নাই। কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। তাই এ বিষয়টা খোলাখুলি বলে রাখলাম। এটা বিবেচনায় রাখবেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মানুষ যখন ভয় পায়, তখন উল্টাপাল্টা কাজ করতে থাকে। আওয়ামী লীগও একই কাজ করছে। তারা মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিনাবিচারে মানুষ খুন করছে। মাদকের আসল হোতাকে না ধরে যারা পেটের দায়ে মাদক বহন করে তাদের বিনাবিচারে হত্যা করছে। বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে উদ্দেশ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির সঙ্গে অতীতে আপনার যা কিছু হয়েছে সে সব ভুলে যাবেন। একই সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে এক সাথে কাজ করবেন। কারণ ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন রাজনীতি কীভাবে করতে হয়। ##

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ