পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : মাদক বিরোধী ‘যুদ্ধে’ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে থেমে নেই মাদকের কারবার। বড় বড় চালান পাচার হচ্ছে, প্রকাশ্যে চলছে মাদক বিক্রি ও সেবন। গত কয়েক দিনে র্যাব-পুলিশের অভিযানে এই অঞ্চলে বেশ কয়েকজন মাদক বিক্রেতা বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে, কয়েকজন ধরাও পড়েছে। তবে চট্টগ্রামকে ট্রানজিট রুট হিসাবে ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ইয়াবার চালান পাচারকারী রাঘব-বোয়ালদের ধরা যাচ্ছে না। যারা মিয়ানমার থেকে ট্রলারযোগে সরাসরি ইয়াবার চালান নিয়ে আসতেন তারাও হাওয়া। এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে নেপথ্যে নায়কেরা।
মাদকের বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত ‘যুদ্ধে’ এলিট বাহিনী র্যাব এ যাবত আংশিক সাফল্য পেয়েছে। তবে পুলিশের অভিযানকে আইওয়াশ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), সিআইডি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা আগাগোড়াই নির্বিকার রয়েছে। কেননা চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় পুলিশের অভিযানে এক মাদক বিক্রেতা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়া ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য নেই। কিছু মাদকের আখড়ায় বøক রেইড দেয়ার মধ্যেই সীমিত রয়েছে মাদক বিরোধী পুলিশী অভিযান। পুলিশের যেসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় সহযোগীতার অভিযোগ আছে তারাও আছেন বহাল তবিয়তে। ফলে মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে সাধারণ মানুষ খুশি হলেও এর সাফল্য নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অবশ্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ড. এস এম মনির উজ জামান মনে করেন অভিযানের মুখে রাঘব-বোয়ালরা গা-ডাকা দিলেও বেশি দিন আড়ালে থাকতে পারবে না। তাদের পাকড়াও না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম মাদকের ভয়াল আগ্রাসনের শিকার দীর্ঘদিন থেকে। ভারত থেকে আসা ফেনসিডিল-গাঁজাসহ হরেক কফ সিরাপ, মিয়ানমারের ইয়াবাসহ নানারকম দেশি-বিদেশী মাদকে সয়লাব মহানগরী এবং জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল। এখানে হাত বাড়ালে মিলছে নেশা সামগ্রী। প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক। বাড়ছে আসক্তের সংখ্যা। সেই সাথে পরিবার ও সমাজে বাড়ছে অস্থিরতা। নেশার টাকা জোগাড় করতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্তরা। নগরীতে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা এবং খুনসহ ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনায় জড়িতদের বিরাট অংশই নেশায় আসক্ত। মাদকের আগ্রাসন এতটাই ভয়াবহ যে নগরীতে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় দিনে বারটির বেশি মামলা রের্কড হচ্ছে। গেল এপ্রিল মাসে মাদকের মামলা রের্কড হয়েছে ৩৮৩টি। গত বছর মামলা হয় ১০৬১টি। অর্থাৎ দিনে অন্তত ১২টি স্পটে মাদক ধরা পড়ছে।
র্যাবের অভিযানে গেল ১৭ মাসে ৮৫ লাখ ৩০ হাজার ৩৯০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ধরা পড়ে। একই সময়ে ৪৬ হাজার ৭৯৫ বোতল ফেনসিডিল, ৩ হাজার ৪৫৫ বোতল বিদেশী মদ ও বিয়ার, ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০১ লিটার দেশি মদ, ৯৩৪ কেজি ৮৫৫ গ্রাম গাঁজা, ৩৭০ গ্রাম হেরোইন এবং ৭ কেজি ৪২৫ গ্রাম আফিম উদ্ধার হয়। তবে নিরাপদে পাচার হয়ে গেছে আরও কয়েকগুণ বেশি। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। এক একটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাদক সিন্ডিকেট তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নেপথ্যে সরকারি দলের ক্যাডার মাস্তান এবং পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও তাদের মদদ দেয়।
এই প্রেক্ষাপটে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও গেল ১৭ মে থেকে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়। শুরুতে নগরীর মাদকের হাট হিসাবে পরিচিত বরিশাল কলোনীতে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারায় দুই মাদক ব্যবসায়ী। নগরীর বায়েজিদ এলাকায় আরও এক মাদক ব্যবসায়ী মারা যায়। সর্বশেষ রোববার ভোরে সীতাকুÐে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় এক মাদক ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম ছাড়াও র্যাব ইতোমধ্যে ফেনী থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে মাদকের বিশেষ করে ইয়াবার বেশ কয়েকটি বড় বড় চালান উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করেছে মাদক বিক্রেতাদের কয়েকজনকে। অভিযানের মধ্যেও মাদক পাচার থেমে নেই। এরমধ্যে কক্সবাজার ও টেকনাফে কয়েকটি চালান ধরা পড়েছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পাচারকালে কার্ভাডভ্যান বোঝাই প্রায় ২ হাজার পিস ইয়াবা ও ৪৯২ বোতল ফেনসিডিলের একটি চালানসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র্যাব।
চলমান অভিযান আরও জোরদার করা হবে জানিয়ে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহমেদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আরও কঠোর হবে। মাদকের সাথে যারাই জড়িত তাদের কেউ পালিয়ে থাকতে পারবে না। টানা ১১ দিনের অভিযানে সাফল্য কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদক বিরোধী অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া, তবে এবার সাধারণ মানুষের সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে। অপরাধী যে কৌশল নেবে র্যাবও তার পাল্টা কৌশলে অভিযান অব্যাহত রাখবে। আশাকরি এবারের অভিযান পুরোপুরিই সফল হবে।
এদিকে নগরীতে চলমান অভিযানে পুলিশের উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য নেই। র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে দুই জন নিহত হওয়ার পর বরিশাল কলোনীতে অভিযানে নামে পুলিশ। সেখানে মাদক আর দেশি অস্ত্রসহ তিনজনকে পাকড়াও করা হয়। সর্বশেষ রোববার রাতে নগরীর আকবর শাহ এলাকায় একটি মাদকের আস্তানায় বøক রেইড দেয়া হয়। এখনও অনেক আস্তানায় পুলিশের হাত পড়েনি। অভিযানের মধ্যেই গত ২৪ মে ও ২৬ মে ঝর্নাপাড়া ও জোড়া ডেবার পাড়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি ও সেবনের দায়ে ৩৬ জনকে সাজা দেয় র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। পুলিশী অভিযানে এখনও নগরীতে বড় কোন মাদক ব্যবসায়ী বা তাদের গডফাদার ধরা পড়েনি। অথচ নগরীতে বসেই সারা দেশে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এমন অনেকে এখনও নগরীতে রয়েছে। সরাসরি মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনে চট্টগ্রামে মজুত রেখে সারা দেশে সরবরাহ করার সাথে জড়িত কয়েকজনকে বিভিন্ন সময়েও গ্রেফতারও করা হয়। তবে এ অভিযানে এমন কাউকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোঃ মাসুদ উল হকের দাবি মাদকের বিরুদ্ধে নগরীতে অভিযান চলছে। অভিযানে মাদক উদ্ধার হচ্ছে, মাদক বিক্রেতারাও ধরা পড়ছে। অনেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের ধরা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি। চট্টগ্রাম জেলাসহ রেঞ্জের ১১ জেলা সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে ডিআইজি ড. এস এম মনির উজ জামান গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জাতি বিধ্বংসী মাদকের ভয়াল আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। দেশে আসক্তের সংখ্যা ৬০ লাখ যাদের প্রায় সবার বয়স ১৫ থেকে ৩০ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদক পুরো প্রজন্ম ধ্বংস করে দিচ্ছে। দিনে ৭ কোটি টাকার মাদক বেচাকেনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে রক্ষায় কঠোরতম অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। পুলিশের কেউ মাদকের সাথে জড়িত থাকলে তাদেরও ছাড়া হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।