পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করে দেশে ফেরার দুদিনের মাথায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইস্যুতে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ইন্ডিয়ান মিডিয়া করসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ইমক্যাব) এই সভার আয়োজন করে। ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ঃ গণমাধ্যমের ভূমিকা’ -শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, শুধুমাত্র এক কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে ভারতকে যে পরিমাণ সামরিক শক্তি ও অর্থ ব্যয় করতে হয়; সেখানে সেভেন সিস্টার হিসেবে পরিচিত দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত প্রদেশে বিদ্যমান বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আরো শক্তিশালী হলে তা দেশটির অস্তিত্বকে সংকটের মুখে ফেলবে। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি এখানকার ভূখন্ডকে ব্যবহার করে কোনো দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করায় তা ভারতের জন্য বিরাট ভূমিকা রাখছে। তাই ভারত নিজের স্বার্থেই মনে প্রাণে চাইবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভারতীয় সেনারাও জীবন দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা বা অচলাবস্থা, সীমান্তে হত্যা ও বাণিজ্য ঘাটতি- এমন কোনো কিছুই দুই দেশের সুসম্পর্ককে বাধাগ্রস্থ করতে পারবে না।
ভারত বিরোধী কার্ড ব্যবহার করে এই দেশে কেউ কেউ সা¤প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে- এমন মন্তব্য করে ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরো বলেন, ৭৫ পরবর্তী শাসককরা এই কাজটি করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূখন্ডকে কোনো দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নীতি ও তার বাস্তবায়নের ফলে আমরা ভারতকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা উভয় দিক দিয়েই লাভবান করেছি। এখন ভারতের সময় এসেছে তার প্রতিদান দেয়ার। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার সরকার এমন অবস্থান গ্রহণ না করলে শুধুমাত্র সেভেন সিস্টারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করতে ভারতকে প্রতি বছর আরো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হতো এবং ব্যাপক সৈন্য বাহিনীর ব্যবহার করতে হতো। এর বিনিময়ে ভারতকে বাংলাদেশের ব্যাপারে আরো সহনশীল হওয়ার আহবান জানিয়ে ইকবাল সোবহান বলেন, আসামে যখন বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে সেখানকার বিশাল জনগোষ্ঠীর তালিকা তৈরি করা হয় তা বাংলাদেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে মসজিদে যখন মুসুল্লিদের নামাযে বাধা দেয়া হয় তা বাংলাদেশের মানুষকে ব্যথিত করে।
সভায় বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স¤প্রতি ভারত সফরে গিয়ে বলেছেন যে দুই দেশের সম্পর্ক পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের মতো। কিন্তু সেখানে তিনি তিস্তার কথা বলতে পারেননি। আমরা আশা করবো ভারতের পক্ষ থেকে অচিরেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হবে যাতে প্রধানমন্ত্রী পরবর্তীতে তিস্তার নামও বলতে পারেন।
সাংবাদিক নেতা বুলবুল শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, শেখ হাসিনার এবারকার ভারত সফর ছিল একান্তই সাংস্কৃতিক। এই সফরের সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক বা দেনদরবারের বিষয় ছিল না। তিস্তার ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জীর প্রাদেশিক সরকার বিরোধিতা করছে। এটাই কুটনীতির স্বাভাবিক ধারা যে প্রত্যেক দেশই তার স্বার্থ চাইবে। মমতা ব্যানার্জী তার নিজ দেশের স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখবে এমনটা আশা করাই বোকামি ও ভিত্তিহীন। তিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বিষয়টি উপলব্ধিতে এনে এমন কোনো প্রপাগান্ডা না চালানোর আহবান জানিয়ে বলেন, এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে সা¤প্রদায়িক উস্কানির সৃষ্টি হয় এবং দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
হারুন হাবিব বলেন, দুই দেশেরই বিষয়- স্বার্থ আছে, পারস্পরিক চাওয়া-পাওয়া আছে, যা বস্তবসম্মত স্বদিচ্ছার বাতাবরণে সমাধানযোগ্য। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তিস্তার পানি বন্টন ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের মতো যে জরুরি বিষয়গুলো আজও অমীমাংসীত আছে তার সমাধান হবে।দুই দেশেরই মূলধারার গণমাধ্যম এই সম্পর্ককে লালন করেছে, সমর্থন দিয়েছে। কেউ কেউ একে থমকে দিতে চায়নি, তা নয়। দুই দেশেরই এমন গোষ্ঠী আছে যারা পুরানোকে আকড়ে ধরে, সামনে এগুবার যাত্রাকে থমকে দিতে চায়। দুই দেশেই উগ্র সা¤প্রদায়িক শক্তি আছে। যারা মানুষে মানুষে ঘৃণা ছড়ায়। কিছু কিছু গণমাধ্যমও এসব অপকর্মে ব্যবহৃত হয়নি তা নয়। তবে আজ উভয় দেশের গণমাধ্যম ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
সাইফুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দুই দেশের সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার কথা বলেছেন। আগামীতে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার সঙ্গে তিস্তার কথাও বলতে পারবেন বলে আমরা আশা করি। এক্ষেত্রে দুই দেশে যারা অন্য দেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন তাদেরকে অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইমক্যাবের সভাপতি সাংবাদিক বাসুদেব ধরের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতীয় দৈনিক দি হিন্দুর ঢাকা প্রতিনিধি হারুন হাবিব। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস কাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহা, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীপ আজাদ প্রমূখ। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।