Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওয়ানস্টপ সার্ভিসে তুষ্ট জনসাধারণ বিরক্ত চিকিৎসক নেতারা!

বদলে যাওয়া মমেক হাসপাতালের আনন্দ-বেদনার গল্প-২

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


মো: শামসুল আলম খান : ওয়ান স্টপ সার্ভিস। দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমূহের মধ্যে প্রথম। বলা হচ্ছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে সুচিকিৎসা সেবার একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে এ সার্ভিস। এ সার্ভিসের মাধ্যমেই রাত-দিন ২৪ ঘন্টা সব ধরণের জরুরি সেবা, বুকে ব্যাথা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা বাইরের ক্লিনিক বা হাসপাতালগুলোর চেয়ে নামমাত্র টাকায় জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারছেন।
তাদের বিনামূল্যে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ দেয়া হচ্ছে। ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে পানি জমার মতো জটিল সমস্যার দ্রুত সমাধান মিলছে। এ সার্ভিসে আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, ইসিজি, প্যাথলজি ল্যাব, অপারেশন থিয়েটার ও অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিন সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
ওয়ান স্টপ এ সার্ভিসে বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালের বাইরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের রমরমা ব্যবসা। আর হাসপাতালের শতভাগ ওষুধ দেয়ার ফর্মুলার সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে হাসপাতালের সামনেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ফার্মেসী মালিকদের ব্যবসায় ‘লাল বাতি’ জ্বলেছে।
অভিযোগ ওঠেছে, বহুল প্রত্যাশিত ওয়ান স্টপ সার্ভিস বন্ধে গাঁটছড়া বেঁধেছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় চিকিৎসক নেতা, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিক থেকে শুরু করে চিহ্নিত একটি চক্র। তাদের অব্যক্ত কথা আর নীরব আর্তনাদের প্রতিধ্বনি হচ্ছে- ‘বন্ধ করো ওয়ান স্টপ, হটিয়ে দাও পরিচালক।’
এ ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিয়ে ওই চক্রটির মাথাব্যাথা ও বিরক্তি থাকলেও এ নিয়ে তুষ্ট স্থানীয় জনসাধারণ। তারা যে কোন মূল্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু রাখতে চান। এজন্য দরকার হলে তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলনের জন্যও প্রস্তুত। বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ময়মনসিংহ মডেল গ্রহণ করে দেশের সবক’টি সরকারি হাসপাতালে এ সার্ভিস চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানা যায়, হাসপাতাল নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ষড়যন্ত্রে মেতে থাকা একটি চক্র হাসপাতালে সেবা প্রদানে সার্ভিস চার্জের গালগপ্প ছড়ালেও বাস্তবে এর কোন ভিত্তি নেই। এ হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ যোগদানের আগেই ২০০১ সাল থেকে এ হাসপাতালের ইউজার ফি চালু হয়।
উল্টো বর্তমান পরিচালক এটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তখন সব বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরাই এ সিদ্ধান্তে তীব্র আপত্তি তুলেন। অন্তত হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০ শতাংশ ইউজার ফি নেয়ার দাবি জানান।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখার দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ২০১৭ সালের ০৩ আগষ্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতেই রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতে ইউজার ফি’র এ বিষয়টি অনুমোদন করেন কমিটির সভাপতি, সদর আসনের সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।
দায়িত্বশীল ওই সূত্রটি জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়েই ৪৮ লাখ টাকায় তিনটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন কিনেছে। দু’টি সিআর মেশিনকে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনে রূপান্তরিত করতে চারটি ফ্ল্যাট প্যানেল ডিটেক্টর ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছে। আর এটি কেনা হয়েছে চুক্তিতে। ইতোমধ্যে ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকী টাকা আরো ৮ কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে।
সূত্র মতে, ওই টাকাতেই চারটি বায়োকেমেস্ট্রি এনালাইজার প্রতিটি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে কেনা হয়েছে। এছাড়া ছোটখাটো আরো অনেক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে বিধি মেনে, কমিটি ও নোটশিটের মাধ্যমে। সার্ভে কমিটির মাধ্যমে প্রতিটির অডিটও করা হয়েছে।
অথচ এ বিষয়টিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে হাসপাতাল পরিচালকের গায়ে দুর্নীতির কলঙ্ক তিলক এঁটে দিয়ে তাকে নাস্তানাবুদ করতেই মূলত মিমাংসিত একটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। হীন কৌশলে তাকে ঘায়েল করতেই কেন্দ্রীয় এক চিকিৎসক নেতা, তাঁর যুবলীগ নেতা ছোট ভাই, স্থানীয় বিএমএ নেতা, বদলি হওয়া দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিত দুই কর্মচারী খিস্তিখেউর করছেন। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বিভিন্ন ক্লিনিক ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিক, ওষুধ, খাদ্য মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদার, দালাল ও ওষুধ কোম্পানির কথিত রাঘব-বোয়ালরা।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল পরিচালকের বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বেই রাজস্ব আয়েও রীতিমতো রেকর্ড গড়েছে এ হাসপাতাল। হাসপাতালের জরুরি স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজন মিটিয়ে বাদ বাকী টাকা নিয়ম মতেই সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হচ্ছে।
সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি রোগীর চাপ বাড়ায় হাসপাতালের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। ২০১২-১৩ সালে এ হাসপাতালের রাজস্ব আয় ছিল ৩ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ সালে ৪ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ সালে ৬ কোটি টাকা ও ২০১৬-১৭ সালে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে ১২ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আয় হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 



 

Show all comments
  • সেলিম উদ্দিন ২৯ মে, ২০১৮, ২:৫১ এএম says : 0
    ভালো কাজে বাধা আসবেই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ