Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীর কোথাও কর্পোরেশনের বেঁধে দেয়া দামে গোশত পাওয়া যাচ্ছে না

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারণ করে দেয়া গোশতের দাম মানছেন না গোশত ব্যবসায়ীরা। রমজান উপলক্ষে গোশত ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে গোশতের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। সে অনুসারে একই দামে গোশত বিক্রির কথা ঢাকার দুই সিটির বিক্রেতাদের। কিন্তু রোজা শুরু হওয়ার গত দশ দিনে সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত দামে কোথাও গোশত পাওয়া যায়নি। তবে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত যখন পরিচালনা হয় তখন সাময়ীক সময়ের জন্য গোশত বিক্রেতারা গরুর গোশত ৪৫০ টাকায় বাধ্য হয়ে বিক্রি করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাওয়ার সাথে সাথে আবার ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায় চলে যায়। বিক্রেতারা যে যেমন খেয়াল খুশি মতো দামেই গোশত বিক্রি করছেন। এ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশন এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনও বৈঠকই করেনি। তবে সংস্থাটি বলছে ডিএসসিসি নির্ধারিত দাম তাদের এলাকাতেও বলবৎ থাকবে।
সরেজমিন গতকাল সোমবার রাজধানীর শাহজাহানপুর খলিলের গোশত দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানের সামনে কর্পোরেশনের নির্ধারিত দাম ব্যনারে লেখা থাকলে গরুর গোশত ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করলে তাদেরকে হেনস্তা হতে হচ্ছে খলিল ও তার দোকানের কর্মচারিদের হাতে। নুর মোহাম্মদ নামের একজন ক্রেতা গোশতের দাম কেন ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ৪৮০ টাকা রাখা হবে এ নিয়ে প্রতিবাদ করেলে দোকান থেকে বলা হয় এই দামেই গোশত নিতে হবে। বেশি তর্ক করলে ৫০০ টাকায় নিতে হবে।
এছাড়াও খলিল গোশত বিতানের সামনে সিটি কর্পোরেশনের আইন অমান্য করে গরু, ছাগল, ভেড়া জবাই করা হচ্ছে। পশুর রক্ত ও পরিত্যাক্ত চর্বি এবং হাড়গুলো এলোমেলোভাবে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে ওই এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এরমধ্যে মাছি, মশা ভেন ভেন করতেও দেখা গেছে। এ নিয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করার সাহস করছেনা খলিল ও তার দোকানের কর্মচারিদের ভয়ে।
খলিল গোশত বিতানের মালিক খলিলুর রহমান বলেন, আমরা কর্পোরেশনের নির্ধারিত দামে গোশত বিক্রি করছি। তবে কেউ হাড্ডি ও চর্বি ছাড়া গোশত নিতে চাইলে তাদের থেকে একটু বেশি দাম রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, রোজার আগে খুব ভোরে দুয়েকটি পশু দোকানের সামনে জবাই করেছি। বর্তমানে দোকানের সামনে কোন পশু জবাই করা হয় না। আমার গোডাউন আছে সেখানেই পশু জবাই করা হয়।
গত ১৪ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে গোশত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রথম রোজা থেকে ২৬ রোজা পর্যন্ত দেশি গরুর গোশত ৪৫০, বিদেশি গরু এবং মহিষের গোশত ৪২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। একই বৈঠকে রোজায় খাসির গোশত ৭২০ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগির গোশত ৬০০ টাকা করে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়।
অভিযোগ আছে, রাজধানীতে বিক্রির জন্য জবাই করা পশুর মধ্যে গরুর চেয়ে মহিষের সংখ্যা সব সময় বেশি। আবার গরুর মধ্যে দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরুর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। একইভাবে খাসির চেয়ে ভেড়া ও ছাগির পরিমাণ থাকে বেশি। কিন্তু গোশত কাটার পর কোনটা দেশি গরু আর কোনটা ভারতীয় গরুর গোশত সেটি বোঝার সুযোগ থাকে না। আর অভিজ্ঞ না হলে মহিষের গোশতও বোঝা যায় না। একইভাবে খাসি আর ছাগি বা ভেড়ার গোশত আলাদা করে বোঝার সুযোগ নেই।
রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারেও গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে। ক্রেতাদের কোনো কথাই শুনছেন না গোশত ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সরকারি দামে গোশত বিক্রি করলে লোকসান হয়। তাই ৫০০ টাকা কেজি দরেই গরুর গোশত বিক্রি করছেন তারা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমরা ৪৫০ টাকায় বিক্রি করছি। কেউ দর-দাম করলে আমরা ৫০০ টাকা বলি। তবে দাম বেশি নেওয়া হয় না। এ বাজারের নজরুল গোশত বিতানের স্বত্বাধিকারী জহির বলেন, আমাদের এখানে কেউ দাম বেশি রাখে না। সরকারি দামেই (৪৫০ টাকা) আমরা গোশত বিক্রি করছি। খাসি বিক্রি হচ্ছে ৭২০ টাকা।
শাখাওয়াত নামে এক ক্রেতা জহিরের দোকান থেকে ২ কেজি গোশত কেনেন। তার কাছে দাম জানতে চাইলে ৪৮০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন বলে জানান তিনি। সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত দামের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখাওয়াত বলেন, এ দাম শুধু শুনি। ব্যবসায়ীরা ওই দাম রাখে না। বাজার মনিটরিংয়ের দিন দাম কম রাখে বলে শুনেছি।
এবার ওই গোশত বিক্রেতা জহিরকে প্রশ্ন করা হলে রেগে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখানে গোশতের দাম ৬০০ টাকা পর্যন্ত আছে। হাড্ডি ছাড়া আমরা এভাবেই বিক্রি করি। আপনি চাইলে এ দামে কিনতে পারেন। একই বাজারে খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীদের দাবি, বকরি বা ছাগীর কোনো গোশত নেই এ বাজারে।
রোজার ১১তম দিন গোপিবাগ ও কাপ্তান বাজার ঘুরে দেখা যায়, সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেয়া দাম কোন গোশতই মিলছে না। এছাড়া সব গোশতই দেশি গরুর বলে দাবি করেছেন বিক্রেতারা। আর মহিষের গোশত আছে, এটা কোনো বিক্রেতা স্বীকারই করতে চাননি। এবার দাম গত বছরের তুলনায় কম নির্ধারণ হওয়ায় সন্তোষ জানিয়েছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগের বছরের চেয়ে দাম বেশি হবে, এটাই দেখে আসছি এতদিন। এবার সিটি কর্পোরেশন
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারে ঘুরে দেখা যায়, গরুর গোশত প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, খাসির গোশত ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি বেশি দামে পশু কেনায় দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। সেগুনবাগিচা বাজারের খাসির গোশত বিক্রেতা শাহীন বলেন, আমরা এখনও চার্ট পাইনি। খাসির দাম বেশি হওয়ায় গোশতের দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে।
একই বাজারের গরুর গোশত বিক্রেতা খোকন এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ খোকন বলেন, আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি না। আগের দামেই বিক্রি করছি। সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারণ করে দেওয়া দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই দামে দিমু তবে অর্ধেক হাড্ডি-চর্বি লইতে হইবু। না হলে পারুম না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইনকিলাবকে আলম বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন গোশত ব্যবসায়ীদের সাথে বসে তাদের ব্যবসার সুখ দুঃখ শোনেনি এবং গোশতের দাম নির্ধারণ করেনি। গাবতলী গরুটের ইজারা দারেরা গোশত ব্যবসায়ীদের উপর যে অবৈধ চাঁদাবাজি চলাচ্ছে তাও বন্ধের কোন উদ্যোগ নেয়নি ডিএনসিসি। তিনি বলেন, ১০০ টাকার হাসিল আমাদের থেকে ৪/৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে তারা। তাহলে আমরা কিভাবে কম দামে গোশত বিক্রি করতে পানি। যে কারণে গোশতের বাজে কিছুটা অস্থিতিশিলতা বিরাজ করছে। সেটা সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ নিলে আগামী দু’এক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ