Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ধরাছোঁয়ার বাইরে কুমিল্লার দুই শতাধিক মাদককারবারী

আদালতে ঝুলছে মাদকের সাড়ে ১৮ হাজার মামলা

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা জুড়ে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স অবস্থান নাগরিক সমাজসহ সর্বত্র প্রশংসার দাবি রাখছে। এযাতব যে দশজন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে তারা কুমিল্লার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে তালিকার অন্যতম। গত ২১ মে মাদকের বিরুদ্ধে কুমিল্লা পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হওয়ার পর বিশেষ করে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার ঘটনায় তালিকাভূক্ত মাদক কারবারিদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। কুমিল্লায় দুই শতাধিক শীর্ষ মাদককারবারি রয়েছে। এদের কেউ কেউ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা ‘মাদক নেতা’দের আশ্রয়ে দেশেই অবস্থান করছে। আবার অনেকেই মাদকের লাইনম্যানদের সহায়তায় ওপারে (ভারতে) পাড়ি দিয়েছে। এদিকে কুমিল্লার আদালতে মাদক মামলা রয়েছে ১৯হাজার ২৯৬টি। যাতে আসামী রয়েছে ১৯হাজার ৮৪১জন। এরমধ্যে মাত্র ৬২৯টি মামলার বিচার হয়েছে আর এতে সাজা হয়েছে ৭৪৮জনের। অন্যদিকে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু হওয়ায় মাদক মামলার পলাতক আসামীদের অনেকেই আদালতে আত্মসমর্পন করে জেলহাজতে যাচ্ছে।
ভারত থেকে সীমান্ত পথে ফেন্সিডিল, রিকোডিক্স, ইয়াবা, হেরোইন, মদ, বিয়ার, গাঁজাসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্যের বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত কুমিল্লার দুই শতাধিক মাদককারবারি। এদের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা সদরের চকবাজার হোন্ডা সুমন, মুরাদপুরের বোচন ও সোহেল, চর্থার ইয়াবা সুমন, ধর্মপুরের জমাত ও ডেঙ্গা জাকির, মনোহরপুরের হালুয়া রিপন, বালুতুপার কসাই কামাল, শিবু, ভাটপাড়ার তুহিন, কোটেশ্বরের নুরুল ইসলাম ও ফারুক, শালধরের ইদন, বিষ্ণপুরের মন্টু, রাডার মনি, ছাওয়ালপুরের শফিক মেম্বার, ঝাকুনিপাড়ার জামাই রফিক, পশ্চিম মাঝিগাছার শচীন ও মধ্যম নন্দিরবাজারের রফিক। সদর দক্ষিণ উপজেলার একবালিয়ার এনা মিয়া ও ছবু, দরিবট গ্রামের বাশার মেম্বার, মেরুয়ালীর সেলিম মিয়া ও ইয়াছিন মিয়া, নোয়াপাড়ার মাছুম মিয়া, পাঠানকোটের দেলু হুজুর ও কবির মিয়া, মুড়াপাড়ার ইদ্রিছ মিয়া, হান্নান এবং হারুন মেম্বার, লালবাগের আপেল, সুয়াগাজির জাকির মেম্বার, জামাল, লিটন, হাসু চেয়ারম্যানের ছেলে মোস্তফা ও ভাগিনা শাহাদাত, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার কসমেটিকস সেলিম। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বইদ্দেরখীলের আব্দুল বারেক, লক্ষীপুরের আলী আহম্মেদ, আরব আলী ও ইসমাইল মিয়া, সাতবাড়িয়ার রোমান, চান্দিশকড়ার আরিফ, চিওড়ার সিরাজ মেম্বার, বাবুটি বাজারের ইউসুফ, আমানগন্ডার রূপ মিয়া, মতিটুলির ভাগিনা রিপন, বসন্তপুরের দেলোয়ার দেলু, রুবেল, নোয়াপাড়ার সুমন, পৌর এলাকার নাসির, জগমোহনের শাহিন, মিয়াবাজারের সোর্স লোকমান। বুড়িচং উপজেলায় চরানলের হুমায়ুন মেম্বার, কংশনগরের বাবুল, লতিফ ও খায়ের, শংকুচাইলের নেহারুল, সেলিম, শাহআলম, রবি ও বিল্লাল, আনোয়ার, মুরগী শাহিন, রাজাপুরের কবির, ছালাম ও মিরপুরের মমতাজ, খোরশেদ, জামাল, বারেশ্বরের মানিক, নুরু, কালাকচুয়ার মাধব। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গঙ্গানগরের আবুল হোসেন, তেতাভূমির শিউলি আক্তার, আকবর, সরু মিয়া, শশীদলের হুমায়ুন, হেলাল, রিপন ও আক্তার, দীঘিরপাড়ের বাবুল, নাইঘরের শানু মিয়া ও কৃষ্ণা খোকন। দেবিদ্বার উপজেলা সদরের কানা খুরশিদ, দক্ষিণ নারায়নপুরের নবী, হাতিমারার হোসেন, ফুল মিয়া ও বাগুর গ্রামের হাবু। মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা থানার উত্তরপাড়ার শংকর সরকার ওরফে ইয়াবা শংকর।
মাদকের এসব শীর্ষ কারবারিরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে গোটা জেলায় মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আর এসব সিন্ডিকেটের বেশিরভাগ বিক্রেতাই নারী। এসব নারীদের কেউ কেউ ড্রাগ কুইন বা মাদক স¤্রাজ্ঞী হিসেবেও অভিধা পেয়েছে। পুলিশসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারি সংস্থার তালিকায় প্রায় দুইশজন নারী মাদক ব্যবসায়ি রয়েছে। কুমিল্লা নগরী ও আশপাশের এলাকায় এরা শীর্ষ মাদক ব্যবসায়িদের তত্ত¡াবধানে সিন্ডিকেট করে মাদক বিক্রির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি শুরু হওয়া পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে নগরীর চিহ্নিত নারী মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে শাসনগাছার পাখি বেগম, আসমা, আরাধন বেগম, গর্জনখোলার শাহিন বেগম, চন্দ্রা বেগম, ধর্মপুরের সুরাইয়া, বালুতুপা এলাকার ভানু বেগমকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। গ্রেফতারের ভয়ে চিহ্নিত নারী মাদক বিক্রেতাদের অনেকেই ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে।
মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানের কথা উল্লেখ করে কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বলেছেন, এ পর্যন্ত যারা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তারা সবাই মাদক ব্যাবসায়ী এবং তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সাতের অধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, আদালতে মাদক মামলার দীর্ঘসূত্রিতা, মাদক মামলার আসামীরা জামিনে মুক্ত হয়ে আবার এই পেশায় চলে আসার কারণে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আবার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়াতে সহজেই এখানে মাদক চলে আসে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণ পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বর্ডারগার্ডকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ