Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রফতানিকারক পেমেন্ট পাননি, আমদানিকারক নিখোঁজ

ক্রেডিট রিপোর্ট জালিয়াতি করে ৬০০ কোটি টাকা লুট

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


অর্থনৈতিক রিপোর্টার : একটি রফতানি আদেশের বিপরীতে ২৬টি প্রতিষ্ঠান পণ্য রফতানি করার পরও পেমেন্টে পায়নি। আমদানিকারককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৬০০ কোটি টাকা অনিয়মের ঘটনা পরবর্তীতে সবার নজরে আসে। ক্রেডিট রিপোর্ট অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এ ধরণের ঘটনা ঘটত না। সম্প্রতি এ ধরণের জালিয়াতির ঘটনা উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থাপিত প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে দরা হয়েছে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যে ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি কমাতে ক্রেডিট রিপোর্টের জন্য তথ্য ভান্ডার সৃষ্টি করা যেতে পারে। এতে কোন দুর্বল এবং ভুয়া ক্রেডিট রিপোর্ট সরবরাহের সুযোগ থাকবে না। অনিয়ম এবং জালিয়াতির ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘প্র্যাকটিসেস অব অবটেইনিং ক্রেডিট রিপোর্ট অব ফরেন কাউন্টার পার্টস ইন ট্রেড সার্ভিসেস-ইজ ইট ওয়াকিং?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি অধিকতর দক্ষতর সঙ্গে অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের প্রফেসর এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। তিনি গোলটেবিল বৈঠকের বিষয়টির ওপর সূচনা বক্তব্য দেন।
গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের প্রফেসর এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক অন্তরা জেরীন, বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের যুগ্ম পরিচালক প্রদীপ পাল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মাহমুদুর রহমান এবং মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ.টি.এম নেছারুল হক ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধূরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর ইয়াছিন আলি, কমার্জ ব্যাংক এজির চীফ রিপ্রেজেনটেটিভ তৌফিক আলী।
ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য সেবার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে ব্যাংক এবং রাষ্ট্রীয় ঝুঁকি দুটোই বাড়বে। তিনি বলেন, অর্থ পাচার ঠোকানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। শেল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কোন লেনদেন যাতে না হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
মূল প্রবন্ধে ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, সম্প্রতি একটি রফতানি আদেশের বিপরীতে ২৬ টি প্রতিষ্ঠান পণ্য রফতানি করার পরও পেমেন্টে পায়নি। আমদানিকারককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৬০০ কোটি টাকা অনিয়মের ঘটনা পরবর্তীতে সবার নজরে আসে। ক্রেডিট রিপোর্ট অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এ ধরণের ঘটনা ঘটত না। তিনি বলেন, ক্রেডিট রিপোর্ট হল বিদেশী আমদানিকারক বা রফতানিকারকের বিষয়ে বিশদ বিবরণ। এর পিছনে প্রতিবছর প্রায় দেড় কোটি ডলার অর্থ ব্যয় হয়, যা অযৌক্তিক নয়। কিন্তু ক্রেডিট রিপোর্ট একদিকে যথাযথভাবে হয় না, অন্যদিকে গদবাঁধা হলেও এসব ক্রেডিট রিপোর্ট কোন ধরণের বিশ্লেষণ করা হয় না। ফলে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান জাল-জালিয়াতির সুযোগ পায়।
ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম যাতে না হয় সেজন্য ব্যাংকারদের সর্তক থাকতে হবে। ব্যাংকাররা সর্তক থাকলে কোন অনিয়মের ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই।
হেলাল আহমদ চৌধূরী বলেন, ব্যাংকারদের আরও সচেতন হতে হবে। কারণ কেউ যেন ব্যাংকারদের ব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা কিংবা টাকা পাচার করতে না পারে।
ইয়াছিন আলি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থপাচারের ৮৩ শতাংশ হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে। এ কারণে ব্যাংক সতর্ক থাকলে কোন অনিয়ম ঘটার সুযোগ নেই।
তৌফিক আলী বলেন, ব্যাংকের পরিচালকদের লোভের কারণে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে। ব্যাংক পরিচালকদের লোভ সংবরণ করতে হবে। একই সঙ্গে ট্রেড সার্ভিস বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যে সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোরারোপ করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ