পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাজেকে গতকাল প্রতিপক্ষের গুলিতে ৩ ইউপিডিএফ কর্মী নিহত। পাহাড়ে আধিপত্যের লড়াই ৬ মাসে ঝরল ২২ প্রাণ
সাখাওয়াত হোসেন/সৈয়দ মাহাবুব আহামেদ : চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার আর শক্তি প্রদর্শনাকে কেন্দ্র করে সবুজ উপত্যকা পার্বত্য চট্টগ্রাম বার বার রক্তাক্ত হচ্ছে। নব্বই দশকের পর পাহাড়ে এতটা রক্ত আর কখনো ঝরেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সশস্ত্রগ্রæপগুলোর দ্বন্ধে মে মাসের শুরুতে নিহত হয় পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনীতির দুই শীর্ষ নেতা। যার একজন উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা। এর মাত্র ২৪ দিনের ব্যবধানে গতকাল আবারও খুন হলো তিন জন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হিসেবে, গত ৬ মাসে ২২ জন খুন হয়েছে। নিখোঁজ হয়েছে ৭ জন। স্থানীয়দের দাবি, এ সংখ্যা আরও বেশি হবে।
আইন-শৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-প্রসিত গ্রæপ) তিন কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। আহত হয়েছে আরও একজন। গতকাল সোমবার ভোর ৫টার দিকে সাজেকের করল্যাছড়িতে ইউপিডিএফ-প্রসিত গ্রæপের আস্তানায় এ হত্যাকান্ড ঘটে। নিহত তিনজন হলেন-করল্যাছড়ির সুগোরচুগো চাকমা ওরফে স্মৃতি চাকমা ও একই ইউনিয়নের ঝগড়াবিল এলাকার অটল চাকমা ও সঞ্জীব চাকমা। আহত কানন চাকমাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ইউপিডিএফ-প্রসিত গ্রæপের বাঘাইছড়ি ও সাজেক ইউনিটের পরিচালক জুয়েল চাকমা এ হত্যাকান্ডের জন্য গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফকে (বর্মা গ্রæপ) দায়ী করেছে। ঘটনার পরপরই ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (প্রসিত) সংগঠক মাইকেল চাকমা এ হত্যাকান্ডের জন্য জেএসএসকে (সংস্কার) দায়ী করে বলেছে, আমাদের তিন কর্মীকে আজ (সোমবার) ভোরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জেএসএসকে (সংস্কার) এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে জেএসএসর (সংস্কার) কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা ঘটনা অস্বীকার করে বলেছে, এটা তাদের মধ্যকার ঝামেলার কারণে হতে পারে। এ ঘটনার সঙ্গে জেএসএস (সংস্কার) সংযুক্ত নয়।
রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, কে বা কারা সজেকের ঘটনার জন্য দায়ী তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে এ ঘটনাকে পাহাড়ে চলে আসা সংঘাতের অংশই মনে হচ্ছে। পুলিশ ও সেনাবাহীনি ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এছাড়া এ মাসের শুরু থেকে চলে আসা আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযান এখনো চলমান আছে।
সাজেক থানার ওসি নুরুল আনোয়ার বলেন, এলাকায় বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যৌথবাহিনী চারদিকে এলাকা ঘিরে রেখেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর পাহাড়ের বুকে শুরু হয় আরও এক কালো অধ্যায়ের। ওই দিন নানিয়ারচর সতেরমাইল এলাকায় চিরঞ্জীব দোজরপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফ সমর্থক ইউপি সদস্য অনাধি রঞ্জন চাকমাকে (৫৫)। হত্যার জন্য ইউপিডিএফ তাদেরই এক সময়ের সামরিক কমান্ডার তপন জ্যোতি চাকমা বর্মার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ইউপিডিএফকে (গণতান্ত্রিক) দায়ী করা হয়। একই দিন রাঙ্গামাটির জুরাছড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দ চাকমাকে (৪৪) গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকান্ডের জন্য সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতিকে (জেএসএস) দায়ী করা হয়। একই সময়ে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মার্মাকে (৩২) কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কর্মীরা। তার একদিন পর ৭ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি শহরে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভানেত্রী ঝর্ণা খীসার বাসায় হামলা করে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। ওই ঘটনার ১০ দিনের মাথায় ১৬ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙায় ইউপিডিএফ কর্মী ও সংগঠক অনল বিকাশ চাকমাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইউপিডিএফ ওই হত্যাকান্ডের জন্য ইউপিডিএফকে (গণতান্ত্রিক) দায়ী করে আসছে। চলতি বছরের গত ৩ জানুয়ারি খাগড়াছড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফ-এর অন্যতম নেতা মিঠুন চাকমাকে। ইউপিডিএফ ওই হত্যার জন্য ইউপিডিএফকে (গণতান্ত্রিক) দায়ী করেছে। একই দিনেই রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ি উপজেলায় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিশাল তঞ্চঙ্গারের ওপর গুলি চালানো হলেও প্রাণে বেঁচে যান। যুবলীগ ওই হামলার জন্য জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে। ৩০ জানুয়ারি সন্ত্রাসবিরোধী মহাসমাবেশে অংশ নেয়ায় বিলাইছড়িতে আওয়ামী লীগের তিন কর্মীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। ২১ ফের্রুয়ারি খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সুভাষ চাকমা নামের এক ইউপিডিএফ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে ১৭ ফের্রুয়ারি খাগড়াছড়ি শহরের হরিনাথপাড়া এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফ কর্মী দিলীপ কুমার চাকমাকে। তিনি ইউপিডিএফের হরিনাথ পাড়ার সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন। সপ্তাহ দুই নিরব থাকার পর ১১ মার্চ রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে নিজ বাড়িতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফ কর্মী নতুন মনি চাকমাকে। তিনি ইউপিডিএফের প্রসীত বিকাশ খীসা পক্ষের কর্মী ছিলেন। একদিন পর ১৮ মার্চ রাঙ্গামাটির কুতুছড়ি থেকে অপহরণ করা হয় ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে। এ ঘটনার রেশ ধরে ১২ এপ্রিল পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত হয় ৩ জন। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) কর্মী জনি তঞ্চঙ্গ্যাকে (৪০) গুলি করে হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) দুই কর্মী সাধন চাকমা (৩০) ও কালোময় চাকমাকে (২৯) গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনদিন পর ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ি শহরের পেরাছড়া এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় সূর্য বিকাশ চাকমা নামে একজন নিহত হয়। তিনিও ইউপিডিএফ-এর দুই অংশের বিরোধের কারণে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়। ওই ঘটনার এ সপ্তাহের মাথায় ২২ এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার মরাটিলা এলাকায় ইউপিডিএফ ও জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় সুনীল বিকাশ ত্রিপুরা (৪০) নামের এক ইউপিডিএফ নেতা নিহত হন। হামলায় রক্তাক্ত জনপদে রূপ নেয়া পাহাড়ে সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাটি ঘটে গত ৩ মে। নানিয়ারচর উপজেলায় নিজ কার্যালয়ে সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) অন্যতম শীর্ষ নেতা শক্তিমান চাকমাকে। এ সময় তার সাথে থাকা সংগঠনটির আরেক নেতা রূপম চাকমা গুলিবিদ্ধ হয়। ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪ মে দুপুরে শক্তিমান চাকমার অন্তোস্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে যাওয়ার পথে সশস্ত্র হামলায় নিহত হন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর শীর্ষ নেতা তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) নেতা সুজন চাকমা, সেতুলাল চাকমা, টনক চাকমা এবং গাড়ী চালক সজীব। এ সময় আহত হন আরও ৮ জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।