পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : যখন খুশি টাকা উঠানো, টাকা পাঠানো, মোবাইল ফোনে রিচার্জ করার মত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এতে ব্যাংকে যাওয়া কিংবা ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি মিলছে মানুষের। দিন যত গড়াচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে উঠছে। বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বর্তমানে দৈনিক গড় লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটি টাকার উপরে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা শুরু হওয়ার সাত বছরের মাথায় এজেন্ট সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ (মার্চ পর্যন্ত) হিসাবে দেখা গেছে, দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছয় কোটি এক লাখ ৫২ হাজার। তবে নিবন্ধিত গ্রাহকদের মধ্যে অনেক হিসাবই সক্রিয় নেই। সক্রিয় গ্রাহক রয়েছে দুই কোটি দুই লাখ ৬২ হাজার। এসব গ্রাহক প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ১১ কোটি টাকা লেনদেন করেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট সংখ্যা আট লাখ চার হাজার ৬১০ জন।
মোবাইল ব্যাংকিয়ের নানামুখি ব্যবহারের আর সহজলভ্য হওয়ায় কারণে জনপ্রিয় হওয়ায় গ্রামীণ জনজীবনকে অনেক সহজ হয়েছে। এ সেবার মাধ্যমে ঘরে বসেই অনেক কাজ করা যাচ্ছে। বাস, ট্রেনের টিকিট থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে মানুষের হাতের মুঠোয় থাকা ছোট্ট যন্ত্রটির মাধ্যমে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেসব কাজ করা যায় সেগুলো হলো, রেমিটেন্স পাঠানো, ক্যাশ ইন ক্যাশ আউট, একজনের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্যজনের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো, ইউটিলিটি বিল দেওয়া, মোবাইল ফোনের এয়ার টাইম কেনা, পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্চেন্ট পেমেন্ট, সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেতন দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা, বিমা প্রিমিয়াম, ডিপিএস দেওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরের বছর পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। ১৯৯৯ সালে ইউরোপিয়ান ব্যাংকে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। মূলত, স্মার্টফোন উদ্ভাবনের পরে মোবাইল ওয়াপ (ওয়্যারলেস অ্যাপ্লিকেশন প্রটোকল) পদ্ধতির মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং শুরু হয়।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা মোবাইল অপারেটর ভিত্তিক হলেও বাংলাদেশে এ সেবা ব্যাংকভিত্তিক। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সেবা দিচ্ছে। দেশের বর্তমানে ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ২৯টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নিয়েছে। তবে বর্তমানে কার্যক্রম আছে ১৮টি ব্যাংকের। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করলেও এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোট লেনদেনের ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ হয় বিকাশের মাধ্যমে। আর ডাচ-বাংলার ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং অন্যান্য ব্যাংকের সর্বমোট ছয় দশমিক ৬৩ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতার বিচারে কোন শ্রেণির মানুষ বেশি মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকিং ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, নিরক্ষর মানুষরাই মোবাইল ব্যাংকিং বেশি ব্যবহার করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে কম শিক্ষিত থেকে বেশি শিক্ষিত মানুষ ব্যবহার করেন। ওই জরিপমতে, ২১ দশমিক সাত শতাংশ নিরক্ষর মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন। এরপর প্রাথমিক পাশ মানুষ ১৯ দশমিক নয় শতাংশ, মাধ্যমিক পাশ ১৮ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ১৬ দশমিক দুই শতাংশ, স্নাতক পাশ ১৮ শতাংশ এবং স্নাতকোত্তর পাশ শ্রেণির ছয় দশমিক দুই শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন।
এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের ২৭ লাখের বেশি এসএমই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ১৩ লাখই তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন করছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। অর্থাৎ এসএমইর লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার প্রায় ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে ৩৩ শতাংশ, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রতিষ্ঠানে ৪৩ শতাংশ, সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানে ৫১ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার দেখা যায়। অর্থ জমা, উত্তোলন, ক্রয়, পরিসেবা বিলসহ নানা ধরনের কার্যক্রমের মধ্যে অর্থ উত্তোলনেই সর্বাধিক ব্যবহার হয় মোবাইল ব্যাংকিং। ৯৪ শতাংশ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানই অর্থ উত্তোলনে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।