Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মসজিদে শিশুদের প্রতি আচরণ

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে মসজিদ থেকে শিশুদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিছু খিটখিটে মেজাজের মুসল্লি কোনোকিছু না বুঝেই এমন আচরণ করেন, যা মানুষ জীবজন্তুর প্রতিও করে না। কোনো কোনো মসজিদে ইমাম ও খাদেমরাও এতে প্রভাবিত হয়ে যান। তারাও শিশুদের তাড়ানোর পক্ষে কাজ করেন। যেসব শিশু পেশাব পায়খানার বয়স পার করেনি বা সাথের গার্জিয়ানকে দেখতে না পেলেই চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয় এদের কথা আলাদা। তবে, যারা ৭/৮ বছর পার করেছে, তাদের মসজিদে আসতে বাধা কোথায়। হাদীসে তো এ বয়সে তাদের নামাজের হুকুম দেয়ার কথা এসেছে। ১০ বছরের সময় নামাজ না পড়লে কঠোরতার কথাও হাদীসে এসেছে। প্রিয় নবী সা. যখন ঘরে নামাজ পড়তেন। তার দ্ইু শিশু নাতি হযরত হাসান ও হোসাইন রা. তখন তাদের নানাজির কোলে বসতেন। সেজদার সময় ঘাড়ে ও পিঠে চড়তেন। নবীজি সা. সেজদা শেষ হলে তাদের সুন্দর করে নিচে নামিয়ে তবে সেজদা থেকে মাথা তুলতেন। পরের সেজদায় তার আবার এমনই করতেন। হযরতও আবার তাদের সযত্নে নামিয়ে নামাজ শেষ করতেন। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবী করিম সা. নিজে ঘোড়ার মতো হামাগুড়ি দিতেন, নাতিরা তার পিঠে চড়ে আনন্দ পেত। এক সাহাবী এসে এ দৃশ্য দেখে বললেন, পৃথিবীতে এমন সওয়ারী আর কেউ পাবে না।-আল হাদীস। শিশুদের প্রতি হযরত যে আচরণ করতেন তা আদর্শ মানুষের জন্য অনুকরণীয়। একবার উমায়ের রা. নামক এক বালক সাহাবীর পালিত বুলবুলি পাখি মরে গেলে বালক সাহাবী খুব কাঁদতে লাগলেন। খবর শুনে পরে যখন নবী করিম সা. তাকে দেখতে পেলেন, তখনও তার মন খারাপ। হযরত সা. তখন ছন্দ মিলিয়ে বললেন, ‘ইয়া উমায়ের, মা ফাআলা বিকা আন নুগায়ের!’ অর্থাৎ হে প্রিয় উমায়ের, তোমার বুলবুলিটি তোমার সাথে এ কি করল! নবীজির এ উক্তি শুনে বালক উমায়ের রা. হেসে দিলেন। প্রিয় নবী নামাজ পড়ানোর সময় কোনো শিশুর কান্না শুনলে নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন। বলতেন, এর মা হয়তো মসজিদের জামাতে আছে। বাচ্ছাটি যেন দীর্ঘ সময় মা ছাড়া না থাকে। আর মা-টিও যেন নামাজে অস্থিরতায় না ভোগে এ জন্য আমি নামাজ ছোট করে শেষ করেছি।-আল হাদীস। নির্দেশ দিয়েছেন, নামাজে রোগী ও বৃদ্ধ মুসল্লীর দিকে খেয়াল করে নামাজ পড়াবে। তুরষ্কের কোনো কোনো মসজিদে পোস্টার লাগানো থাকে ‘যদি জামাতের সময় পেছনে শিশুর কলরব শোনা না যায়, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাপারে আমাদের ভয়ের কারণ আছে।’ এমনিতে তুর্কিরা প্রতি নামাজের পর সশব্দে বলে থাকেন, আল হামদুলিল্লাহি আলা নি’মাতিল ইসলাম। অর্থাৎ আমাদেরকে ইসলামে দাখিল করার জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ।
পবিত্র মক্কা-মদীনাসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আরবরা শিশুদের নিয়ে মসজিদে আসে। ইউরোপ-আমেরিকায় ইসলামিক সেন্টার তৈরিই করা হয় নামাজখানা, পাঠাগার, ডে-কেয়ার, শিশু কর্ণার, মিলনায়তন, ক্যাফে ইত্যাদি সমন্বয়ে। মসজিদ যেন মুসলমান সমাজের মিলন কেন্দ্র। আমাদের দেশে অধিকাংশ মসজিদে বড়রা শিশুদের যেন দু চোখে দেখতে পারেন না। শরীয়তে একটি নিয়ম আছে যখন নারী পুরুষ শিশু সম্মিলিত জামাত হতো, তখন প্রথম পুরুষেরা, মাঝে শিশুরা ও সবশেষে নারীরা জামাতে দাঁড়াতেন। যখন নবীজির ওফাতের পর সব সাহাবী একমত হয়ে মসজিদে নারীদের পাঁচ ওয়াক্ত আগমন রহিত করেন। নবীজির হাদীসেও এই ইশারা ছিল। বিশেষ করে হযরত আয়েশা রা. পরিবেশ বিশ্লেষন করে এ বিষয়ে কঠোর হন। এ বিষয়ে তিনি মহান খলীফাকেও পরামর্শ দেন। যে কারণে নারীদের পাঞ্জেগানা জামাতে উপস্থিতি শরীয়তে রহিত হয়। এখন শিশুদের নামাজের শেষ কাতারে দাঁড়াতে অসুবিধা কি? যারা বেশি ছোট তাদের অভিভাবকরা সাথে নিয়ে দাঁড়াবেন। প্রয়োজনে নিজে কাতারের শেষপ্রান্তে দাঁড়াবেন। শিশুরা স্বভাবসুলভ কলরব করবেই। যতদূর সম্ভব তাদের বোঝানো, এর বেশি কিছু নয়। তাদের সাথে দুরব্যবহারের প্রশ্নই উঠেনা। যারা নামাজে খুব মন বসাতে চান। তাদের জানা উচিত মসজিদ কেবল ফরজ জামাতের জন্য। আগে পরের বাকী সব নামাজ বাসায় পড়া সুন্নত। জরুরী কারণে আমরা মসজিদে পড়ি বটে, তবে এজন্য শিশুদের মসজিদে আসা বন্ধ করা কোনোক্রমেই ঠিক হবে না। কারণ, যদি এরা আজ নামাজে না আসে তাহলে আগামী দিনেও খুব একটা আসবে না। একদম শেষ বয়সে মসজিদে এসে যে এবাদত করবে এরচেয়ে তরুণ বয়সের এবাদত আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। শিশুদের হৈ চৈ নিয়ন্ত্রণের সুন্দর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, তারা শিশু। আরবীতে প্রবাদ আছে ‘আস সাবিয়্যু সাবিয়্যুন অলাও কানা নাবিয়্যান’ অর্থাৎ শিশু শিশুই, হোক সে নবী কিংবা ওলী। বড় হলে তার বালসুলভ চপলতা থাকবে না। কিন্তু ছোট বেলার অভ্যাস ও দীক্ষা তার ভ‚ষণ হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে বড়দের আচরণ ইসলামী আদব ও আখলাকের আলোকে হবে এ প্রত্যাশা নিয়ে বলতে চাই, মসজিদে শিশুদের সাথে উত্তম আচরণ করুন। এরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। বড়রা যখন থাকবেন না, মসজিদের সামনের কাতারগুলো যখন ধীরে ধীরে খালি হয়ে যাবে, তখন এই শিশুরাই সেসব কাতারে নামাজ পড়বে। তখন তারাই হবে বড় বড় মুসল্লি।



 

Show all comments
  • Javid ২৭ মে, ২০১৮, ১২:০১ এএম says : 0
    Wonderful write up, thanks mr nadvi,thanks inqilab...
    Total Reply(0) Reply
  • Javid ২৭ মে, ২০১৮, ১২:০৮ এএম says : 0
    Very good article.
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraf ২৭ মে, ২০১৮, ৩:৫৮ এএম says : 0
    We are happy. We like this newspaper. First-class column.
    Total Reply(0) Reply
  • MOSTAFIZUR RAHMAN ২৭ মে, ২০১৮, ৭:৫২ এএম says : 0
    Thank Allah who has given you the opportunity to write this topic. Also thanks and doa for you that May Allah grant you long time to serve the Muslim community in such new topics. Lastly thanks to the Inqilab personnel.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মসজিদ

১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ