পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা পুরোপুরি কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন উভয় দেশ ভবিষ্যতেও সহযোগিতার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত দুই প্রতিবেশী। আমরা এক হয়ে থাকতে চাই। ভবিষ্যতে যেকোনো সমস্যা আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে সমাধান করব। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের কৌশলগত বন্ধুত্বকে অপরাপর বিশ্বের জন্য ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দিতে পারি যে, উভয় দেশ সহযোগিতার এই মনোভাব ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে ভারত সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করেছি। ভবিষ্যতেও যেকোনও সমস্যা আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সমাধান করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, আমাদের শত্রæ একটাই, দারিদ্র্য। আমাদের এই অঞ্চলকে দারিদ্রমুক্ত ও ক্ষুধামুক্ত করতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চাই। সবাই মিলে কাজ করে এই অঞ্চলে কিছু করবো। বাংলাদেশকে একটা মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে তুলে ধরাই আমার লক্ষ্য। ভারতের মতো বন্ধু দেশ পাশে আছে। তাই মনে করি অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
গতকাল শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ ভবনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন সুদৃঢ় এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো জোরদার হবে। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে এটি ছোট এক টুকরো বাংলাদেশ, যেখান থেকে বাংলাদেশের চেতনা প্রতিপালিত হবে। রবীন্দ্রনাথের এই প্রভাব নিজস্বভাবেই অনন্য হয়ে উঠবে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে একত্রে চলতে চায় এবং এ লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যকার সব সমস্যার নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে আমাদের এখনো কিছু সমস্যা রয়েছে, যা আমি এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশের স্বার্থে এখানে তা উত্থাপন করতে চাই না। অবশ্য আমি বিশ্বাস করি যে বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে যে কোন সমস্যার সমাধান করা যায়। তিনি বলেন, রেহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশ। তারপরও আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। তবে ভারত সরকারের প্রতি আমাদের চাওয়া, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ারমার সরকারকে চাপ প্রয়োগ করুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ৯ বছরে বিভিন্ন খাতে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। পারস্পরিক সহযোগিতা পূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধনে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ ভবন দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ভবন হবে এমন একটি অনন্য কেন্দ্র যেখানে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, রবীন্দ্রনাথ এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে লেখাপড়া ও গবেষণা করতে পারবে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত চত্বরে বাংলাদেশ ভবন স্থাপনে তিনি অভিভূত। বিশ্ব ভারতী চত্বরে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের সুযোগ দেয়ার জন্য বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পশ্চিম বাংলা সরকার, ভারত সরকার ভারতের বন্ধুভাবাপূর্ণ জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিতল এই ভবনটি নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার প্রায় ২৫ কোটি রুপি ব্যয় করেছে এবং এই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কারের জন্য তিনি ১০ কোটি রুপির এককালীন তহবিল দেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বাংলাদেশকে তার হৃদয়ে ঘনিষ্ঠভাবে ধারণ করে রেখেছিলেন। তিনি তার জীবনের কিছুদিন বাংলাদেশের পতিসার, শিলাইদহ এবং শাহাজাদপুরে কাটিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথ এসব জায়গায় তার জমিদারী পর্যবেক্ষণের জন্য সফর করেন। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের পল্লী এলাকার প্রকৃতিকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন এবং পল্লীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য তিনি কৃষিভিত্তিক সমাজ ও অসাধারণ গান, কবিতা, উপন্যাস ও ছোট গল্প রচনা করতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব ভারতীর সঙ্গে তার সম্পর্ক মাত্র কিছুদিন আগে। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে ‘দেশীকুট্টুম’ পুরস্কার লাভের পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার সম্পর্ক। তিনি বলেন, আমরা রবীন্দ্রনাথের চেতনাকে আমাদের অন্তরে ধারণ করে রাখার জন্য সংগ্রাম করেছি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রবীন্দ্রনাথের গান আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে, সাহস ও শক্তি যুগিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাটি জীবন ক্ষুধা দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বঙ্গবন্ধুও বিশ্বাস করতেন সমাজে বৈষম্য দুর না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ব কখনোই উন্নতি লাভ করবে না। বঙ্গবন্ধুর নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এই দু’দেশের জনগণের মধ্যে অভিন্ন ঐতিহাসিক, সামাজিক, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং আবেগঘন সম্পর্ক রয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার পর ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি তাকে এবং তার বোন শেখ রেহানাকে আশ্রয় দেয়ায় ভারতের জনগণের প্রতি তিনি ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের জনগণ এই সমর্থন কখনো ভুলবে না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ভবন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রতীক হয়ে উঠবে। তিনি শান্তিনিকেতনে আসার জন্য এবং তার সঙ্গে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের সুযোগ লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর কেশরিনাথ ত্রিপাঠি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সবুজ কলি সেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা এবং সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, কবি, গায়ক এবং শিল্পীসহ উভয় দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
একই মঞ্চে হাসিনা-মোদি-মমতা
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ও বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দেশের তিন নেতা একই মঞ্চে উপস্থিত হন কলকাতার শান্তি নিকেতনে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ছাড়া ওই মঞ্চে যোগ দেন কোলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কোলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৃথক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গ সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন, বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে অংশগ্রহণ এবং আজ শনিবার আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রী গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
কলকাতার নেতাজী সুভাস বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নগরোন্নয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বিমানবন্দর থেকেই প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে বীরভূমের শান্তি নিকেতনের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট সফরসঙ্গীদের নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।
গতকালই কলকাতা ফিরে জোড়াসাকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতা চেম্বার নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।