Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বেহাল মহাসড়কে চাঁদাবাজি

জনদুর্ভোগ, বাড়ছে পরিবহন ভাড়া পণ্যমূল্য : ধর্মঘটের হুমকি

| প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : যানজট, ওজন স্কেলে হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এখন বেহাল দশা। মহাসড়কে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বেড়েছে পণ্য পরিবহন ভাড়া। এর প্রভাবে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের উপর। এদিকে মহাসড়কে ওজন স্কেলে হয়রানি ও পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে লাগাতার ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। মহাসড়কে দ্রæত শৃঙ্খলা আনা না গেলে ঈদের আগে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের আমদানি-রফতানির ৯০ শতাংশ পরিচালিত হয় প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সারাদেশ থেকে এসব রফতানি পণ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আবার শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্যের বিরাট অংশ যায় এ মহাসড়ক হয়ে। ফলে মহাসড়কে যানজট হলে দেশের সার্বিক আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি বাজারমূল্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অর্থনীতির গুরুত্ব বিবেচনা করে দেশের প্রধান মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হয়। কিন্তু এরপরও মহাসড়কে শৃঙ্খলা আসছে না। ফেনীর ফতেহপুরের রেল ওভারব্রিজ নির্মাণের কারণেও এক মাসের বেশি সময় তীব্র জটে অচল ছিল এ মহাসড়ক। ফতেহপুরে মহাসড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলেও যানজট পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। মহাসড়কে দুর্ঘটনায় বা অন্য কোন কারণে কোন যানবাহন বিকল হলেই তীব্র যানজট লেগে যাচ্ছে। আমদানি-রফতানি বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে বেড়েছে পরিবহনের চাপ। এ কারণেও যানজট হচ্ছে। রয়েছে ওজন স্কেলে হয়রানি। ওজন স্কেলকে ঘিরে মহাসড়কের দু’পাশে যানজট অনেকটা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে মহাসড়কে উঠার আগেই পোর্ট কানেকটিং রোডে যানজটের কবলে পড়ছে ভারী যানবাহনগুলো। সম্প্রসারণ কাজের জন্য এ সড়কে এখন চলছে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি। বৃষ্টির কারণে বড় বড় গর্ত হওয়ায় সড়কে আটকা পড়ছে ভারী যানবাহন। মহাসড়কের এ বেহাল অবস্থায় পরিবহন সময় বেশি লাগার কারণে ট্রাক ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে মালিক সংগঠন। অন্যান্য যানবাহনের ভাড়াও বেড়েছে। মহাসড়কে শৃঙ্খলা আনতে ব্যর্থ হচ্ছে হাইওয়ে ও থানা পুলিশ।
এদিকে ওজন স্কেলগুলোতে হয়রানির অভিযোগ করছেন পরিবহন চালকেরা। তারা বলছেন, ওজন স্কেলে হয়রানি করার পাশাপাশি পুলিশও চাঁদাবাজি করছে। অন্তত রমজান মাসে ওজন স্কেল বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। তারা উভয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে পত্র লিখেন। তবে এ আহŸানে কোন সাড়া মেলেনি এখনো। মেয়র তার চিঠিতে শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ব্যয় লাঘব করতে লোড নিয়ন্ত্রণ স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন। তা না হলে রমজানে পণ্যমূল্য বেড়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মেয়র বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে দুই এক্সেল (ছয় চাকা) বিশিষ্ট মোটরযানের মাধ্যমে মাত্র ১৩ টন ওজন নির্দিষ্ট করে দেওয়ার ফলে পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল, ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয় কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের অন্য কোনো মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণের কারণে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে মানুষ এসব পদক্ষেপের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে।
ধর্মঘটের হুমকি
ওজন স্কেলে হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে ঈদের পর অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেন আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কভার্ডভ্যান মালিক সমিতি এবং চট্টগ্রাম ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। সমিতির আহŸায়ক মোঃ নুরুল আবছার বলেন, বড় দারোগারহাটের ওজন স্কেলে ট্রাক এবং কার্ভাড ভ্যানে পণ্য সরকার নির্ধারিত সীমার চেয়ে কম থাকলেও বেশি আছে বলে হয়রানি করা হয়। এছাড়া মহাসড়ক ও টার্মিনালে পুলিশ এবং শ্রমিক-মালিক সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে। পবিত্র রমজান মাস তাই আমরা পণ্য পরিবহন বন্ধ করতে চাই না। অতিরিক্ত মালামাল আছে বলে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে ওজন স্কেল থেকে গাড়ি ছাড়া হয়। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও সেখানে চাঁদার জন্য চালক-সহকারীদের মারধর করা হয়েছে। চলমান সমস্যাগুলো অবিলম্বে সমাধান না হলে ঈদের পর ঢাকা-চট্টগ্রামের সব ধরণের পণ্য পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।
সমিতির সদস্য সচিব দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, মহাসড়কের দাউদকান্দি সেতুর পাশে আরেকটি ওজন স্কেল আছে যেটি সেনাবাহিনী পরিচালনা করে। পণ্যসহ গাড়ির সরকার অনুমোদিত ওজন ২২ টন। দাউদকান্দির ওজন স্কেলে ১শ’ বা ২শ’ কেজি ওজন বেশি হলেও হয়রানি করা হয় না। সেখানে ওজন নির্ধারণও সঠিকভাবে করা হয়। তাহলে একটি স্কেলে যদি সঠিক ওজন আসে অন্য স্কেলে কেন ভিন্ন ওজন আসবে। এ ওজন স্কেল সড়ক বিভাগের পরিবর্তে সেনাবাহিনী দিয়ে পরিচালনা করা হোক। তিনি বলেন, বড় দারোগারহাটের ওজন স্কেলে একটি গাড়ির পণ্য ওজন করার জন্য ১০ মিনিট সময় লাগে। এতে যাত্রীবাহী বাসের সাধারণ যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কে আটকা পড়েন। এভাবে একটি দেশের মহাসড়ক চলতে পারে না। পরিবহন মালিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ