Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৭ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ সফর ১৪৪৬ হিজরী

দিনাজপুরে রেলের টিকিট কালোবাজারি কোটার বাণিজ্যে আঙুল ফুলে কলাগাছ

| প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে : কে পাচ্ছে কার কোটার সুবিধা !! যাদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে আন্তঃনগর ট্রেনসমূহের টিকেট সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে তারা এ সর্ম্পকে কিছুই জানে না। কোটা’র বাণিজ্যে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি ভ্যান চালক ও হোটেল বয়। প্রতিবন্ধী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, এমপি, সরকারী কর্মকর্তা এরকম বিভিন্ন পেশার মানুষের জন্য রাখা কোটার টিকেট নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট। অথচ যাদের জন্য কোটা তারাই একটি টিকেটের জন্য ধরনা দিয়ে থাকেন কাউন্টার, রেল কর্মকর্তা থেকে কালোবাজারীদের কাছে। সড়কের বেহাল দশায় এবং ট্রেনের মানউন্নয়নের কারণে ট্রেনের উপর যাত্রীদের আস্থা বেড়ে গেছে। যাত্রীদের আস্থাকে পুঁজি করে রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে রেলের টিকেট কালোবাজারি’র সিন্ডিকেট বছর জুড়েই সক্রিয় থাকলেও ঈদের আগে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঈদের ১০ দিন আগের এসি কেবিন, নন এসি কেবিন এসি চেয়ার, নন এসি চেয়ার এর টিকেটগুলি সোনার হরিণের মত হয়ে যায়। এসব টিকেট দ্বিগুণ অনেক ক্ষেত্রে তিনগুণ মূল্যেও পাওয়া যায় না। এসব টিকেট রিজার্ভ আকারে থাকে সুপারিনটেনডেন্টয়ের কাছে। কাউন্টার ও কাউন্টারের বাহিরে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অন-লাইন টিকেট বিক্রেতারা আগে ভাগেই টিকেট কিনে নেন। সরেজমিনে কয়েকদিন ধরে দিনাজপুর স্টেশন এলাকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, টিকেট কাউন্টারের সামনে প্রকাশ্যে টিকেট বিক্রি করছে কালোবাজারি হোটেল বয় থেকে চিহ্নিত কয়েকজন যুবক। সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অন-লাইনের টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। ফাস্ট ফুডের পাশাপাশি চোরাপথের টিকেট রীতিমত খাতায় এন্টি করে বিক্রি করছে। প্লাটফরমের বাহিরে স্টেশন চত্বর এলাকার একটি পান দোকান প্রকাশ্যই টিকেট বিক্রি করছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে টিকেটের অতিরিক্ত মূল্য ঠিকঠাক হয়ে গেলেই ঐ দালাল প্লিজ ওয়ান মিনিট বলেই কাউন্টারে অথবা ষ্টেশন সুপারের কাছে পৌঁছে যাচেছ এবং কাংখিত টিকেট নিয়ে ফিরে আসছে। বিশ্বস্থ একটি সূত্র জানিয়েছে, দিনাজপুর থেকে ঢাকা যাতায়াতকারী দ্রæতযান ও একতা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন রিজার্ভ রাখা হয়। যার কিছু সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক আর কিছু স্থানীয় এমপি বা মন্ত্রীর বিশেষ অনুরোধের কিছু সিট রিজার্ভ হিসাবে ধরে রাখা হয়। সূত্রটির মতে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ৪টি, কর্মকর্তাদের ৩ টি ও এমপি, বিচারপতিগণের জন্য ৩ এসি বাথ, প্রতিবন্ধিদের জন্য ১০ টি আসন এবং সরকার দলীয় এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধক্রমে এসি ছাড়া ২টি কেবিন ও এসি চেয়ার ১৫টি টিকেট রিজার্ভ রাখা হয়। যাদের জন্য এই রিজার্ভ তারা জানেন না তাদের কোটার আসন তথা টিকেটগুলি কে ভোগ করছে। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে রিজার্ভের এই আসনগুলি কতক্ষণ অর্থাৎ ট্রেন ছাড়ার কতক্ষণ আগে পর্যন্ত রিজার্ভ হিসাবে ধরে রাখা যাবে এরকম কোন নীতিমালা নেই। অর্থাৎ স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ড ইচ্ছেমত এই রিজার্ভ আসনগুলির সুবিধা নিয়ে থাকেন। যার অধিকাংশই কালোবাজারিদের হাতে চলে যায়। অপর একটি সূত্র মতে দীর্ঘদিন ধরে দিনাজপুর টিকেট কাউন্টারে কর্মরত ক ও ম প্রথম অক্ষরযুক্ত দু’জন টিকেট মাস্টার সরাসরি কালোবাজারির সাথে জড়িত। প্লাটফরম চত্বর ছাড়াও রোলেক্স বেকারীর পার্শ্বে একটি টেইলার্স, আবু, বুড়া, নুরুন্নবী, ওমর, নয়নসহ আরো অনেকেই এখন ট্রেনের টিকেট বিক্রির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট যদি টিকেট বিক্রিতে স¦চ্ছতা বজায় না রাখেন তাহলে কালোবাজারি রোধ করা সম্ভব হবে না। ঘরমুখো ঈদ ফেরত যাত্রীদের দুর্ভোগ শেষ হবে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ