Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বাড়ছে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় চট্টগ্রামে জমির দাম বাড়ছে লাফিয়ে

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামে জমির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এলাকাভেদে জমির দাম কাঠায় ৩০ লাখ থেকে কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আর এই কারণে বাড়ছে উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয়ও। তার উপর প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিতে ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আগে থেকেই ভূমি অধিগ্রহণ না করায় প্রকল্প ব্যয়বৃদ্ধি ঠেকানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে জমির মূল্যবৃদ্ধি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নেও।
বিগত ২০১৪ সালে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় একটি খাল খনন প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। তখনও ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৩২৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের জন্য ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচ ধরা হয় ২২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও পর্যাপ্ত অর্থছাড় না করাসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। আর এখন ওই জমির মূল্য অন্তত চার গুণ বেড়ে ১১০৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। একই সাথে প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে এই প্রকল্পটি নেওয়া হলেও অর্থের অভাবে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। নতুন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে অনুমোদনের জন্য তা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
একই অবস্থা চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পেরও। নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ওপর ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ আউটার রিংরোড নির্মাণের জন্য ২০০৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরে সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় বার সংশোধন করে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। প্রকল্প গ্রহণ করে তা বারবার সংশোধন করতেই ওই এলাকায় ভূমির দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
ফলে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে যায়। উপকূলের ৪৫.৯৬ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৮৫ ভাগ শেষ হলেও শেষ হয়নি ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্পের পরিচালক সিডিএর তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস গতকাল সোমবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ কাজ পুরো শেষ হয়নি। তবে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ যাবতীয় অর্থ জেলা প্রশাসনে জমা দেয়া হয়েছে। এখন বৃষ্টির কারণে কাজ বিঘিœত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পের বাকি ১৫ শতাংশ কাজ আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ করা হবে। জমির দাম বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে বলেও জানান তিনি। প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ না হলেও সিডিএ তাদের নানা প্রচারণায় আউটার রিং রোড প্রকল্পটি ঘুরে ফিরে দেখাচ্ছে। স্বঘোষিত ‘কর্মবীর’ সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বাহবা কুড়াতে যে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাতে অনেক প্রকল্পের সাথে এ প্রকল্পে ড্যামিও ঘুরে ফিরে দেখানো হচ্ছে। অথচ প্রকল্পের কাজ এখনো অনেক বাকি। সিডিএর আরও অনেক প্রকল্পে এমন ধীরগতি চলছে। আর এ ধীরগতির কারণে উন্নয়ন ব্যয়ও বাড়ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন প্রকল্প, সেতু বিভাগের কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের জন্যও ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। আর জমির দাম দ্রæত বাড়তে থাকায় প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ সাদার্ন ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ বলেন, ভূমির মূল্যবৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় কমাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই ভূমি অধিগ্রহণ করে রাখা যেতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নগরীর কোন এলাকায় কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে তার একটি পরিকল্পনা থাকে। সে অনুযায়ী আগে থেকেই জমি অধিগ্রহণ করে রাখলে জমির মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না। যাদের পূর্বপুরুষের ভিটেবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্প অধিগ্রহণ করা হচ্ছে তাদেরও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার যেকোনো জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। তা না করলে তাদের আদালতে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। এক্ষেত্রে আদালত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দিতে পারে।
এদিকে জমির মূল্যবৃদ্ধির কারণে আবাসন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সঙ্কটে পড়েছেন নতুন উদ্যোক্তারাও। শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য মহানগরী তো দূরের কথা গ্রামেও ন্যায্যমূল্যে জায়গা মিলছে না। বিজিএমইএ’র একজন কর্মকর্তা জানান, জমির মূল্য এতই বেড়েছে উদ্যোক্তাদের পুঁজির অর্ধেকের বেশি জমি কিনতেই চলে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই নতুন বিনিয়োগের শিল্প কারখানা স্থাপনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। জমি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে শিল্পায়নে। অনেক উদ্যোক্তা অর্থ নিয়ে বসে থাকলেও জমি সংকটে করতে পারছেন না বিনিয়োগ। জমির দাম সহনীয় পর্যায়ে না আনলে আগামীতে ব্যবসা কিংবা আবাসন সংকট কোনটাই স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে না বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এক কাঠা জমি কিনতে গুণতে হচ্ছে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত। জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন বাড়ছে চট্টগ্রাম মহানগরীমুখী মানুষের স্রোত। বাড়ছে বাসস্থানের চাহিদা, সেই সাথে কর্মসংস্থানের আকাঙ্খাও। কল-কারখানা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন অথবা মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই পাওয়া এ নগরে বেশ কঠিন। প্রধান কারণ জমির দাম। এলাকা ভেদে কাঠা প্রতি জমি বিক্রি হচ্ছে ৩০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকায়। যা কেনার সামর্থ অনেকের নেই। নগরীর নাসিরাবাদ, হিল ভিউ, খুলশী, ওআর নিজাম রোড, সার্সন রোড কিংবা লালখান বাজার এলাকায় কাঠা প্রতি গুণতে হয় সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা। তুলনামূলক কিছুটা কম হলেও চান্দগাঁও, জালালাবাদ, বাকলিয়া কিংবা মোহরা এলাকায় দাম কাঠা প্রতি ৩০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা। আর শিল্পাঞ্চল নাসিরাবাদ, কালুরঘাট ও বায়েজিদ বোস্তামীতে যা ১ কোটি টাকা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ