Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আবারো নতুন ভুলের জালে স্থানীয় সরকার বিভাগ

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সীমানা নিয়ে জটিলতা

| প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


বিশেষ সংবাদদাতা : নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে সিটি করপোরেশনের সীমানায় সেনানিবাসের কোন অংশ থাকতে পারবে না। কিন্তু এ নীতিমালা লঙ্ঘন করেই ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার)।
আর এ প্রস্তাব অনুমোদনের পর পরই সদ্য ঘোষিত এ নতুন সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশের প্রক্রিয়া শুরুর পর পরই ধরা পড়েছে বড় এক ভুল। এ বিষয়টি জানাজানি হবার পর স্থানীয় সরকার বিভাগ নিজেদের ‘ভুল’ আড়াল করতে তড়িঘড়ি করে প্রায় এক বর্গ কিলোমিটারের বেশি জায়গা বাদ দিয়েই গেজেট প্রকাশের তোড়জোড় শুরু করেছে।
তবে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, ওই জায়গাটুকু বাদ দিয়ে সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণ করা হলে স্থানীয় সরকার বিভাগ পুনরায় একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মতো আবারো আইনি জটিলতায় আটকে যেতে পারে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বাস্তবেও এমনটি ঘটলে ময়মনসিংহবাসীকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর এ উপহারের সুফল মিলবে না। এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস ইনকিলাবকে বলেন, আইন অনুযায়ী ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সীমানায় ক্যান্টনম্যান্টের জায়গা থাকতে পারে না। ভুলবশত কয়েকটি দাগ পড়েছে। ওই জায়গা বাদ দিয়েই গেজেট প্রকাশের কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
স্থানীয়রা বলছেন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন বহু আকাঙ্খিত একটি বিষয়। এটি সরকারেরও একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এখানকার বাসিন্দারাও চায় দ্রæত নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরু হোক এবং কাঙ্খিত উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হোক। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খামখেয়ালী সিদ্ধান্তের কারণে এ স্বপ্ন বাঁধাগ্রস্থ হওয়ার পথের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
স্থানীয় সরকারের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, এটি যথাযথভাবে নিয়ম মেনেই করা উচিত। নইলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় দুর্ভোগ পোহাতে হবে এই এলাকার জনগণকে।
জানা যায়, প্রায় দেড় মাস আগে ৯১ দশমিক ৩১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে দ্বাদশ সিটি করপোরেশন হিসেবে ময়মনসিংহের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার)। কিন্তু ওই সভায় অনুমোদনকৃত সীমানায় ময়মনসিংহ ক্যান্টনম্যান্টের প্রায় ১ দশমিক ১৫ বর্গ কিলোমিটার জায়গা থাকায় গেজেট প্রকাশে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আর এ জটিলতার জন্য দায়ী করা হচ্ছে সীমানা নির্ধারণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের চরম উদাসীনতা ও গাফিলতিকেই।
তাদের এ ভুলের কারণেই করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণে নীতিমালাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এ অবস্থায় গেজেট প্রকাশের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগ ময়মনসিংহ সেনানিবাসের ওই জায়গাটুকু বাদ দিয়ে নিজেদের ভুল সংশোধনের সুযোগ চেয়ে গত ২৬ এপ্রিল এ সংক্রান্ত নথি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে পাঠিয়েছে।
তবে এ বিষয়টিতে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগ কোন সাড়া না দিয়ে উল্টো ব্যাখ্যা চেয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই লেজিসলেটিভ বিভাগ এ বিষয়ে মতামত দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র মতে, নিয়মের পথে না হেঁটে স্থানীয় সরকার বিভাগ ওই অংশটুকু বাদ দিয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের আকার কমিয়ে গেজেট প্রকাশ করতে চাচ্ছে। মূলত যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ভুলভ্রান্তি রেখেই অতি গোপনীয়ভাবে তড়িঘড়ি করে দায়সারাভাবে গেজেট প্রকাশের বাদ বাকী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তৎপরতা চালাচ্ছে এ বিভাগের কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত তারা এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে বিষয়টি নিয়ে কেউ আদালতের দ্বারস্থ হলে নতুন এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনও ঝুলে যেতে পারে।
জানা যায়, চলতি বছরের ০২ এপ্রিল ময়মনসিংহ পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে ময়মনসিংহকে দেশের দ্বাদশ সিটি করপোরেশন হিসেবে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। নবীন এ সিটি করপোরেশনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৫ হাজার ১৬৭ জন। এ হিসেবে নতুন এ মহানগরে মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ৭১ হাজার ৮৫৮ জন।
ওইদিনই ময়মনসিংহ পৌরসভার এবং সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে দু’টি পুরোপুরি (বয়ড়া ও আকুয়া) এবং ছয়টির (চরঈশ্বরদিয়া, দাপুনিয়া, খাগডহর, ভাবখালী, সিরতা ও চরনিলক্ষীয়ার আংশিক) সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম।
সূত্র মতে, এ সিদ্ধান্তের পর পরই স্থানীয় সরকার বিভাগ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের গেজেট প্রকাশের উদ্যোগ নেয়। এরপরই সীমানা নির্ধারণে নীতিমালা না মানার বিষয়টি ধরা পড়ে। এতে দেখা যায়, এ সিটি করপোরেশনের অনুমোদনকৃত সীমানায় আকুয়া মৌজায় ময়মনসিংহ সেনানিবাসের এক বর্গকিলোমিটারের বেশি জায়গা পড়েছে। এর মধ্যে সেনানিবাসের আকুয়া মৌজায় ১০৪ নম্বর জেএলের এক দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ৪৬৮টি দাগ রয়েছে। এ বিষয়টি জানাজানি হবার পরই তোলপাড় শুরু হয়।
একই সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন গঠনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) প্রতিষ্ঠা বিধিমালার ৫ ধারা অনুযায়ী কোনো গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। মূলত উচ্চ পর্যায়ের চাপের কারণে তড়িঘড়ি করে সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারির পথে হাঁটেনি সংশ্লিষ্টরা। অথচ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে এ ধরণের বড় ভুল এড়ানো সম্ভব ছিল।
এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: মাহাবুব হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা দাগগুলোর ভুল সংশোধন করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলেছি। এ ভুল সংশোধন করেই গেজেট প্রকাশ করা হবে।
একই ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ড.মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, সচিব পর্যায়ে এ সংক্রান্ত কাজ শেষ। এখন মন্ত্রীর টেবিলে নথি থাকতে পারে। তবে গেজেট প্রকাশের এ বিষয়টি নির্ভর করে মূলত স্থানীয় সরকার বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপর।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ