Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যাংকিং খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার কোটি টাকা

আসন্ন বাজেট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অন্যান্য বছরের ন্যয় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। যা বর্তমান অর্থবছরে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। আর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি প্রায় তিনগুণ। বেসরকারি উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ঋণ দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলো যেন বেসরকারি ঋণ প্রবাহে ব্যাঘাত না ঘটায়। কারণ ঋণ প্রবাহ কমে গেলে বিনিয়োগ হোঁচট খাবে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যয় করা হয় না। ব্যাংক থেকে ঋণ না নিতে হতে পারে। আর নিলেও তাতে বেসরকারি ঋণ প্রবাহে তেমন বিঘœ হবে না।

সূত্র জানায়, এবারের বাজেটে একদিকে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হতে পারে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের খুশি রাখতে করপোরেট করের হারও কমানো হতে পারে। এর ফলে বাজেটে যে ঘাটতি হবে, তা পূরণ করতে ব্যাংক থেকে মোটা দাগের ঋণ নিতে হবে সরকারকে। এই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫৯ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা, যা বর্তমান অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। আর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় তিনগুণ।
জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ৫৯ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে এই খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৩৯ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা বেশি।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এতে কোনো ভাবেই যেন ব্যক্তি উদ্যোক্তারা ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সবকিছুই নির্ভর করে বিনিয়োগের ওপর।
অতএব বিনিয়োগ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঋণ সরবরাহ চলমান রাখতে হবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। প্রকৃত অর্থে ব্যাংকে কোনো তারল্য সংকট নেই মন্তব্য করে রপ্তানিকারকদের সংগঠন ইএবির সভাপতি ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক সালাম মুর্শেদী বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অর্থের ৮০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু সরকারি ব্যাংকের বিনিয়োগ হয় মাত্র ২৫ শতাংশ। এতে প্রায় ৭৫ শতাংশই অর্থ অলস পড়ে থাকে। তিনি বলেন, সরকারি অর্থের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা যথা সম্ভব দ্রæত বাস্তবায়ন করা জরুরি। এতে তারল্য সংকটের ভীতি দূর হবে এবং বিনিয়োগ বাড়বে। তখন সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিলেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে না। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেট তো হচ্ছে কাগজের বাজেট। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে কিন্তু ব্যয় করা হবে না। অতএব এত ঋণ নেয়ার দরকারও হবে না। তিনি বলেন, গত ৩/৪ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তার চেয়ে ৩ গুণ বেশি নেয়া হয়। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার তেমন বেশি প্রয়োজন হয় না। এবারও তা হতে পারে। তিনি বলেনÑ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেও সমস্যা তেমন হবে না। তবে এতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমতে পারে। ফলে হয়তো উদ্যোক্তারা চাহিদা মতো ঋণ পাবে না।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমালে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া লাগতে পারে। তবে এতে ব্যাংক খাতে চাপ বাড়বে বলে মনে হয় না।
জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছিল মাত্র ৫১৪ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ২৩ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। আগামী বাজেটকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ পর্যায়ের সংগঠন ডিসিসিআই ও এফবিসিসিআই। এছাড়া করপোরেট কর হার কমানোরও প্রস্তাব করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স¤প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়-এমন কোনও পদক্ষেপ নেয়া হবে না বাজেটে। কারণ এবার নির্বাচনী বছর। নির্বাচনী বছরে নতুন উদ্যোগ না নিয়ে পুরনোগুলো শেষ করার ওপর জোর দেয়া হবে। এছাড়া স¤প্রতি প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোরও পাশাপাশি করপোরেট ট্যাক্স কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার হতে পারে ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। আগামী ৭ জুন জাতীয় সংসদে তা উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ