Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বুয়েটের জরিপ প্রকাশ যানজটে বছরে ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় উঠে এসেছে। ঢাকা মহানগরীতে যানজটে প্রতিদিন ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়ে বলে ২০১৭ সালে বিশ্ব ব্যাংক হিসাব দেখিয়েছিল; এক বছর পর বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই অঙ্কটি ৫০ লাখ কর্ম ঘণ্টা। এই হিসাবে যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যা জাতীয় বাজেটের ১১ ভাগের এক ভাগ।
ইনস্টিটিউটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলছেন, নগরের যানজট যদি ৬০ শতাংশ কমানো যায় তবে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব। গতকাল বুয়েটে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। ‘গণপরিবহনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং যানজট নিরসনের পরিকল্পনা রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তি ও বাস্তবায়নে অঙ্গীকার’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় ১৬টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ৮টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির কেউ এই আলোচনায় অংশ নেননি। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। আরও বক্তব্য দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন, চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জাসদের নাদের চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, বিকল্পধারার ওমর ফারুক।
অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন গবেষণা প্রতিবেদনে যানজটের কারণে সময় নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতির হিসাব দেখিছেন। তিনি বলেন, ঢাকায় যানজটের কারণে পিক আওয়ারে গণপরিবহনগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। যেখানে পায়ে হেঁটে চলার গড় গতিও ৫ কিলোমিটার। ফলে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজটে প্রতি বছর ৩৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকা শহরে গণপরিবহনগুলা প্রতিদিন ৩৬ লাখ ট্রিপে ৩৫ শতাংশ যাত্রীকে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
যানজটের প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, যানজটের কারণে মানব চরিত্রের নয়টি দিক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগে প্রভাব পড়ছে। গণপরিবহনে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে তার প্রতিবেদনে। নগরের যানবাহন পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনতে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দেন অধ্যাপক মোয়াজ্জেম। এখন ঢাকায় দেড়শ থেকে দুইশ বাস সার্ভিস চলছে। এটাকে প্রতিটি রুটে একটি করে কোম্পানিকে দায়িত্ব দিলে ভালো হয়। এতে করে সড়কে প্রতিযোগিতা কমবে।
আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো সম্পূর্ণভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শও দেন তিনি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিটিসিএ, সিসিএস, রাজউক, আরএইডি, এলজিইডি, বিআরটিএর মধ্যে একটি সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। পরিবহন খাতে ভর্তুকি দেয়ার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম বলেন, বছরে ১ হাজার কোটি টাকা সাবসিডিয়ারি দিয়ে বছরে যদি ৫ হাজার কোটি টাকা লাভ করতে পারি, তবে সেখানে সাবসিডিয়ারি দিলে ক্ষতি কোথায়? সড়কে ব্যর্থতার দায় নিয়ে স¤প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মন্তব্যের সমালোচনাও করেন বুয়েটের এই অধ্যাপক। ঢাকা শহরের মোট দুর্ঘটনার ৭৪ শতাংশ পথচারী পারাপারের সময় ঘটে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স দিতে আরও বেশি সতর্ক হওয়া, নগরে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা, বাইসাইকেল লেইন ও হাঁটার পথ তৈরি করার পরামর্শ দেয়া হয়।
কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমাদের গাড়ি ভালো না, রাস্তা ভালো না, ড্রাইভার ভালো না। এগুলো সবই ভালো করতে হবে। তাহলেই সুফল পাওয়া যাবে। চালকদের মূল্যায়ন করতে হবে, তাদের সম্মান দিতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে চালক ও যারা রান্না করে তাদের মূল্যায়ন হয় না। কিন্তু তাদেরেই বেশি মূল্যায়ন করা উচিত। সেটা উন্নত দেশে হয়।
নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সড়কে এত মৃত্যুর মিছিল, বাসের চাপায় মানুষ মারা যাচ্ছে, সরকারের নেতারা বলছেন ‘আমরা কি বাস চালাই?’ ‘সড়কে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে’ সরকার এমন দাবি কেমনে করে? সড়কে মানুষের মৃত্যুর দায় সরকারকেই নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার দলীয় নেতারা হৃদয়হীন আচরণ করছেন, হাত চলে যাচ্ছে যাত্রীর। বলা হচ্ছে হাত বের করে রাখলে যাবেই তো।’ তিনি বলেন, ‘সড়কে যান নিয়ন্ত্রণে পলিসি মেকিংয়ের কথা বলি, ফান্ডামেন্টালের কথা বলছি, আমি বলব এখন একটা সোস্যাল মুভমেন্ট দরকার। এতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্তি না হলে কোনো কিছুই সম্ভব নয়।’
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক নিয়ে আমি ২৪ বছর ধরে কথা বলে আসছি। পলিটিশিয়ানরা যতক্ষণ পর্যন্ত ঠিক না হবে এটা ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক হবে না। রাষ্ট্রের লিডারদের নৈতিকতা থাকতে হবে।’ নগরে অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অপরিকল্পিত ফ্লাইওভারের কারণে কাঙ্খিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ যেখানে গাড়িগুলো নামছে সেখানে এসে আবার বসে রয়েছে।’

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ