Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

‘ছোট বউ’ হয়ে ব্রিটিশ রাজ পরিবারে মেগান মার্কেল

প্রিন্স হ্যারির রূপকথার বিয়ে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৫ এএম, ২০ মে, ২০১৮

দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে বৃটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লসের কনিষ্ঠ পুত্র প্রিন্স হ্যারি ও মার্কিন টিভি অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের রূপকথার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার লন্ডনের উইন্ডসর ক্যাসলে এক চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল গির্জায় ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ এবং ৬০০ নিমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিতিতে প্রিন্সেস ডায়ানার ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেল বিয়ের শপথ-বাক্য পাঠ এবং আংটি বদল করেন। ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্লেয়ার ওয়েইট কেলারের তৈরি বিয়ের পোশাক পরে হবু ‘ছোট বউ’ যখন গির্জায় এসে হাজির হন তখন শ্বশুর প্রিন্স চার্লস তার হাত ধরে তাকে বিয়ের মঞ্চ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যান।
হবু শ্বশুর প্রিন্স চার্লসের হাত ধরে বিয়ের মঞ্চে হাজির হন মেগান মার্কেল। আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন বর প্রিন্স হ্যারি এবং তাঁর ভাই ও বেস্ট ম্যান প্রিন্স উইলিয়াম। এরপর মঞ্চে উপস্থিত যাজক বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। হ্যারি ও মেগানের বিয়ে পড়ান সেন্টারবুরির যাজক জাস্টিন উইলবি।
সাদা ধবধবে পোশাকে বিয়ের জন্য গির্জায় হাজির হন মেগান মার্কেল। তাঁর বিয়ের দীর্ঘ পোশাক ধরে ছিলেন প্রিন্স উইলিয়ামের ছেলে প্রিন্স জর্জ। ছোট নাতির বিয়েতে হাজির হন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। একটি ছাদ খোলা গাড়িতে স্বামী প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে করে গির্জায় হাজির হন রানি। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে প্রিন্স হ্যারির ভাই ডিউক অফ কেমব্রিজ উইলিয়াম, মামা আর্ল স্পেন্সার, ডাচেস অফ ইয়র্ক সারাহ্ ফার্গুসন এই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মেসহ কোন রাজনীতিককে এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কারণ এটি কোন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ছিল না।
বিবিসির রাজপরিবার সংক্রান্ত সংবাদদাতা জনি ডাইমন্ড বলছেন, যেভাবে পুরো অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল, সেই বিবেচনায় এটি ছিল সম্প‚র্ণ ভিন্ন ধরনের এক রাজকীয় অনুষ্ঠান। অন্যান্য বিয়ের অনুষ্ঠানের যেমনটি আগে দেখা গেছে, এই বিয়েতে বড় বড় কেক তৈরি করা হয়নি। রাজকীয় অনুষ্ঠানে গির্জার মধ্যে এবার গসপেল কয়্যার সামগান পরিবেশন করেছে।
উইন্ডসর প্রাসাদে এই প্রথমবারের মতো সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে ১২০০ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
১৯৯৭ সালে প্রিন্স হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়ের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাকে ‘পিপলস প্রিন্সেস’ অর্থাৎ জনগণের রাজকুমারী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু নানা আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই বিয়েও জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে বলে জনি ডাইমন্ড বলছেন। বিয়ের পর প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের উপাধি হবে ডিউক এবং ডাচেস অফ সাসেক্স। বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমরিকান টকে-শো হোস্ট অপরাহ্ উইনফ্রে, অভিনেতা জর্জ ক্লুনি ও তার স্ত্রী আমাল, সাবেক ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম ও তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া, টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস এবং গায়ক এল্টন জন। এই বিয়ে উপলক্ষে লক্ষাধিক মানুষ উইন্ডসরে হাজির হন। সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ টেলিভিশনে এই বিয়ের অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করেন।
শুরুতেই হেঁটে গির্জার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন প্রিন্স হ্যারি হ্যারি ও উইলিয়াম। এসময় তাঁরা রাস্তায় দ’ুপাশে থাকা ভিড়ের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এর আগে মায়ের সঙ্গে গাড়িতে চার্চের উদ্দেশে রওয়ানা হন পাত্রী মেগান মার্কেল। বিয়ে পড়ানো শেষে উইন্ডসর শহরে ঘোড়ার গাড়িতে নবদম্পতি ঘুরে বেড়ান। সেখানে নবদম্পতিদের অভ্যর্থনা জানান অতিথিরা। সন্ধ্যায় ফ্রগমোর হাউসে হ্যারি- মেগানের সম্মানে দুই শতাধিক ঘনিষ্ঠ অতিথিদের উপস্থিতিতে প্রিন্স চার্লসের উদ্যোগে বিশেষ পার্টি অনুষ্ঠিত হয়।
‘অসাধারণ লাগছে তোমায়’
চোখমুখে ধরা পড়ছিল উদ্বেগ। বড় ভাই উইলিয়ামের পাশে বসে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর প্রিয়তমার জন্য। সাদা গাউনে রাজকীয় সাজে হবু স্ত্রী মেগান মার্কল যখন চ্যাপেলের ভিতর প্রবেশ করলেন, তখন আর নিজেকে ধরতে রাখতে পারলেন না ডিউক অফ সাসেক্স হ্যারি। বিয়ের আসরে হবু স্ত্রীকে প্রথম দেখা মাত্রই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন হ্যারি। পানি চলে আসে তাঁর চোখে। হবু স্ত্রী মেগানের হাত ধরে হ্যারি বলেন, ‘অসাধারণ লাগছে তোমায়’। নিজের প্রিয় মানুষটির মুখে বিশেষ দিনে এমন প্রশংসা শুনে খুশি ছলকে ওঠে মেগানে চোখেমুখে। আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মেগানও। বিয়ের অনুষ্ঠানের সারা সময়ই মেগানের হাত শক্ত করে ধরে থাকতে দেখা যায় হ্যারিকে।
উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে বসে বিয়ের আসর। রাজপরিবারের রূপকথার বিয়ের সাক্ষী থাকতে প্রায় লাখের উপর মানুষ এদিন ভিড় জমান উইন্ডসরে। বিয়ের আসরে রাজরানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সহ উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের বাকি সদস্যরা। উপস্থিত ছিলেন হলিউডের তারকারাও। ২০০০-এর উপর আমন্ত্রিত সদস্য যোগ দেন রাজ পরিবারের বিবাহ অনুষ্ঠানে।
রোলস রয়্যালস থেকে নেমে গুনে গুনে ১১০ পা একাই হেঁটে চ্যাপেলের ভিতরে প্রবেশ করেন মেগান। এরপর যুবরাজ চার্লস হাত ধরে মেগানকে নিয়ে আসেন বিয়ের আসরে, ছেলে হ্যারির কাছে। এজন্য বাবাকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি হ্যারি। যুবরাজ চার্লসকে উদ্দেশ করে হ্যারিকে বলতে শোনা যায়, “থ্যাঙ্ক ইউ, পা।”
বিয়ের আসরে প্রাক্তন প্রেমিকারা
প্রেম ভেঙেছে আজ ৮ বছর। কিন্তু, যুবরাজ হ্যারির বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন প্রেমিকা চেলসি ডেভি। নেহতাই বন্ধুত্বের খাতিরে। যদিও নিন্দুকেরা বলছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে মেগানকে দেখেই যেন কিছুটা ‘চুপচাপ’ হয়ে যান চেলসি। ‘আক্ষেপ’ ধরা পড়ে চেলসির চোখেমুখে। ২০০৩ থেকে ২০১০। দীর্ঘ ৭ বছরের সম্পর্ক ছিল হ্যারি-চেলসির। কিন্তু সেই সম্পর্কের সবকুকুই আজ অতীত। খ্রিস্টিয় রীতিনীতির খুঁটিনাটি মেনে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ছোট বউ হয়েছেন মেগান মার্কেল। উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে বসেছিল বিয়ের আসর। প্রাক্তন প্রেমিকের বিয়েতে যোগ দিতে বেশ হাসিমুখেই উপস্থিত হন চেলসি ডেভি। যদিও বিয়েতে উপস্থিত অভ্যাগতদের দাবি, চ্যাপেলের ভিতর ঢোকার পরই কিছুটা ‘চুপচাপ’ হয়ে যান চেলসি। মুহূর্তের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও পড়ে চেলসির সেই ছবি। নেটিজেনরা দাবি করেছেন, প্রায় কাঁদো কাঁদো মুখ হয়ে গিয়েছিল চেলসির। হয়তো হ্যারির সঙ্গে কাটানো পুরনো দিনগুলির কথা ভাবছিলেন চেলসি। তবে চেলসি একা নন, হ্যারির বিয়েতে যোগ দিতে দেখা যায় আরেক প্রাক্তন প্রেমিকা অভিনেত্রী ক্রেসিডা বোনাসকে।
অনুষ্ঠানে ছিলেন না মেগানের বাবা
চ্যাপেলের করিডর ধরে হাঁটার কথা ছিল মার্কেলের বাবা টমাস মার্কলের। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুবরাজ চার্লস এবং ডাচেস অব কর্নওয়েল ক্যামেলা, প্রিন্স হ্যারির বড় ভাই উইলিয়াম এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হওয়ারও কথা ছিল তার। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি। স¤প্রতি পাপারাজিদের সামনে পোজ দিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারকে চটিয়েছেন টমাস। যদিও তিনি প্রথমে বলেছিলেন কাউকে ছবি তুলতে দেননি। কিন্তু পোজ দেয়ার কথা পরে তিনি স্বীকার করেন। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরই টমাসের পরিবারের পক্ষ থেকে অসুস্থতার কথা জানানো হয়।
বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্যে ৬০০ অতিথির কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠায় রাজপরিবার। নব দম্পত্তিকে দেয়া রিসেপশনে ছিলেন আরো ২০০ অতিথি। উইন্ডসর ক্যাসলের মাঠে ছিলেন আরও ১২০০ সাধারণ অতিথি। প্রিন্স হ্যারি এবং মেগানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দুইশ’ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে অতিথিদের প‚র্ণ তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। বিয়েতে আমন্ত্রণ পাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হ্যারির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এবার ওবামার উপস্থিতির কথা বলা হলেও পরে জানানো হয় ওবামা বিয়েতে অংশ নিচ্ছেন না। বিয়েতে চলচ্চিত্র জগতের তারকা এবং ডেভিড বেকহ্যাম ও তার স্ত্রীসহ খেলোয়াড়রা উপস্থিত ছিলেন।
বিয়েতে খরচ কত
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বিয়ের খরচ ১ মিলিয়ন পাউন্ড হয়ে যেতে পারে; বাংলাদেশি টাকায় যা ১২ কোটি টাকার কাছাকাছি। কেনসিংটন প্যালেস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিয়ের একেবারে ম‚ল খরচগুলোর ব্যয় রাজপরিবার বহন করবে, যেমন: গির্জার খরচ, মিউজিক, ফুল, সাজসজ্জা এবং অভ্যর্থনা। প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের বিয়ের সময় নিরাপত্তা খাতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৬.৪ মিলিয়ন পাউন্ড; বাংলাদেশি টাকায় যা ৭৪ কোটি টাকার কাছাকাছি।
হ্যারি-মেগানের আদলে কেক
রাজকীয় এই বিয়ের নবদম্পতিকে সম্মান জানাতে তাদের সমান আকারের বিশেষ একটি কেক তৈরি করেন লারা মেশন। ইতোমধ্যে লারা তার ফেসবুক পেজে কেকের একটি ছবিও পোস্ট করেছেন। প্রিন্স হ্যারি ও মার্কেলের সম্পর্কের কথাটি প্রকাশের পর তাদের যে ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল তার আদলেই তৈরি হয়েছে কেকটি।
উল্লেখ্য, পরস্পরের বন্ধুদের মাধ্যমে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে মার্কিন অভিনেত্রী মার্কেলের সঙ্গে ব্রিটিশ সিংহাসনের পঞ্চম উত্তরাধিকারী প্রিন্স হ্যারি পরিচয় হয়। মার্কিন টিভি সিরিজ ফ্রিঞ্জ’ ও ‘স্যুইটস’ অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পাওয়া মেগানের আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। গত বছরের নভেম্বরের শুরুতেই তাদের মধ্যে বাগদান সম্পন্ন হয়। সূত্র : বিবিসি, জি নিউজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রিটিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ