Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মামলা জট ডেথ রেফারেন্স শাখায় বিচারের অপেক্ষায় ৬৪১ আসামি

| প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


০ বিগত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা
০ বিচারপ্রার্থীদের বাড়ছে ভোগান্তি
০ বেঞ্চ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা
মালেক মল্লিক : মামলার জট বাড়ছে সুপ্রিম কোর্টের (মৃত্যু অনুমোদন সংক্রান্ত) ডেথ রেফারেন্স শাখায়। বিচার দ্রæত নিস্পতি না হওয়ার মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বছরের পর বছর কনডেম সেলে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন নিন্ম আদালতে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ৬৪১ জন আসামী। যা কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিচারের জন্য অপেক্ষায়। এতে করে বাড়ছে বিচারপ্রার্থীর ভোগান্তি; একইসঙ্গে দোষী ব্যক্তির শাস্তিও বিলম্বিত হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই ১১ থেকে ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে আটক রয়েছেন। ২০১৬ সালে ছিল ৫৮০টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ৪৫টি। ২০১৭ সালে মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০৬টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ৬৫টি। প্রতি বছর মামলার নিষ্পত্তির হারের তুলনায় ডেথ রেফারেন্স আসছে বেশি। পেপার বুক তৈরিতে দীর্ঘসূত্রতা, পর্যাপ্ত সংখ্যক বেঞ্চের অভাবে বিলম্বে শুনানি হওয়া, আইনজীবীদের উদাসীনতাই এর প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেছেন ফৌজদারী মামলার আইনজ্ঞরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেযারম্যান ফৌজাদারি মামলার বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি বিলম্ব হওয়ার প্রধান কারণ সময়মত পেপার বুক তৈরি না হওয়া। এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কেই উদ্যোগী হতে হবে। একাধিক বেঞ্চের প্রয়োজন উল্লেখ করে এই আইনজীবী আরো বলেন, বিলম্ব হওয়ার কারনে ফাঁসি আসামীকে দীর্ঘদিন কনডেম সেলে থাকতে হয়। আবার আপিল মঞ্জুর হলে আপিলের নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর সময় লাগে। এ ধরনের বিলম্বকে দূর্ভাগ্যজনক বলে দাবি করেন তিনি।
জাতীয় আইন সংস্থার প্যানেল আইনজীবী খবির উদ্দিন ভুইঁয়া ইনকিলাবকে বলেন, একদিকে দিকে একটি মাত্র বেঞ্চ এসব মামলা শুনানি জন্য অপরদিকে সপ্তাহের একদিন শুনানি হয়। আমি মনে করি ডেথ রেফারেন্স মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া অন্যতম একটি অন্তরায় এটি। তিনি আরো বলেন, সাবেক প্রধান বিচাপতি এস কে সিনহার সময়ের এসব মামলা নিষ্পত্তিতে কিছুটা গতিশীল ছিল। এখন ফের ধীরগতি।
সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের ডেথ রেফারেন্স শাখার সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ উপরে বিচার প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুদন্ডপ্রাাপ্ত আসামির দন্ড কার্যকর করা হয়েছে। তবে এখনও অনেক বিচার প্রার্থীরা বিচারের অপেক্ষায় কারাগারের কনডেম সেলে দুঃসহ দিন যাপন করছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে ডেথ রেফারেন্স মামলা হাইকোর্টে আসে ৭৬টি, ২০১১ সালে ৬৭, ২০১২ সালে ৬০, ২০১৩ সালে ৬৩, ২০১৪ সালে ৯২, ২০১৫ সালে ১১৪, ২০১৬ সালে ১৬১ এবং ২০১৭ সালে ১৭১টি। ২০১১ সালে এ মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০৯টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ৭৪টি। বছর শেষে বিচারাধীন থাকে ৫৩৫টি। ২০১২ সালে এ মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯৫। ওই বছর নিষ্পত্তি হয় ১৪৫টি। বিচারাধীন থাকে ৪৫০টি। ২০১৩ সালে এ মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১৩টি। নিষ্পত্তি হয় ১১১টি। বিচারাধীন থাকে ৪৬টি। ২০১৪ সালে এ মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯৮টি। ২০১৫ সালে এ মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭৭টি। নিষ্পত্তি হয় ৫৮টি। বছর শেষে বিচারাধীন থাকে ৪১৯টি। ২০১৬ সালে এ মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮০টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ৪৫টি। ২০১৭ সালে এ মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০৬টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ৬৫টি। বিচারাধীন থাকে ৬৪১টি।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি বছর মামলা দায়ের সংখ্যা বাড়ছে, কমছে নিম্পত্তির হার। এদের মধ্যে অনেকেই ১১ থেকে ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে কনডেম সেলে আটক রয়েছেন। বিগত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বিচারাধীন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচারিক আদালত থেকে ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর শত শত আসামিকে বছরের পর বছর কারা প্রকোষ্ঠের কনডেমড সেলে বন্দী থাকতে হচ্ছে। এতে করে অনেক আসামি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন বলেও জানা যায়।
২০০১ সালে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে। এছাড়া, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য রয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, হাইকোর্টে বিচারকের সংকট রয়েছে। এছাড়া অনেক বিচারক ডেথ রেফারেন্সের মামলা শুনতে চান না বলে জট সৃষ্টি হয়। তাদের মতে, মামলা নিস্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দোষী ব্যক্তির শাস্তি বিলম্বিত হচ্ছে; আবার অনেককে বিনা বিচারে কারাগারে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘদিন। বিচারপ্রার্থীদের বাড়ছে ভোগান্তি।
ডেথ রেফারেন্স শাখায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ফাঁসিরদন্ড প্রাপ্ত ১২ থেকে ১৫ বছর পুরান অনেক মামলা রয়েছে। চলতি বছর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের আপিলের মামলাগুলো অনেকাংশ কমছে। আশা করি আগামীতে আরো কমবে। আমরা মাত্র ফাইলগুলো সংরক্ষন করি। নিয়ম অনুযারী নিন্ম আদালতের ফাঁিসদন্ড প্রাপ্ত আসামীর রায়ের যাবতীয় নথিপত্র আসে।
সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ২০১১ সালে রেকর্ড হওয়া ডেথ রেফারেন্স শুনানি হলেও আলোচিত অনেক মামলার ডেথ রেফারেন্সই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩১ ধারার (২) উপধারা অনুযায়ী জেলা ও দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকরা আইন অনুযায়ী মামলা নিষ্পত্তি করে যে কোনো ধরনের দন্ড দিতে পারেন। তবে শুধু ফাঁসর দন্ড দিলে তা হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর করতে হয় বিচারিক আদালতে রায় দেওয়ার সাত দিনের মধ্যে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় চলে আসে। এটিই মূলত ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পরবর্তীতে ডেথ রেফারেন্স শাখা থেকে শুনানি জন্য পাঠানো হয়। হাইকোর্টে শুনানির পর রায় হলে সংক্ষুব্ধরা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। এর পর রিভিউ পর্যন্ত সুযোগ থাকে। আর রিভিউ খারিজ হলে এবং প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণ ভিক্ষা না চাইলে বা তিনি ক্ষমা না করলে কার্যকর করা হয় মৃত্যুদÐ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ