Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২ যুগে মসলার উৎপাদন বেড়ে ২৪ লাখ টনে উন্নীত

বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রে ৩৪টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


মহসিন রাজু : বগুড়ায় অবস্থিত জাতীয় প্রতিষ্ঠান মসলা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর এই কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে ১৫টি মসলার ৩৪টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। মসলার এই উচ্চ ফলনশীল জাত এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা চাষাবাদও করছে। মসলার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরো ৮৪টি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। অন্যদিকে পুনরায় নতুন জাত অবমুক্তির জন্য বিজ্ঞানীদের নিবিড় তত্ত¡াবধানে আরো ১২টি মসলা অগ্রবর্তী লাইন রয়েছে। মসলা গবেষণা কেন্দ্রে বর্তমানে বিভিন্ন মসলা ফসলের ২শ’ ৪২টি দেশী এবং ১৫টি বিদেশী জার্মপ্লাজম সংগৃহীত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। দেশের মসলা জাতীয় খাদ্যপণ্যের চাহিদা পূরণ ও বিদেশ থেকে মসলা আমদানি কমানোর লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নে এবং ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের অদূরে ৭০ একর জমির উপর মসলা গবেষণা কেন্দ্রটি স্থাপন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল মসলা ফসলের জাতগুলো হচ্ছে বারি পেঁয়াজ-১ শীতকালীন জাত, ফলন হেক্টর প্রতি ১২-১৬ টন। বারি পেঁয়াজ-২ গ্রীস্মকালীন (সারা বছর চাষ করা যায়) ফলন হেক্টর প্রতি ১৮-২২ টন। বারি পেঁয়াজ-৩ গ্রীস্মকালীন (সারা বছর চাষ করা য়ায়) ফলন হেক্টর প্রতি ১৭-২০ টন। বারি পেঁয়াজ-৪ শীতকালীন জাত ফলন হেক্টর প্রতি ১৭-২২ টন। বারি পেঁয়াজ-৫ (খরিপ-১, ৮-১০ টন), (খরিপ-২, ২২-২৫ টন)। বারি রসুন-১ ফলন হেক্টর প্রতি ৬-৭ টন। বারি রসুন-২ ফলন হেক্টর প্রতি ৮-৯ টন্। বারি রসুন-৩ হেক্টর প্রতি ১০-১১ টন। বারি রসুন-৪ হেক্টর প্রতি ৮- ৮ দশমিক ৭৮ টন। বারি মরিচ-১ হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন (কাঁচা)। বারি মরিচ -২, গ্রীস্মকালীন জাত হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ টন (কাঁচ)। বারি মরিচ-৩ শীতকালীন জাত হেক্টর প্রতি ৮-১০ টন। বারি আদা -১ ফলন হেক্টর প্রতি ৩০-৩২ টন। বারি আদা-২,ফলন হেক্টর প্রতি ৩৭ দশমিক ৯৯ টন(কাঁচা)। বারি আদা -৩, ফলন হেক্টর প্রতি ২৯ দশমিক ৫ টন। বারি হলুদ-১, ফলন হেক্টর প্রতি ১৭-১৮টন (কাঁচা)। বারি হলুদ-২, হেক্টর প্রতি ২৫-২৮টন (কাঁচা)। বারি হলুদ-৩, হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ টন (কাঁচা)। বারি হলুদ-৪, হেক্টর প্রতি ২৮-৩০টন(কাঁচা)। বারি হলুদ-৫, হেক্টর প্রতি ১৮-২০টন(কাঁচা)। বারি ধনিয়া-১, হেক্টর প্রতি ফলন ১ দশমিক ৫০-২টন। বারি ধনিয়া-২, হেক্টর প্রতি ১দশমিক ৭৭-২ দশমিক ৩০টন। বারি কালোজিরা-১,ফলন হেক্টর প্রতি শূন্য দশমিক ৮০-১ টন। বারি মেথি-১, ফলন হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ২০-১ দশমিক ৫০টন। বারি মেথি-২, হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৫০- ২টন। বারি মৌরী-১, ফলন হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৫৩-২ দশমিক ৫ টন। বারি মৌরী-২, হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৫৬- ১ দশমিক ৭৫ টন। বারি পাতা পেঁয়াজ- ১, ফলন হেক্টর প্রতি ৮-১০ টন শীতকাল বাদে সার বছর চাষযোগ্য। বারি বিলাতী ধনিয়া-১, ফলন হেক্টর প্রতি ২৭-৪৭ টন (কাঁচা) যা ’ শীতকাল বাদে সারা বছর চাষযোগ্য। বারি আলুবোখারা-১,ফলন গাছপ্রতি ১০-৪৮ কেজি(৫-৬ বছর গাছে)। বারি গোলমরিচ-১, ফলন গাছপ্রতি ৪-৫ কেজি। বারি পান-১, ফলন হেক্টর প্রতি ৩৫-৩৬ লাখ পাতা, সারা বছর চাষযোগ্য। বারি পান-২, হেক্টর প্রতি ৩৮-৪০ লাখ পাতা। মসলা গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭০১ হেক্টর জমিতে মসলা জাতীয় ফসল যেমন মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া বীজসহ অন্যান্য মসলা উৎপন্ন হচ্ছে। মসলা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে দেশে মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন ছিল ৩ দশমিক ১৩ লাখ টন। প্রতিষ্ঠার পর গত ২ যুগে গবেষণা কেন্দ্রে উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন এবং কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের ফলে বর্তমানে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ দশমিক ৮৮ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তির ব্যবহার, সরকারের সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা ও চাষীদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের কারণে। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে জানান, গবেষণা কার্যক্রমের জন্য বিদেশী জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা আমাদের জন্য বড় সমস্যা। কারণ মসলা উৎপাদনকারী দেশগুলো কোন লিঁয়াজো করতে বা তথ্য আদান-প্রদান করতে আগ্রহী নয়। তাছাড়া কর্মরত বিজ্ঞানীদের বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ না থাকায় অভিজ্ঞতার অভাবেও গবেষণা কার্যক্রমে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রনালয় সজাগ হলে মসলা উৎপাদন ক্ষেত্রে স্বয়ং সম্পুর্ণতা অর্জন করা হবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ