Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘তোরা বাঁচবি না’

হত্যার হুমকির পরও কোটা আন্দোলনকারীদের জিডি নেয়নি পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 

‘তোদের মতো পোলাপানকে খেয়ে দিতে দুই সেকেন্ডও লাগে না। তোগোরে গুলি কইরা মারি নাই শুধু কিছু সিনিয়রের নিষেধ ছিল। তবে তোরা বাঁচবি না। কিছুদিন পর প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। দেখি তোদের কোন বাপ ঠেকায়। কুকুরের মতো রাস্তায় গুলি করে মারবো’ এভাবে ছাত্রলীগ নেতারা গভীর রাতে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া নুরুল হক নূর ও রাশেদ খানকে হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে গতকাল অভিযোগ করেছেন সংগঠনের যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল হক নূর।
ঘটনা ঘটেছে ঢাবির মোহসিন হলে। ‘হত্যার হুমকি’র এই অভিযোগ নিয়ে শাহবাগ থানায় নিরাপত্তার চেয়ে মামলা করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী নেতাদের হত্যা হুমকির প্রতিবাদে গতকাল মিছিল করেছে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা। কোটা বাতিলের পক্ষ্যের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রস্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের এসময় বিভিন্ন ধরনের ¯েøাগান দিতে দেখা যায়।
এগুলো হল- ‘হুমকি দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’, ‘গুলি দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’, নূর ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘কুত্তা দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’। হত্যার হুমকি দাতাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা এবং কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারীর দাবি জানানো হয়। মূলত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল হক নূর ও রাশেদ খানকে ‘হত্যার হুমকি’ দেয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। এই ‘হত্যার হুমকি’ দেয়ার প্রতিবাদে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। গত মঙ্গলবার (১৫ মে) দিনগত রাতে ঢাবির মুহসীন হলের নুরুল হক নূরের ১১৯ নম্বর কক্ষে পিস্তল নিয়ে ‘গুলি করে হত্যার হুমকি’ দেয়ার অভিযোগ তোলা হয়। এ অভিযোগ ছাত্রলীগের সদ্য সমাপ্ত জাতীয় কাউন্সিলের আগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি, মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম হাসান লিমন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির বিরুদ্ধে। তবে ‘হত্যার হুমকি’র অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইমতিয়াজ বাপ্পি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ফাহিমের ফেসবুক আইডিতে রিপোর্ট করার বিষয়ে জানতে গিয়েছিলাম।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল হক নূর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তাকে ‘হত্যার হুমকি’ দেয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, ঘটনার সময় কেন্দ্রীয় কমিটির (কোটা সংস্কার) যুগ্ম আহŸায়ক রাশেদ খান আমার রুমে ছিল। এর মধ্যে চারুকলা অনুষদের ছাত্রলীগের সেক্রেটারি লিমন ফোন দিয়ে থ্রেট দেয় এই বলে যে, তোকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। পিটিয়ে নামিয়ে দেওয়া হবে। আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি ওই ফোন নিয়ে বলেন, ‘ছাত্রদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকুতে মেরেছি। তোদের মতো পোলাপানকে খেয়ে দিতে দুই সেকেন্ডও লাগে না। তোগোরে গুলি কইরা মারি নাই শুধু কিছু সিনিয়রের নিষেধ ছিল। তবে তোরা বাঁচবি না। কিছুদিন পর প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। দেখি তোদের কোন বাপ ঠেকায়।’
নুরুল হক নূর আরও বলেন, এ ঘটনার ১০ মিনিট পরে ১১৯ নম্বর কক্ষে পিস্তল নিয়ে এসে বলে, ‘তোরা মা-বাবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে নে। তোরা বাঁচবি না। তোদের রাস্তায় কুকুরের মতো গুলি করে মারব’। আমাকে (নুরুল হক নুর) মারতে তেড়ে আসে। তারা আমার মোবাইলও নিয়ে যায়। যাতে আমি রেকর্ড করতে না পারি। আমরা এখন জীবননাশের হুমকির মুখে আছি। তিনি বলেন, তারা আমাকে মারার জন্য এসেছিল। আমাকে তারা গুলি করে ও কুপিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আহŸায়ক হাসান আল মামুন, আশিকসহ কয়েকজন বাঁচিয়েছেন। আমি জীবন নিয়ে এখন শঙ্কাবোধ করছি। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলার ছাত্রসমাজকে নিয়ে খেলবেন না। আগুন পুড়ে ছাই হয়ে যাবেন। তবে এ বিষয়ে ইমতিয়াজ বাপ্পী বলেন, এমন কিছুই হয়নি। বরং আমরা যদি বলি তারা আমাদের হুমকি দিয়েছে? ও আমার পাশের রুমে থাকে। আমার এক ছোটো ভাই এর আইডি হ্যাক করে সে বিভিন্ন গ্রæপে দেয়। পরে তার সাথে এই বিষয়ে বাকবিতন্ডা হয়। আমার বাবা শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। আমি তাকে বলেছি আন্দোলন করতেছস ঠিক আছে। অন্য কোনো ঝামেলায় জড়াবি না। মেহেদী হাসান সানী বলেন, তাকে কিছু করা হয়নি। সে ইস্যু বানাচ্ছে। সাংবাদিকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়মে জানতে হবে। পরে জানাবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, হত্যার হুমকিতে জিডি করতে গেলে শাহবাগ থানা পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা চার যুগ্ম আহŸায়কের নিরাপত্তা চেয়ে ৪টি ও সব আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা চেয়ে ১টি জিডি করতে গতকাল বুধবার দুপুরে শাহবাগ থানায় যান। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান এ বিষয়ে বলেন, ‘তাদের (আন্দোলনকারী) অভিযোগ রাখা হয়েছে। এটি শুধু থানার বিষয় নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’ ##

 



 

Show all comments
  • তামান্না ১৭ মে, ২০১৮, ৫:৪৭ এএম says : 0
    যারা হুমকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Mainul Hasan Raju ১৭ মে, ২০১৮, ১:৩৭ পিএম says : 0
    অসত্যের কাছে কভূ নত নাহি শির, ভয়ে কাঁপে কাপূরুষ লড়ে যায় বীর।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbub Hossain Baten ১৭ মে, ২০১৮, ১:৩৮ পিএম says : 0
    স্বাধীন বাংলার পুলিসের এই বানি কাম্য নয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ