Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বছরে শস্য নষ্ট হচ্ছে ৭৭ লাখ টন বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা

সেমিনারে বক্তারা

| প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে চাল, গম, ভুট্টা, পেয়াঁজ, আলু, সব ধরনের ফল ও সবজির উৎপাদন ছিলো প্রায় ৬ কোটি টন। এসব খাদ্য শস্য উৎপাদক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌছাতেই নষ্ট হয়েছে প্রায় ৭৭ লখ ৫০ হাজার টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রিশ্চিয়ান-এইডের সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘খাদ্যের অপচয় রোধে রাষ্ট্রের ভূমিকা ও খাদ্য অধিকার’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে এসব তথ্য উঠে আসে। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেেেদর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের (বিজেএএফ) সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সিনিয়র রিপোর্টার সাহানোয়ার সাইদ শাহীন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, গবেষনাটি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে উৎপাদিত শস্যের পোস্ট হারভেস্ট লস ও আর্থিক মূল্য বের করা হয়েছে। খাদ্য শস্য, সবজি ও ফলমূলের ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে উৎপাদক থেকে শুরু করে মধ্যস্বত্বভোগী, সংগ্রহকারী, মজুদদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীর হাতবদলে। গড়ে উৎপাদিত শস্যের প্রায় ১৩ শতাংশই নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতি হওয়া এসব শস্যের আর্থিক মূল্য মোট বাজেটের প্রায় ১০ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় ৩০ শতাংশ। নষ্ট হওয়া খাদ্য শসের মধ্যে চাল ও গমের পরিমান প্রায় ৪৫ লাখ টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। আলুর পরিমান প্রায় ১৫ লাখ টন যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। ফল নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৮ লাখ টন যার বাজারমূল্য প্রায় ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সবজি নষ্ট হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টন যার বাজারমূল্য ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এছাড়া পেয়াঁজ ও ভুট্টা নষ্ট হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ টন। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার শস্য ফসলোত্তরে নষ্ট হচ্ছে। দেশের এ অফচয় রোধ করা গেলে খাদ্য শস্য আমদানি শূণের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান তিনি।
খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, খাদ্য শস্যের অপচয় দেশের প্রবৃদ্ধিকে খেয়ে ফেলছে। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষের অধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তাকে বাধাগ্রস্থ করছি। খাদ্যশস্যের এ ধরনের অপচয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকি, তেমনি খাদ্য অধিকারকেও বঞ্চিত করছে। সার্বিকভাবে পুষ্টি নিরাপত্তাকে করছে বাধাগ্রস্ত। আর দেশের অর্থ ও সম্পদের অপচয়ও হচ্ছে। আর দেশের দরিদ্রতা থেকে মানুষকে উন্নতির যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটিও বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে খাদ্যের অপচয় রোধে রাষ্ট্রের উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। শস্য সংরক্ষণ ও পরিবহেনর ক্ষেত্রে ছোট ছোট প্রযুক্তি দ্রæত কুষকের কাছে পৌছাতে হবে। আর কৃষকের ভর্তূকি বাড়াতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের সক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু ব্যবস্থাপনা, খাদ্যশস্যের সহজলভ্যতা এবং নীতি ও কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে অনেক সীমাবদ্ধতা। খাদ্যের অপচয়ের কারনে খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় হুমকি যেমন হচ্ছে তেমনি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। দরিদ্রতা কমিয়ে আনা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাই খাদ্য অধিকার আইন প্রনয়ণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরী। পাশাপাশি সরকারের ভর্তূকি কার্যক্রমে প্রযুক্তি কেনায় আরো জোরদার করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) সাবেক মহাপরিচালক ও হরটেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মো. মনজুরুল হান্নান বলেন, প্রযুক্তির অভাব, শস্যের শুকানোর পদ্ধতিগত ক্রুটি, বিপণন পর্যায়ে দূর্বলতা, সীমিত গুদামজাতকরন, দূর্বল পরিবহনজাতকরন এবং প্যাকেজিং এর অভাবেই শস্যের অপচয় হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষেত্রে অপচয়ের পাশাপাশি খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে এ অপচয় রোধ করতে পারলে আমরা ৫ শতাংশ খাদ্য অপচয় রোধ করতে পারব। সেটি করতে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ জরুরী তেমনি সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যান্ত্রিকীকরন করন দ্রæত বেড়ে করতে হবে। দেশের নাজুক পুষ্টি পরিস্থিতিতে খাদ্য অপচয় রোধের কোন বিকল্প নেই জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনষ্টিটিউটের প্রফেসর ড. খালেদা ইসলাম বলেন, খাদ্য অপচয় রোধ করতে পারলে আমরা অধিক সংখ্যক লোকের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব পাশাপাশি পুষ্টির যোগান দিতেও সক্ষম হব।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ