Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তালিকায় নেই ঝুঁকিপূর্ণ জেলা

বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানতে বসানো হচ্ছে সেন্সর

| প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


পঞ্চায়েত হাবিব : বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর লক্ষ্যে দেশবাসীকে আগাম সতর্কবার্তা দিতে দেশের ৮টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসাচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিটেকটিভ সেন্সরের যন্ত্রপাতি কেনার ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। এমন যন্ত্র বসাচ্ছে, যার মাধ্যমে বজ্রপাতের পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এদিকে যেসব জেলায় বজ্রপাত বেশি হচ্ছে সেই জেলা গুলোতে এ প্রকল্প নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, এই প্রযুক্তি আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে সুফল বয়ে এনেছে। তবে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে যন্ত্রটি কতটা ভূমিকা রাখবে, তা এর কার্যকারিতা না দেখে বলা সম্ভব নয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল ইনকিলাবকে বলেন, বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর লক্ষ্যে দেশের ৮টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিটেকটিভ সেন্সরের যন্ত্রপাতি ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হচ্ছে। আমরা আগামীতে সারাদেশে এ মেশিন বসানোর জন্য প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। সচিব বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো হবে। তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বজ্রপাতের পূর্বাভাস তৈরি করা হবে। বজ্রপাতে কারও মৃত্যু হলে নিহতের পরিবারকে মন্ত্রণালয় থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া আহতরা পাবেন ১০ হাজার টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (যুগ্ন সচিব), পরিচালক(পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এম. খালিদ মাহমুদ বলেন, বজ্রপাত এখন দেশের নতুন দুর্যোগ। সরকার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বজ্রপাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দেশের আটটি স্থানে সেন্সর স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেন্সরগুলোতে ধারণ করা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বজ্রপাতের পূর্বাভাস তৈরি করা হবে। এ ছাড়া তালগাছ বজ্রপাত নিরোধক হওয়ায় সারা দেশে এই গাছের ১০ লাখ চারা রোপণ করা হয়েছে আরো ৩০ লাখ তাল গাছ রোপণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭ কোটি টাকা। এর আওতায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, নওগাঁর বদলগাছি, খুলনার কয়রা, পটুয়াখালীর পুরোনো আবহাওয়া কার্যালয় এবং চট্টগ্রামে সেন্সর বসানো হচ্ছে। এসব যন্ত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হচ্ছে। সেগুলো আওতাভুক্ত এলাকার বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানোর সমস্ত তথ্য ধারণ করে রাখবে। সেগুলো পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করে বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ভূমিকম্পের মতো বজ্রপাতেরও পূর্বাভাস দেওয়ার সক্ষমতা তাদের নেই। এত দিন আকাশে মেঘের আনাগোনা থেকে কেবল বজ্রঝড়ের আভাস দেওয়া হতো। কিন্তু বজ্রঝড় থেকে কখন বজ্রপাত হবে তা জানা কঠিন। ফলে প্রতিবছর দেশে বজ্রপাতে বহু প্রাণহানি হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্তবজ্রপাতের ঘটনায় ১৮০০›র বেশি মানুষ মারা গেছে। এদিকে যেসব জেলায় বজ্রপাত বেশি হচ্ছে সেই জেলা গুলোতে এ প্রকল্প নেয়া হয়নি, সে জেলা গুলো হচ্ছে. ঢাকা. নীলফামারী, লালমনির হাট, কুড়িগ্রাম. রংপুর .গাইবান্ধা, বগুড়া, জয়পুরহাট, নাটোর,সুনামগঞ্জ. নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ,কক্সবাজার,চাঁদপুর, বরগুনা, বাঘেরহাট, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলা এ প্রকল্পে নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। তবে এ কয়েকদিনে এসব জেলায় বজ্রপাতে বেশি মারা গেছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ের আবহাওয়াা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম. এ ফারুক বলেন, এ গবেষণার জন্য ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ আট বছরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ২০১৫ সালে বজ্রপাতে মারা যায় ২১৯ জন এবং চলতি বছরে এ পযন্ত সাড়ে ৩০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। মাঝে ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল আরও বেশি; ৩৮০ জন। ২০১৬ সালেই বজ্রপাতকে নতুন দুর্যোগ হিসেবে আওতাভুক্ত করে সরকার। এরপরই কেবল বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নামসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহে রাখা হচ্ছে। দুর্যোগ নিয়ে কাজ করে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য- দেয়া যায়, ২০১১ সালের পর থেকে দেশে বজ্রপাতের আধিক্য বাড়তে শুরু করে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে প্রাণহানির সংখ্যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্যোগ ফোরামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়. ২০১৩ সালে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৮৫ জন। ২০১২ সালে মারা যায় ২০১ জন। ২০১১ সালে তা ছিল ছিল আরও কম (১৭৯ জন)। অর্থাৎ প্রায় প্রতিবছরই বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। আগে সাধারণত এপ্রিল-জুলাই মাসে বজ্রপাত হতো। গত পাঁচ বছরে এই অবস্থা বদলে গেছে। বিশেষ করে গত দু-তিন বছর জানুয়ারি মাসেও বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এমনটি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মজিদুল ইসলাম, আমরা যে ডিভাইস বসাচ্ছি, তা সার্বক্ষণিক কার্যকর থাকবে। তা সক্রিয় করার পর আমরা আওতাভুক্ত এলাকায় বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানোর মাত্রা আগাম জেনে যাব। এই সেন্সরের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ১০-১৫ মিনিট আগে লোকজনকে সতর্ক করা সম্ভব হবে। তবে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমে আসবে। তিনি বলেন, ডিভাইসগুলো এরই মধ্যে স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী জুন পর্যন্ত আমাদের কার্যসীমা নির্ধারিত আছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ